মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে কি মন্দা? চাকরির বাজারে অশনি সংকেত!

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শ্রমবাজারের হালচাল: জুন মাসে কর্মসংস্থান হ্রাসের পূর্বাভাস।

যুক্তরাষ্ট্রের শ্রমবাজার নিয়ে প্রকাশিতব্য একটি নতুন প্রতিবেদনে ধারণা করা হচ্ছে যে, জুন মাসে দেশটিতে নতুন কর্মী নিয়োগের গতি কমে আসতে পারে। এমনটা হলে তা বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ কিছু বিষয় নিয়ে আসবে।

কারণ, এর প্রভাব পড়তে পারে প্রবাসী শ্রমিকদের পাঠানো রেমিট্যান্সে, যা বাংলাদেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এছাড়া, বিশ্ব অর্থনীতিতে আমেরিকার প্রভাব অনেক বেশি হওয়ায়, এর গতিবিধির ওপর নির্ভর করে অনেক দেশের বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক কর্মতৎপরতা।

বিশেষজ্ঞদের মতে, আগামী মাসে সরকারি হিসাব অনুযায়ী, নতুন করে ১ লাখ ১৫ হাজার কর্মসংস্থান হতে পারে, যেখানে মে মাসে এই সংখ্যা ছিল ১ লাখ ৩৯ হাজার। সাধারণত, অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের সময় কর্মসংস্থান বাড়ে, কিন্তু এখন সেই হারে পরিবর্তন আসার ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে।

ধারণা করা হচ্ছে, বেকারত্বের হার সামান্য বেড়ে ৪.৩ শতাংশে পৌঁছতে পারে, যা ২০২১ সালের অক্টোবর মাসের পর সর্বোচ্চ হবে। তবে, এই হার এখনো শ্রমিকদের চাকরি সুরক্ষার নিশ্চয়তা দেয়।

কোভিড-১৯ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের পর ২০২১ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত সময়ে মার্কিন অর্থনীতি অপ্রত্যাশিতভাবে শক্তিশালী হয়ে ওঠেছিল। তখন কোম্পানিগুলো কর্মী নিয়োগের জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছিল। সেই সময় প্রতি মাসে গড়ে ৪ লাখ কর্মী নিয়োগ করা হয়েছে।

কিন্তু বর্তমানে পরিস্থিতি কিছুটা ভিন্ন। চলতি বছর, অর্থাৎ ২০২৪ সালে, প্রতি মাসে গড়ে ১ লাখ ৬৮ হাজার কর্মী নিয়োগ করা হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভ ২০২১ ও ২০২৩ সালে সুদের হার ১১ বার বাড়ায়। এর ফলস্বরূপ, কর্মসংস্থান কিছুটা ধীর গতিতে হলেও, অর্থনীতিতে বড় ধরনের মন্দা দেখা যায়নি।

তবে, বাজারের ওপর চাপ বাড়ছে। বেসরকারি সংস্থা এডিবি’র (ADP) তথ্য অনুযায়ী, গত মাসে বেসরকারি খাতে প্রায় ৩৩ হাজার কর্মীর চাকরি কমেছে।

এডিবি’র প্রধান অর্থনীতিবিদ নেলা রিচার্ডসন বলছেন, কর্মী ছাঁটাইয়ের ঘটনা এখনো বিরল হলেও, নতুন কর্মী নিয়োগের ক্ষেত্রে দ্বিধা এবং কর্মীদের বদলি করার অনীহা দেখা যাচ্ছে।

সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বাণিজ্যনীতি, বিশেষ করে আমদানি শুল্ক আরোপের কারণেও এই পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

অর্থনীতিবিদরা মনে করেন, শুল্ক বৃদ্ধি ব্যবসা ও ভোক্তাদের জন্য পণ্যের দাম বাড়ায় এবং বাজারের প্রতিযোগিতা কমিয়ে দেয়। এর ফলে অন্য দেশগুলোও পাল্টা শুল্ক আরোপ করতে পারে, যা মার্কিন রপ্তানিকারকদের ক্ষতিগ্রস্ত করবে।

এছাড়াও, ট্রাম্প সরকারের অভিবাসন নীতি এবং সরকারি বিভিন্ন পদে কর্মী নিয়োগের ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা জারির কারণেও কর্মসংস্থান কমে যেতে পারে।

উদাহরণস্বরূপ, গত মে মাসে আমেরিকার শ্রমশক্তি, অর্থাৎ যারা কাজ করছেন বা কাজ খুঁজছেন, তাদের সংখ্যা ৬ লাখ ২৫ হাজার কমে গিয়েছিল।

যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতির এই পরিবর্তনের কারণগুলো বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, এর মাধ্যমে একদিকে যেমন রেমিট্যান্সের ওপর প্রভাব পড়তে পারে, তেমনই বিশ্ব বাণিজ্যের ক্ষেত্রেও পরিবর্তন আসতে পারে।

তাই, এই পরিস্থিতি বাংলাদেশের অর্থনীতিকে কীভাবে প্রভাবিত করে, সেদিকে আমাদের নজর রাখতে হবে।

তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *