দুবাইয়ের রেস্টুরেন্ট জগৎ: সোনার চামচ না সাফল্যের চাবিকাঠি?

দুবাইয়ের রেস্তোরাঁ ব্যবসার ঝলমলে জগৎ: সাফল্যের ভিড়ে বাড়ছে উদ্বেগের ছায়া। সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাই শহরে, ভোজনরসিকদের জন্য যেন এক স্বর্গরাজ্য প্রস্তুত হয়েছে।

এখানকার আকাশচুম্বী অট্টালিকা আর বিলাসবহুল হোটেলের ভিড়ে, প্রায় ১৩,০০০ এর বেশি খাদ্য ও পানীয়ের দোকান তাদের আকর্ষণ ধরে রাখতে প্রতিনিয়ত চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এখানকার বাজারটি এতটাই প্রতিযোগিতামূলক যে, টিকে থাকতে হলে উদ্ভাবনী ক্ষমতা আর রুচিশীলতার প্রমাণ দিতে হয়।

প্যারিসের পরেই, সম্ভবত দুবাইয়ে মাথাপিছু সবচেয়ে বেশি রেস্টুরেন্ট রয়েছে। দুবাইয়ের এই খাদ্য-সংস্কৃতি প্রতিবেশী দেশ সৌদি আরব এবং কাতারের সঙ্গে পর্যটকদের আকৃষ্ট করার এক নীরব প্রতিযোগিতায় নেমেছে।

একদিকে যেমন সোনার প্রলেপ দেওয়া খাবার পরিবেশন করা হয়, তেমনই সাশ্রয়ী মূল্যের বিরিয়ানিও এখানে পাওয়া যায়। এই দিক থেকে দেখলে, দুবাই অনেকটাই এগিয়ে।

কিন্তু এত বিপুল সংখ্যক রেস্টুরেন্টের ভিড়ে, ব্যবসার খরচ এবং ব্যর্থতার হার বাড়ছে, যা এখানকার খাদ্য ব্যবসার ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন তৈরি করেছে। এই শহরের প্রায় প্রতি ৯ জন বাসিন্দার মধ্যে ১ জন স্থানীয় আমিরাতি নাগরিক।

বিপুল সংখ্যক বিদেশী শ্রমিক এখানে অস্থায়ী চুক্তিতে কাজ করেন। পর্যটকদের আনাগোনাও চোখে পড়ার মতো, যা স্থানীয়দের চেয়ে প্রায় পাঁচগুণ বেশি। একটি হিসাব অনুযায়ী, দুবাইয়ের একজন পর্যটক, প্রতিবেশী দেশ সৌদি আরব বা এমনকি যুক্তরাষ্ট্রের পর্যটকদের চেয়েও পাঁচ গুণের বেশি অর্থ খরচ করেন।

তবে, ব্যবসার এই বিপুল প্রসারের পেছনে রয়েছে কিছু চ্যালেঞ্জ। নামকরা সব রেস্টুরেন্টেও প্রায়ই দেখা যায়, সিটিং-এর জায়গা ফাঁকা পড়ে আছে। এর প্রধান কারণ হলো যানজট।

গ্রাহকদের রেস্টুরেন্টে পৌঁছাতে অনেক সময় লেগে যায়। এছাড়া, শহরের কেন্দ্রস্থল এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ স্থানে, রেস্টুরেন্টগুলোর বার্ষিক ভাড়াও আকাশছোঁয়া।

প্রতি বর্গফুটের জন্য প্রায় $100 ডলার পর্যন্ত ভাড়া দিতে হয়, যা বিশ্বের অন্যান্য ব্যয়বহুল শহরের কাছাকাছি। এই ব্যবসার সঙ্গে জড়িতরা বলছেন, উচ্চ ভাড়ার কারণে অনেক রেস্টুরেন্ট বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।

গত বছর, দুবাই কর্তৃপক্ষ প্রায় ১,২০০ টি নতুন রেস্টুরেন্ট খোলার অনুমতি দিয়েছে, কিন্তু এর বিপরীতে ব্যর্থতার হারও বাড়ছে। এই বাজারে টিকে থাকতে হলে, খাদ্য পরিবেশন থেকে শুরু করে গ্রাহক পরিষেবা—সব দিকেই নজর রাখতে হয়।

তবে, এই সাফল্যের পেছনে লুকিয়ে আছে উদ্বেগের কিছু কারণ। খাদ্য সরবরাহকারী কর্মীদের জীবনযাত্রার মান এখনো অনেক নিচে। তীব্র যানজটের মধ্যে দ্রুত খাবার পৌঁছে দেওয়ার চাপ তাদের উপর থাকে, এবং অনেক সময় দুর্ঘটনার শিকার হতে হয়।

গত বছর, দুবাইতে খাবার সরবরাহ করতে গিয়ে ১৭ জন কর্মীর মৃত্যু হয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, অতি-বিনিয়োগের কারণে অনেক উদ্যোক্তা এই ব্যবসায় আসছেন, কিন্তু ব্যবসার ধারণা এবং পরিচালনা সম্পর্কে তাঁদের পর্যাপ্ত ধারণা নেই।

তাঁদের হাতে প্রচুর অর্থ থাকলেও, রেস্তোরাঁ ব্যবসার বাইরে অন্য কোনো বিকল্প তাঁরা খুঁজে পান না। এই পরিস্থিতি বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটেও বেশ প্রাসঙ্গিক।

ঢাকা ও চট্টগ্রামেও ভাড়ার উচ্চ হার একটি বড় সমস্যা। দ্রুত খাবার সরবরাহ করার জন্য, এখানেও কর্মীদের উপর অনেক চাপ থাকে। দুবাইয়ের এই রেস্তোরাঁ ব্যবসার উত্থান-পতন, সেখানকার অর্থনীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক।

একদিকে যেমন পর্যটকদের আকর্ষণ করার চেষ্টা চলছে, তেমনই ব্যবসার খরচ এবং কর্মীদের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নের দিকেও নজর দেওয়া প্রয়োজন। তথ্যসূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *