ইউরোর মঞ্চে মুখোমুখি: প্রতিপক্ষ হার্ডার ও এরিকসন, ফুটবল মাঠে ভালোবাসার অন্য গল্প!

ইউরো ২০২৫ টুর্নামেন্টে ডেনমার্ক ও সুইডেনের মধ্যকার ম্যাচে ফুটবলপ্রেমীদের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছেন দুই তারকা ফুটবলার—ডেনমার্কের অধিনায়ক পারনিলে হার্ডার এবং সুইডেনের রক্ষণভাগের খেলোয়াড় ম্যাগডালেনা এরিকসন। এই দুই নারী ফুটবলারের মাঠের লড়াইয়ের থেকেও বেশি আলোচনার জন্ম দিয়েছে তাঁদের ব্যক্তিগত সম্পর্ক।

তাঁরা শুধু মাঠের প্রতিপক্ষই নন, বরং বাস্তব জীবনে একে অপরের জীবনসঙ্গী। ফুটবল বিশ্বে এমন ঘটনা খুবই বিরল, যেখানে একজন খেলোয়াড় তাঁর জীবনসঙ্গীর বিপক্ষে খেলেন এবং তাঁকে প্রতিহত করার চেষ্টা করেন।

সুইডেনের হয়ে এরিকসনের প্রধান কাজ হবে ডেনমার্কের আক্রমণভাগের গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড় ও দলের অধিনায়ক পারনিলে হার্ডারকে রুখে দেওয়া।

১১ বছরের দীর্ঘ সম্পর্কের পথচলায় এই জুটি ক্রীড়াঙ্গনের বাইরেও অনেকের কাছে অনুপ্রেরণা জুগিয়েছেন। ২০১৯ সালের বিশ্বকাপে তাঁদের একটি ভালোবাসার মুহূর্তের ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছিল, যা তাঁদের পরিচিতি আরও বাড়িয়ে দেয়।

মাঠের খেলায় তাঁরা একে অপরের প্রতিপক্ষ হলেও, মাঠের বাইরে তাঁদের সম্পর্ক গভীর। দু’জনেরই রয়েছে ১০০-এর বেশি আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলার অভিজ্ঞতা।

এর আগে, ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিত একটি ম্যাচে এরিকসন জয়লাভ করেন। সুইডেনের অধিনায়ক হিসেবে সেই ম্যাচে এরিকসন বেশ দৃঢ়তার সঙ্গে খেলেছিলেন এবং হার্ডারের ওপর কড়া ট্যাকল করেছিলেন। এমনকি একটি কর্নার কিকের সময় তাঁদের মধ্যে ধাক্কাধাক্কিও হয়।

তবে মাঠের বাইরের সম্পর্ক সবসময় বন্ধুত্বপূর্ণ। এরিকসন যখন নিষেধাজ্ঞার কারণে পরবর্তী ম্যাচে খেলতে পারেননি, তখন হার্ডার বলেছিলেন, “একজন ফুটবলার হিসেবে এটা ভালো যে, মাগদা খেলবে না। তবে আমাদের মধ্যে এই দ্বৈরথগুলো এড়ানোও সম্ভব হবে।

এই বছর তাঁদের একটি মজার বিষয় ছিল, খেলা শেষে যিনি হারবেন, তিনিই বাড়ির কাজকর্ম করবেন। সুইডিশ এক সমর্থকও ব্যানার হাতে নিয়ে এসেছিলেন, যেখানে লেখা ছিল: “পারনিলে তরকারি করবে।

২০১৯ সালে ফ্রান্সে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপে একটি চুম্বনের ছবি তাঁদেরকে ক্রীড়াঙ্গনে এলজিবিটিকিউ+ সম্প্রদায়ের আইকন হিসেবে পরিচিত করে তোলে।

হার্ডার এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, “আমি বুঝতে পারিনি যে, আমরা আসলে কত মানুষের অনুপ্রেরণা।

তাঁরা দু’জনেই তাঁদের বেতনের ১ শতাংশ ‘কমন গোল’ নামক একটি সামাজিক প্রকল্পে দান করেন এবং ‘প্লে প্রাউড’ প্রকল্পকে সমর্থন করেন।

২০১৪ সালে সুইডিশ ক্লাব লিংকোপিংয়ে খেলার সময় এরিকসন ও হার্ডারের পরিচয় হয়। এরপর চেলসি এবং বায়ার্ন মিউনিখেও তাঁরা একসঙ্গে খেলেছেন।

এর আগে ২০১৮ সালে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের সেমিফাইনালে তাঁরা একে অপরের মুখোমুখি হয়েছিলেন। এছাড়াও, একটি বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের ম্যাচেও তাঁদের দেখা হয়েছিল।

ইউরো ২০২৫-এ এই বন্ধুত্বপূর্ণ প্রতিদ্বন্দ্বিতা আরও একবার নতুন মাত্রা যোগ করতে চলেছে। ফুটবল বিশ্বে নারী ফুটবলের জনপ্রিয়তা বাড়ছে, এবং এই ধরনের ঘটনা খেলাটিকে আরও আকর্ষণীয় করে তুলছে।

তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *