ইরানে ইন্টারনেট বিতর্কে যুক্তরাষ্ট্র! জনগণের পাশে কি নেই?

যুক্তরাষ্ট্র ইরানের ইন্টারনেট স্বাধীনতা এবং গণতন্ত্র প্রসারে সহায়তাকারী কিছু প্রকল্পের অর্থায়ন কমানোর পরিকল্পনা করছে, এমন খবরে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন অধিকারকর্মীরা। এই পদক্ষেপের ফলে দেশটির সাধারণ মানুষের জন্য তথ্য পাওয়ার সুযোগ সংকুচিত হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।

জানা গেছে, ইরানের নাগরিকদের জন্য স্টারলিঙ্ক ইন্টারনেট পরিষেবা সরবরাহকারী একটি অলাভজনক সংস্থা নেটফ্রিডম পায়োনিয়ার্স (এনএফপি)-এর তহবিল বন্ধ করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। একইসাথে, স্টেট ডিপার্টমেন্টের অধীনে থাকা গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও শ্রম ব্যুরোর (Bureau of Democracy, Human Rights, and Labor) বেশ কিছু কর্মসূচি, যেগুলি ইরানে ইন্টারনেট সংযোগের সুযোগ তৈরি করতে কাজ করে, সেগুলিও কাটছাঁটের প্রস্তাব করা হয়েছে।

পর্যবেক্ষকদের মতে, এমন একটি সময়ে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে, যখন ইরানের সমাজে অস্থিরতা চলছে। সম্প্রতি ইসরায়েলের হামলায় দেশটির সামরিক ও পারমাণবিক স্থাপনায় আঘাত হানা হয়েছে এবং এর জেরে ইরানে ইন্টারনেট ব্ল্যাকআউট দেখা যায়। এর ফলে দেশটির নাগরিকরা দ্রুত তথ্য পেতে এবং বাইরের বিশ্বের সঙ্গে যোগাযোগ করতে সমস্যায় পড়েছেন।

অধিকারকর্মীরা বলছেন, মুক্ত ইন্টারনেট অ্যাক্সেস এক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাদের মতে, ইন্টারনেট পরিষেবা ব্যাহত হওয়ার কারণে ইরানের মানুষ সরকারের অপপ্রচারের ফাঁদে আটকা পড়ে। এমন পরিস্থিতিতে সরকারবিরোধী মনোভাব তৈরি হতে পারে এবং সত্য ঘটনা চাপা দেওয়ারও আশঙ্কা রয়েছে।

এনএফপি নামক অলাভজনক সংস্থাটি দীর্ঘদিন ধরে মার্কিন সরকারের কাছ থেকে অনুদান পেয়ে আসছিল। এই অনুদানের মাধ্যমে তারা ইরানের অভ্যন্তরে স্টারলিঙ্ক কিট সরবরাহ করত। এই কিটগুলি নাগরিকদের জন্য ইন্টারনেট ব্যবহারের সুযোগ তৈরি করে এবং সরকারের সেন্সরশিপ এড়াতে সহায়ক ছিল। কিন্তু তহবিল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বর্তমানে তাদের সরবরাহ করা স্টারলিঙ্ক কিটের অর্ধেকই অচল হয়ে পড়েছে।

বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে এনএফপির নির্বাহী পরিচালক ইভান ফিরুজি বলেন, “ইরান এখন একটি সংকটপূর্ণ পরিস্থিতিতে রয়েছে। সেখানে লাখ লাখ মানুষ অবাধ তথ্যের জন্য ভিপিএন (VPN), স্টারলিঙ্ক এবং স্যাটেলাইট প্রযুক্তির ওপর নির্ভরশীল। কিন্তু মার্কিন সরকারের এমন সিদ্ধান্তে সেই সুযোগ হুমকির মুখে পড়ছে।

এদিকে, সাবেক মার্কিন কর্মকর্তারাও এই সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেছেন। তাদের মতে, ইরানের নাগরিকদের জন্য ইন্টারনেট সুবিধা বন্ধ করা হলে তা দেশটির সরকারের স্বৈরাচারী শাসনেরই সহায়ক হবে।

এছাড়াও, সাইফন (Psiphon) নামক একটি সফটওয়্যার, যা ইরানের নাগরিকরা সেন্সরশিপ এড়াতে ব্যবহার করে, তারও অর্থায়ন কমে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। সাইফনের পরিচালক আলী তেহরানি জানিয়েছেন, স্টেট ডিপার্টমেন্টের কাছে তিনি দ্রুত তহবিল ছাড়ের আবেদন জানালেও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।

মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং ইরান মিশনের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।

তথ্যসূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *