উইম্বলডনে মার্কিন পুরুষদের দীর্ঘ খরা: ২৫ বছরের অপেক্ষার অবসান হবে কি?
টেনিস বিশ্বে একসময় উইম্বলডন ছিল মার্কিন পুরুষ খেলোয়াড়দের একচ্ছত্র আধিপত্যের কেন্দ্র। জিমি কনর্স, জন ম্যাকেনরোর মতো কিংবদন্তীরা কোর্টে নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করেছেন। এরপর এসেছিলেন পিট সাম্প্রাস, যিনি নব্বইয়ের দশকে উইম্বলডনে একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার করেন।
২০০০ সালে সাম্প্রাসের শেষ শিরোপা জয়ের পর অনেকেই ভেবেছিলেন, খুব বেশি দিন লাগবে না, যখন আরেকজন মার্কিন খেলোয়াড় এই কৃতিত্ব অর্জন করবেন। কিন্তু বাস্তবে, এরপর কেটে গেছে ২৫টি বছর, আর কোনো মার্কিন পুরুষ খেলোয়াড়ের হাতে ওঠেনি উইম্বলডনের ট্রফি।
এই দীর্ঘ সময়ে, রজার ফেদেরার, রাফায়েল নাদাল, নোভাক জোকোভিচ এবং অ্যান্ডি মারে-র মতো কিংবদন্তি খেলোয়াড়রা প্রায় একচেটিয়াভাবে এই প্রতিযোগিতায় নিজেদের আধিপত্য বজায় রেখেছেন। ২০০৩ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত তারা সবাই মিলে প্রায় সব শিরোপা জিতেছেন।
২০০৯ সালে অ্যান্ডি রডিক ফাইনাল পর্যন্ত পৌঁছেছিলেন, কিন্তু ফেদেরারের কাছে হেরে যান। এরপর জন ইসনার ২০১৮ সালে সেমিফাইনালে উঠলেও শেষ পর্যন্ত আর টাইটেল জেতা হয়নি।
টেনিসের ইতিহাসে এত প্রভাবশালী একটি দেশের খেলোয়াড়দের এমন পারফর্ম্যান্স নিঃসন্দেহে হতাশাজনক। এই বিষয়ে ক্রীড়া সাংবাদিক ম্যাট ফিউটারম্যানের মতে, গত দুই দশকে শীর্ষস্থানীয় খেলোয়াড়দের অসাধারণ দক্ষতার কারণে মার্কিন খেলোয়াড়দের এই ধরনের ফল করাটা খুব একটা আশ্চর্যের বিষয় নয়।
তার মতে, “এই মুহূর্তে গ্র্যান্ড স্ল্যাম জেতাটা অনেকটা ‘ইউনিকর্ন’-এর মতো বিরল ঘটনা।
বর্তমানে, পুরুষ টেনিসের দৃশ্যপট অনেক বদলে গেছে। মারে, ফেদেরার এবং নাদাল অবসর নিয়েছেন এবং জোকোভিচের পারফরম্যান্সেও বয়সের ছাপ স্পষ্ট। তাদের অনুপস্থিতিতে ইতালির ইয়ানিক সিনার এবং স্পেনের কার্লোস আলকারাজ তরুণ প্রতিযোগী হিসেবে নিজেদের প্রমাণ করেছেন।
অনেকেই মনে করছেন, ভবিষ্যতে এই দুইজনের মধ্যে দারুণ প্রতিদ্বন্দ্বিতা দেখা যাবে।
বর্তমান উইম্বলডনে শীর্ষস্থানীয় মার্কিন খেলোয়াড়দের মধ্যে রয়েছেন টেইলার ফ্রিজ (বিশ্ব র্যাঙ্কিং ৫), বেন শেল্টন (বিশ্ব র্যাঙ্কিং ১০)। ফ্রান্সেস টিয়াফো এবং টমি পলও শীর্ষ ১০ এর কাছাকাছি রয়েছেন।
এদের কেউই এখনো কোনো গ্র্যান্ড স্ল্যাম জিততে পারেননি। এমনকি ২০০৩ সালে অ্যান্ডি রডিকের ইউএস ওপেন জয়ের পর, কোনো মার্কিন পুরুষ খেলোয়াড় কোনো গ্র্যান্ড স্ল্যামের ফাইনালে পর্যন্ত উঠতে পারেননি।
ঘাসের কোর্টে খেলা হওয়ায় উইম্বলডন অনেক খেলোয়াড়ের জন্য কঠিন চ্যালেঞ্জ তৈরি করে। উদাহরণস্বরূপ, টিয়াফো এবং শেল্টন এখনো চতুর্থ রাউন্ড পেরোতে পারেননি। তবে, গত বছর কোয়ার্টার ফাইনালে খেলেছিলেন পল।
ফ্রিজও বেশ কয়েকবার ভালো সুযোগ পেয়েও সেমিফাইনালে উঠতে ব্যর্থ হয়েছেন। ফ্রিজ মনে করেন, উইম্বলডন তার গ্র্যান্ড স্ল্যাম জেতার সেরা সুযোগ।
বিশেষজ্ঞদের মতে, বর্তমান পরিস্থিতিতে আলকারাজ পুরুষদের শিরোপার অন্যতম দাবিদার। তার সাম্প্রতিক ফর্ম এবং ঘাসের কোর্টের সাথে মানানসই খেলার ধরনে অনেকেই মুগ্ধ।
ফিউটারম্যানের মতে, “বর্তমান মার্কিন খেলোয়াড়দের মধ্যে কারো এই টুর্নামেন্ট জেতার সম্ভাবনা ২ শতাংশের বেশি নয়। তাদের অসাধারণ পারফর্ম করতে হবে।”
প্রশ্ন হলো, কেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সম্প্রতি উইম্বলডন জেতার মতো খেলোয়াড় তৈরি করতে পারছে না? এর কারণ বহুবিধ। আধুনিক টেনিসে এখন সারা বিশ্ব থেকে খেলোয়াড় আসে, উন্নত প্রশিক্ষণের সুযোগ থাকায় যে কেউ দ্রুত উন্নতি করতে পারে।
আগে যেখানে শুধুমাত্র কিছু দেশের খেলোয়াড়দের আধিপত্য ছিল, এখন সেই পরিস্থিতি নেই। ফিউটারম্যান মনে করেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে টেনিস খেলোয়াড়দের অন্যান্য জনপ্রিয় খেলার সঙ্গেও প্রতিযোগিতা করতে হয়। তার মতে, “এই মুহূর্তে সম্ভবত এমন একজনও আছেন যিনি এনএফএল-এ খেলছেন, কিন্তু টেনিস খেললে গ্র্যান্ড স্ল্যাম জিততে পারতেন।”
২৫ বছর পর, এবারের উইম্বলডনে অংশগ্রহণকারী প্রতিটি মার্কিন খেলোয়াড়ই চাইবেন এই দীর্ঘ অপেক্ষার অবসান ঘটাতে। টিয়াফোর মতে, “আমরা ভালো করছি। শুধু জেতার অপেক্ষা। আমরা সেমিফাইনালে খেলেছি, ফাইনালে খেলেছি। আমাদের শুধু শেষ করতে হবে।”
এবারের টুর্নামেন্টে মার্কিন খেলোয়াড়দের শুরুটা ভালো হয়েছে। টিয়াফো প্রথম রাউন্ডে সরাসরি সেটে জয়লাভ করেছেন। পলও তার প্রথম ম্যাচে জয় পান। ফ্রিজও কঠিন লড়াইয়ের পর পরের রাউন্ডে পৌঁছেছেন।
তথ্য সূত্র: সিএনএন