দক্ষিণ কোরিয়ার নতুন প্রেসিডেন্টের জন্য কঠিন চ্যালেঞ্জ, বাণিজ্য চুক্তি ও উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন।
সিউল, দক্ষিণ কোরিয়া – দক্ষিণ কোরিয়ার নতুন প্রেসিডেন্ট লি জায়ে-মিয়ুং-এর জন্য যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি এবং উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন – উভয় ক্ষেত্রেই কঠিন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। আগামী সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বেঁধে দেওয়া সময়সীমার মধ্যে শুল্ক আলোচনা শেষ করা যাবে কিনা, তা এখনো অনিশ্চিত।
বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে লি জানিয়েছেন, উভয় দেশই তাদের অবস্থান স্পষ্ট করতে এবং সমঝোতার ক্ষেত্রগুলো চিহ্নিত করতে কাজ করছে।
গত মাসে দায়িত্ব গ্রহণের পর প্রথম সংবাদ সম্মেলনে লি উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের আগ্রহ প্রকাশ করেন। তবে তিনি স্বীকার করেন, দুই কোরিয়ার মধ্যে গভীর আস্থার অভাব রয়েছে, যা সহজে দূর করা যাবে না।
ট্রাম্পের ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ নীতি এবং উত্তর কোরিয়ার পারমাণবিক কর্মসূচি—উভয়ই লি-এর নতুন সরকারের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। লি একজন উদারপন্থী নেতা।
গত ডিসেম্বরে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ইউন সুক-ইওলকে অভিশংসনের মাধ্যমে ক্ষমতাচ্যুত করার পর অনুষ্ঠিত নির্বাচনে তিনি জয়লাভ করেন।
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে শুল্ক আলোচনা প্রসঙ্গে লি বলেন, এটি স্পষ্টতই সহজ নয়।
উভয় পক্ষের জন্য লাভজনক ফল নিশ্চিত করতে হবে। তিনি বলেন, “আমরা এখনো নিশ্চিত নই যে, ৮ জুলাই-এর মধ্যে আমরা কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারব কিনা।
আমরা এখন আমাদের সেরাটা দিচ্ছি। আমাদের এমন একটি পারস্পরিক ফল দরকার যা উভয় পক্ষের জন্যই উপকারী হবে, কিন্তু এখন পর্যন্ত উভয় পক্ষই তাদের চাওয়াগুলো সংজ্ঞায়িত করার চেষ্টা করছে।”
ট্রাম্পের নেওয়া বিশ্বব্যাপী শুল্ক আরোপের ৯০ দিনের বিরতি আগামী ৯ জুলাই শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।
এর ফলে দক্ষিণ কোরিয়ার পণ্যগুলোর ওপর ২৫ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপ হতে পারে। ওয়াশিংটন এরই মধ্যে গাড়ি এবং সেমিকন্ডাক্টরের মতো কিছু নির্দিষ্ট পণ্যের ওপর উচ্চ শুল্ক আরোপের চেষ্টা করছে, যা দক্ষিণ কোরিয়ার বাণিজ্যনির্ভর অর্থনীতির জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
এছাড়াও, আশঙ্কা করা হচ্ছে, ট্রাম্প দক্ষিণ কোরিয়ায় মোতায়েনকৃত ২৮,০০০ মার্কিন সেনার জন্য দেশটির কাছ থেকে আরও বেশি অর্থ পরিশোধের দাবি করতে পারেন।
উত্তর কোরিয়ার হুমকি মোকাবিলায় এই সেনা মোতায়েন গুরুত্বপূর্ণ। লি শুল্কের বিষয়ে ধৈর্য ধরার আহ্বান জানিয়েছেন এবং দ্রুত কোনো চুক্তি করার পরিবর্তে জাতীয় স্বার্থকে অগ্রাধিকার দেওয়ার কথা বলেছেন।
এদিকে, উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ থাকা আলোচনা পুনরায় শুরুর বিষয়েও আগ্রহী লি।
প্রতিবেশী দেশগুলোর জন্য উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে রাশিয়ার ক্রমবর্ধমান সামরিক সহযোগিতা। লি বলেন, “আমার মনে হয়, দক্ষিণ কোরিয়া এবং যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে নির্ভরযোগ্য সমন্বয় ও আলোচনার ভিত্তিতে আমাদের উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক উন্নত করা উচিত।
তবে পারস্পরিক বিদ্বেষ এবং অবিশ্বাসের কারণে এটি সহজ হবে না বলেই আমি মনে করি।”
এর আগে লি-এর বিরুদ্ধে উত্তর কোরিয়া ও চীনের দিকে ঝুঁকে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক দুর্বল করার অভিযোগ উঠেছিল।
তবে নির্বাচনের সময় তিনি প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করার পাশাপাশি উত্তর কোরিয়া, চীন ও রাশিয়ার সঙ্গেও সম্পর্ক মেরামতের চেষ্টা করবেন।
জাপানের সঙ্গে নিয়মিত শীর্ষ বৈঠক আয়োজনের প্রস্তাবও দিয়েছেন লি।
উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে আস্থা তৈরির জন্য লি-এর সরকার বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে উত্তর কোরিয়ার সীমান্তের কাছে প্রচারমূলক কার্যক্রম বন্ধ করা এবং প্রচারপত্রসহ বেলুন ওড়ানো বন্ধ করার পদক্ষেপ নেওয়া।
অন্যদিকে, উত্তর কোরিয়া ২০১৯ সাল থেকে যুক্তরাষ্ট্র ও দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে আলোচনায় বসতে রাজি হয়নি।
বর্তমানে দেশটি রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক বাড়াচ্ছে এবং ইউক্রেন যুদ্ধের জন্য রাশিয়াকে অস্ত্র ও সেনা সরবরাহ করছে।
তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস