নতুন বিলে কাদের পোয়াবারো? তালিকায় কারা?

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে একটি নতুন অর্থনৈতিক বিল নিয়ে আলোচনা চলছে, যা দেশটির অর্থনীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তন আনতে পারে। সিনেটে এটি পাস হওয়ার পর এখন হাউজ অফ রিপ্রেজেন্টেটিভসে বিবেচনা করা হচ্ছে।

ডোনাল্ড ট্রাম্প এই বিলটিকে “বিশাল ও সুন্দর” বলে অভিহিত করেছেন এবং এর সফলতার ব্যাপারে আশা প্রকাশ করেছেন। তবে, এই বিলটির প্রভাব সবার জন্য সমান হবে না, বরং কিছু মানুষের সুবিধা হতে পারে, আবার কারো কারো অসুবিধা হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে।

এই বিলটি যদি আইনে পরিণত হয়, তবে এর ফলে কর্পোরেট সংস্থাগুলি সবচেয়ে বেশি লাভবান হবে বলে মনে করা হচ্ছে। ইউএস চেম্বার অফ কমার্স এবং বিজনেস রাউন্ডটেবিলের মতো বড় ব্যবসায়িক সংগঠনগুলো এই বিলের প্রতি সমর্থন জানাচ্ছে।

কারণ, এই বিলে কর ছাড়ের ব্যবস্থা স্থায়ী করার প্রস্তাব রয়েছে, যা মূলত ২০১৭ সালের ট্যাক্স কাট অ্যান্ড জবস অ্যাক্টের ধারাবাহিকতা। এছাড়া, নতুন উৎপাদন কেন্দ্র স্থাপনে ব্যবসায়ীদের জন্য কর সংক্রান্ত কিছু সুবিধা যুক্ত করা হয়েছে।

এর ফলে, প্রস্তুতকারক সংস্থাগুলিও উপকৃত হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, নতুন ম্যানুফ্যাকচারিং সুবিধা তৈরি করতে ব্যবসায়ীরা তাৎক্ষণিকভাবে ব্যয়ের পুরোটা কর থেকে বাদ দিতে পারবে।

এই সুবিধাটি ২০২৫ সালের ১৯শে জানুয়ারি থেকে কার্যকর হবে এবং ২০২৯ সালের ১লা জানুয়ারির আগে শুরু হওয়া নির্মাণকাজের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে।

ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরাও এই বিলের মাধ্যমে উপকৃত হতে পারে। ন্যাশনাল ফেডারেশন অফ ইন্ডিপেন্ডেন্ট বিজনেস-এর মতো ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী বিষয়ক সংগঠন এই বিলের প্রশংসা করেছে।

এই বিলে কিছু নির্দিষ্ট ব্যবসার মালিকদের জন্য বিশেষ ছাড়ের প্রস্তাব রাখা হয়েছে, যা তাদের ব্যক্তিগত ট্যাক্স রিটার্নে প্রযোজ্য হবে। এছাড়া, উচ্চ-আয়ের আমেরিকানরাও এই বিল থেকে সুবিধা পেতে পারেন।

পেন হুইলার বাজেট মডেলের বিশ্লেষণ অনুযায়ী, শীর্ষ ২০ শতাংশ উপার্জনকারীর বার্ষিক আয় প্রায় ১৩,০০০ ডলার পর্যন্ত বাড়তে পারে। এমনকি শীর্ষ ০.১ শতাংশ উপার্জনকারীর ক্ষেত্রে এই আয় বছরে প্রায় ২৯০,০০০ ডলার পর্যন্ত বাড়তে পারে।

তবে, এই বিলের কিছু নেতিবাচক দিকও রয়েছে। কম আয়ের মানুষেরা এই বিলের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারেন। কারণ, এতে খাদ্য সহায়তা কর্মসূচি এবং স্বাস্থ্যখাতে বরাদ্দ কমানোর প্রস্তাব রয়েছে।

মেডিকেড এবং খাদ্য সহায়তা প্রোগ্রামের নিয়মকানুন কঠিন করার প্রস্তাবও রয়েছে, যার ফলে অনেক কম আয়ের মানুষ তাদের সুবিধা হারাতে পারেন। এছাড়াও, হাসপাতালগুলোও স্বাস্থ্য পরিষেবা বিষয়ক কিছু বিধানের কারণে অসন্তুষ্ট।

কারণ, এই বিলের ফলে মেডিকেডের সুবিধাভোগীদের জন্য রাজ্যগুলি থেকে তাদের প্রাপ্ত সহায়তা হ্রাস পাবে। এর ফলে, হাসপাতালে দরিদ্র রোগীদের চিকিৎসা ব্যয় আরও বাড়বে।

অন্যদিকে, ক্লিন এনার্জি এবং বৈদ্যুতিক গাড়ির (ইভি) উৎপাদনকারীরাও ক্ষতির শিকার হতে পারে। যদিও সিনেট পরিষ্কার শক্তির ওপর অতিরিক্ত করের প্রস্তাব বাতিল করেছে, তবে এই বিলে ২০২৭ সাল পর্যন্ত বায়ু এবং সৌর বিদ্যুতের জন্য ট্যাক্স ইনসেনটিভগুলি তুলে নেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে।

এর ফলে, এই শিল্পে কর্মসংস্থান হ্রাস এবং বিদ্যুতের বিল বাড়তে পারে। এছাড়া, ইভি নির্মাতাদের জন্য ভর্তুকি বন্ধ করার প্রস্তাবও রয়েছে, যা গাড়ির ক্রেতাদের জন্য উপলব্ধ ট্যাক্স ক্রেডিট হ্রাস করবে।

এই বিলের সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয় হল এর ফলে দেশের বাজেট ঘাটতি বাড়বে। কংগ্রেসনাল বাজেট অফিসের (CBO) হিসাব অনুযায়ী, আগামী দশ বছরে এই বিলের কারণে প্রায় ৩.৪ ট্রিলিয়ন ডলার ঘাটতি হতে পারে।

ঋণ বাড়লে সুদের হার বাড়তে পারে, যা গাড়ি বা বাড়ির মতো জিনিস কেনা এবং ব্যবসা সম্প্রসারণের জন্য ঋণ নেওয়া আরও ব্যয়বহুল করে তুলবে।

যুক্তরাষ্ট্রের এই অর্থনৈতিক বিলের সরাসরি প্রভাব বাংলাদেশে তাৎক্ষণিকভাবে অনুভূত নাও হতে পারে, তবে এর কিছু পরোক্ষ প্রভাব পড়তে পারে। উদাহরণস্বরূপ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে কর্পোরেট ট্যাক্স নীতিতে পরিবর্তনের ফলে বিদেশি বিনিয়োগের প্রবাহ প্রভাবিত হতে পারে, যা বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলির জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

এছাড়াও, বিশ্ব অর্থনীতিতে মার্কিন নীতির পরিবর্তনের কারণে বাণিজ্য এবং রেমিটেন্সের উপরও প্রভাব পড়তে পারে। তাই, এই বিলের ফলাফলগুলি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করা দরকার।

তথ্যসূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *