ট্রাম্পের পছন্দের সরকারি পদে বিতর্ক: বিতর্কিত মন্তব্যের জন্য সমালোচিত!

ট্রাম্পের পছন্দের ফেডারেল ওয়াচডগ: বিতর্কিত মন্তব্যের জন্য সমালোচিত ৩০ বছর বয়সী আইনজীবী।

যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প, সরকারি কর্মকর্তাদের দুর্নীতি ও যারা সরকারের ভেতরের খবর ফাঁস করেন তাদের সুরক্ষার দায়িত্বে থাকা একটি গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগ দিতে চান একজন ৩০ বছর বয়সী আইনজীবীকে। তবে, এই সিদ্ধান্তের পরেই বিতর্ক দানা বেঁধেছে।

কারণ, এই আইনজীবী অতীতে বিভিন্ন সময়ে শ্বেতাঙ্গ শ্রেষ্ঠত্ববাদী এবং হলোকস্ট অস্বীকারকারীর সঙ্গে সম্পর্ক রেখেছেন এবং বিতর্কিত মন্তব্য করেছেন।

পాల్ ইনগ্রাসিয়া নামের এই আইনজীবীকে ‘অফিস অফ স্পেশাল কাউন্সেল’ (Office of Special Counsel – OSC) প্রধান হিসেবে মনোনীত করেছেন ট্রাম্প। ওএসসি-এর মূল কাজ হলো সরকারের ভেতরের খবর ফাঁসকারীদের সুরক্ষা দেওয়া এবং কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ওঠা দুর্নীতির অভিযোগ খতিয়ে দেখা।

এই পদে থাকা ব্যক্তির রাজনৈতিকভাবে নিরপেক্ষ থাকাটা জরুরি, কিন্তু ইনগ্রাসিয়ার অতীত কর্মকাণ্ড সেই ধারণার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয় বলেই মনে করছেন অনেকে।

জানা গেছে, ইনগ্রাসিয়া নিজেকে ‘প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের প্রিয় লেখক’ হিসেবে পরিচয় দেন। কারণ, ট্রাম্প গত বছর প্রায় একশ’ বার তার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ইনগ্রাসিয়ার মন্তব্য শেয়ার করেছেন।

গত গ্রীষ্মে তিনি আইনজীবী হিসেবে তালিকাভুক্ত হন এবং এর আগে ট্রাম্পের হোয়াইট হাউসে অল্প কিছুদিনের জন্য কাজ করেছেন। এরপর তিনি প্রথমে বিচার বিভাগে এবং পরে হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগে কাজ করেন।

ওএসসি-এর প্রধান হিসেবে ইনগ্রাসিয়ার মনোনয়ন পাওয়াটা অনেক বড় একটি দায়িত্ব। ওয়াটারগেট কেলেঙ্কারির পর এই পদ তৈরি করা হয়েছিল।

ওএসসি-এর প্রধানের মেয়াদ পাঁচ বছর এবং এটি বিভিন্ন সরকারের অধীনেও স্বাধীনভাবে কাজ করে। এই পদে নিয়োগের জন্য সিনেটের অনুমোদন প্রয়োজন। তবে, ইনগ্রাসিয়ার এখনো শুনানির দিনক্ষণ ঠিক হয়নি।

অতীতে যারা ওএসসি-এর প্রধান ছিলেন, তাদের সরকারি কাজের দীর্ঘ অভিজ্ঞতা ছিল। কিন্তু ইনগ্রাসিয়ার ক্ষেত্রে দেখা যায়, ট্রাম্পের প্রতি তার আনুগত্য বেশি এবং বিতর্কিত মন্তব্য করার রেকর্ডও রয়েছে।

সিএনএন-এর অনুসন্ধানে জানা গেছে, ২০১৯ সাল থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে ইনগ্রাসিয়ার বিভিন্ন মন্তব্য পর্যালোচনা করা হয়েছে। এর মধ্যে তার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের পোস্ট, ডানপন্থী পডকাস্টে তার উপস্থিতি এবং লাইভ অডিও চ্যাটরুমের কথোপকথনও রয়েছে।

অনুসন্ধানে দেখা যায়, ইনগ্রাসিয়া বিভিন্ন সময়ে বিতর্কিত মন্তব্য করেছেন। তিনি একবার ৯/১১ হামলার ষড়যন্ত্র তত্ত্ব বিষয়ক একটি ভিডিও শেয়ার করেছিলেন, যেখানে বলা হয়েছিল, যুক্তরাষ্ট্রের সরকারই নাকি এই হামলার পরিকল্পনা করেছিল।

এছাড়া, তিনি শ্বেতাঙ্গ শ্রেষ্ঠত্ববাদী এবং হলোকস্ট অস্বীকারকারী নিক ফুয়েন্তেসের সমর্থনেও কথা বলেছেন। ইনগ্রাসিয়া মনে করেন, ‘সরাসরি শ্বেতাঙ্গ পুরুষ’ হলো সবচেয়ে বুদ্ধিমান গোষ্ঠী এবং শিক্ষার ক্ষেত্রে তাদের অগ্রাধিকার দেওয়া উচিত।

ইনগ্রাসিয়া ২০১৬ সালের নির্বাচনে ট্রাম্পের পরাজয়ের পর মার্শাল ল’ জারিরও আহ্বান জানিয়েছিলেন। ৬ই জানুয়ারি, ২০২১ সালে ক্যাপিটলে হামলার রাতে তিনি একটি পোস্টে জন এফ কেনেডির একটি উক্তি শেয়ার করেছিলেন, যেখানে বলা হয়েছিল, “যারা শান্তিপূর্ণ বিপ্লবকে অসম্ভব করে তোলে, তারা সহিংস বিপ্লবকে অনিবার্য করে তোলে।”

হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগ সিএনএন-এর প্রতিবেদনকে ‘মিথ্যা অপপ্রচার’ হিসেবে উল্লেখ করেছে। তবে, তারা ইনগ্রাসিয়ার বিতর্কিত মন্তব্য বা তার বিভিন্ন সম্পর্কের বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এমন একজন ব্যক্তিকে গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগ দেওয়া হলে, তা সরকারের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার ক্ষেত্রে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *