মোবাইল ফোনের জনক: কেমন বদলে গেল মানুষের জীবন?
একদিন বেতার যোগাযোগের স্বপ্ন দেখেছিলেন ডিক ট্রেসি। সেই স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিলেন মার্টিন কুপার।
চল্লিশের দশকে কমিক স্ট্রিপে ‘ডিক ট্রেসি’র হাতে দেখা গিয়েছিল একটি ‘wrist radio’, যা ছিল অনেকটা হাতের তালুতে ধরা ফোনের মতো। সেই থেকেই মোবাইল ফোনের ধারণা।
আর সেই ধারণা থেকেই ১৯৭৩ সালে মটোরোলা কোম্পানির প্রকৌশলী মার্টিন কুপার তৈরি করেন বিশ্বের প্রথম সেলফোন, যা মানুষের জীবনকে সম্পূর্ণভাবে বদলে দিয়েছে।
ক্যালিফোর্নিয়ার ডেল মার-এ বসবাসকারী ৯৬ বছর বয়সী কুপার এখনও এই পরিবর্তনগুলো পর্যবেক্ষণ করেন। তাঁর মতে প্রযুক্তি বিপ্লব সবে শুরু হয়েছে।
কুপার মনে করেন, খুব শীঘ্রই সেলফোন হয়ে উঠবে একটি ‘thinking computer’, যা মানুষের শরীরকে পর্যবেক্ষণ করবে এবং স্বাস্থ্য বিষয়ক তথ্য সরবরাহ করবে।
তাঁর মতে, এর ফলে মানুষ রোগ শনাক্ত করতে পারবে এবং চিকিৎসা আরও সহজ হবে।
সেলফোনের আবির্ভাবের আগে মানুষজন একে অপরের সাথে যোগাযোগের জন্য ল্যান্ডলাইন ব্যবহার করত।
সময়ের সাথে সাথে, ল্যান্ডলাইনের জায়গা দখল করেছে স্মার্টফোন। বর্তমানে, স্মার্টফোনগুলি কেবল যোগাযোগের মাধ্যম নয়, বরং এটি বিনোদন, শিক্ষা এবং ব্যবসার গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ।
সারা বিশ্বে প্রায় ৪.৬ বিলিয়ন মানুষ মোবাইল ইন্টারনেট ব্যবহার করে, যা বিশ্বের জনসংখ্যার প্রায় ৬০ শতাংশ।
তবে, সবকিছু এত সহজ নয়। বর্তমান ডিজিটাল যুগে, মানুষজন সরাসরি কথা বলার পরিবর্তে টেক্সট মেসেজ বা অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করতে বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে।
অনেক ক্ষেত্রে, সরাসরি ফোন করাকে ‘ব্যক্তিগত পরিসরে হস্তক্ষেপ’ হিসেবেও মনে করা হয়।
মনোবিজ্ঞানীরা মনে করেন, অতিরিক্ত স্ক্রিন টাইমের কারণে শিশুদের সামাজিকীকরণ এবং পড়াশোনার ক্ষেত্রে সমস্যা হচ্ছে।
অনেক দেশে, স্কুলগুলোতে সেলফোন ব্যবহারের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।
মোবাইল ফোনের এই ব্যাপক প্রসারের ফলে সুবিধা যেমন বেড়েছে, তেমনই কিছু ক্ষেত্রে তৈরি হয়েছে বৈষম্য।
উন্নত দেশগুলোতে মানুষ দ্রুত এই প্রযুক্তির সুবিধা গ্রহণ করতে পারলেও, দরিদ্র এবং উন্নয়নশীল দেশগুলোতে এটি এখনো সহজলভ্য নয়।
উদাহরণস্বরূপ, আফ্রিকার অনেক দেশে, যেখানে ইন্টারনেট সংযোগ দুর্বল, সেখানে মোবাইল ফোনই যোগাযোগের প্রধান মাধ্যম।
নাইজেরিয়ার নাগরিক নায়েমেকা আগবো, যিনি কাজের জন্য রাশিয়া গিয়েছিলেন, পরিবারের সাথে নিয়মিত কথা বলার জন্য মোবাইল ফোনকে অপরিহার্য মনে করতেন।
একসময় যখন মোবাইল ফোন ছিল না, তখন দূর-দূরান্তে বসবাস করা আত্মীয়-স্বজনের সাথে যোগাযোগের একমাত্র উপায় ছিল চিঠি লেখা বা দীর্ঘ সময় ধরে টেলিফোন কলের অপেক্ষা করা।
সিয়েরা লিওনের শামসুদ্দিন-কোলের কথা আজও মনে আছে, যখন তিনি ১৯৭০-এর দশকে যুক্তরাষ্ট্রে পড়তে এসেছিলেন, তখন তাঁর বাবা-মায়ের সাথে কথা বলতে কয়েক দিন অপেক্ষা করতে হতো এবং কলের জন্য অনেক বেশি টাকা খরচ করতে হতো।
তবে, প্রযুক্তির এই অগ্রযাত্রা মানুষের জীবনকে সহজ করেছে, এতে কোনো সন্দেহ নেই।
সেনেগালের তাবেন সিসের মা লিখতে বা পড়তে পারেন না, কিন্তু ছেলের সাথে ফোনে কথা বলার সময় তিনি অতীতের স্মৃতি খুঁজে পান।
কুপারের মতে, এই পরিবর্তন কেবল শুরু হয়েছে। তিনি মনে করেন, মোবাইল ফোন মানুষের জীবনকে আরও কার্যকর করে তুলবে।
তথ্যসূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস।