মশার কামড়: কয়েকটি মারাত্মক রোগের কারণ ও প্রতিরোধের উপায়। বর্ষা মৌসুম আসতেই মশার উপদ্রব বাড়ে, সেই সাথে বাড়ে কিছু রোগের ঝুঁকি।
শুধু বিরক্তিকরই নয়, মশা কিছু মারাত্মক রোগের জীবাণু বহন করে যা মানুষের শরীরে প্রবেশ করে অসুস্থতা সৃষ্টি করতে পারে। বিশ্বজুড়ে ভ্রমণ এবং জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এই রোগগুলো সম্পর্কে সচেতনতা অত্যন্ত জরুরি।
আসুন, মশা বাহিত কয়েকটি রোগ, তাদের লক্ষণ, প্রতিরোধের উপায় এবং চিকিৎসা সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেই।
* **ওয়েস্ট নাইল ভাইরাস (West Nile Virus):**
* এই ভাইরাস পাখির মাধ্যমে ছড়ায় এবং মশার মাধ্যমে মানুষের শরীরে প্রবেশ করে।
* উপসর্গ: জ্বর, মাথাব্যথা, দুর্বলতা এবং শরীরে র্যাশ হতে পারে। গুরুতর ক্ষেত্রে, স্নায়ুতন্ত্রে সংক্রমণ হয়ে মেনিনজাইটিস বা এনসেফলাইটিস হতে পারে।
* ঝুঁকি: বয়স্ক ব্যক্তি এবং যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল, তাদের জটিলতা হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
* প্রতিরোধ: মশার কামড় থেকে বাঁচতে শরীরের উন্মুক্ত স্থান ঢেকে রাখা, মশা তাড়ানোর স্প্রে ব্যবহার করা এবং ঝোপঝাড় ও জলাভূমি এলাকা এড়িয়ে চলা উচিত।
* চিকিৎসা: এই ভাইরাসের কোনো নির্দিষ্ট চিকিৎসা নেই। উপসর্গ অনুযায়ী চিকিৎসা করা হয়।
* **ইস্টার্ন ইকুইন এনসেফ্যালাইটিস (Eastern Equine Encephalitis – EEE):**
* এটি একটি বিরল তবে মারাত্মক রোগ যা মশার মাধ্যমে ছড়ায়।
* উপসর্গ: হালকা জ্বর, মাথাব্যথা, ক্লান্তি এবং পেশিতে ব্যথা হতে পারে। গুরুতর ক্ষেত্রে মস্তিষ্কে প্রদাহ হয়ে গুরুতর স্নায়বিক সমস্যা দেখা দিতে পারে।
* ঝুঁকি: শিশু এবং বয়স্ক ব্যক্তিরা এই রোগে বেশি আক্রান্ত হতে পারে।
* প্রতিরোধ: মশার কামড় থেকে বাঁচাই প্রতিরোধের মূল উপায়।
* চিকিৎসা: উপসর্গ অনুযায়ী চিকিৎসা এবং সহায়ক থেরাপি দেওয়া হয়।
* **ম্যালেরিয়া (Malaria):**
* এই রোগটি একটি পরজীবীর কারণে হয়, যা মশার মাধ্যমে মানুষের শরীরে প্রবেশ করে।
* উপসর্গ: জ্বর, ঠান্ডা লাগা, মাথাব্যথা, পেশী ব্যথা এবং দুর্বলতা।
* ঝুঁকি: বিশ্বের গ্রীষ্মমন্ডলীয় ও উপ-গ্রীষ্মমন্ডলীয় অঞ্চলে, বিশেষ করে আফ্রিকা মহাদেশে এই রোগের ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি।
* প্রতিরোধ: মশার কামড় থেকে বাঁচা, মশারি ব্যবহার করা এবং ম্যালেরিয়ার প্রতিষেধক ওষুধ সেবন করা।
* চিকিৎসা: ম্যালেরিয়ার চিকিৎসার জন্য ওষুধ এবং প্রতিরোধের জন্য প্রতিষেধক পাওয়া যায়।
* **ডেঙ্গু (Dengue):**
* ডেঙ্গু ভাইরাস দ্বারা সৃষ্ট একটি রোগ, যা মশার মাধ্যমে ছড়ায়।
* উপসর্গ: জ্বর, তীব্র মাথাব্যথা, চোখের পিছনে ব্যথা, পেশী ও হাড়ের সংযোগস্থলে ব্যথা, ত্বকে ফুসকুড়ি এবং বমি বমি ভাব হতে পারে।
* ঝুঁকি: ডেঙ্গু সাধারণত গ্রীষ্মমন্ডলীয় এবং উপ-গ্রীষ্মমন্ডলীয় অঞ্চলে বেশি দেখা যায়। বাংলাদেশেও ডেঙ্গু একটি পরিচিত সমস্যা।
* প্রতিরোধ: মশার কামড় থেকে বাঁচা, বাড়ির আশেপাশে জল জমা হতে না দেওয়া এবং মশা তাড়ানোর স্প্রে ব্যবহার করা।
* চিকিৎসা: ডেঙ্গুর কোনো নির্দিষ্ট চিকিৎসা নেই, তবে উপসর্গ অনুযায়ী চিকিৎসা করা হয়।
উপসংহার: মশা বাহিত রোগগুলো একটি বৈশ্বিক স্বাস্থ্য সমস্যা।
যেহেতু ভ্রমণ এবং জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এই রোগগুলো ছড়িয়ে পড়ার সম্ভবনা বাড়ছে, তাই আমাদের সচেতন থাকা জরুরি। মশার কামড় থেকে বাঁচতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা এবং রোগের লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
তথ্য সূত্র: Healthline