দক্ষিণ কোরিয়া জুড়ে ‘প্রেম পোকার’ উপদ্রব! কি হচ্ছে সেখানে?

দক্ষিণ কোরিয়ার রাজধানী সিউলে ‘লাভবাগ’-এর উপদ্রব, অতিষ্ঠ নগরবাসী

দক্ষিণ কোরিয়ায় সম্প্রতি ‘লাভবাগ’-এর (Plecia longiforceps) উপদ্রব মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। দেশটির রাজধানী সিউল এবং এর পার্শ্ববর্তী ইনছন শহরে গত কয়েক সপ্তাহ ধরে এই পোকাগুলোর অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন বাসিন্দারা।

তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণে এদের বিস্তার ঘটছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

শুক্রবার দেশটির পরিবেশ মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানায়, পরিস্থিতি মোকাবেলায় কয়েক ডজন সরকারি কর্মীকে সিউলের পশ্চিমে অবস্থিত গ্যেয়াংসান পাহাড়ে পাঠানো হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আসা ভিডিওগুলোতে দেখা যায়, পর্বতের সুন্দর ট্রেকিং পথগুলো যেন এক ঝাঁক পোকার আনাগোনায় বিভীষিকাময় হয়ে উঠেছে।

ভাইরাল হওয়া কিছু ভিডিওতে দেখা যায়, ছোট আকারের ঝাঁকে ঝাঁকে পোকার মধ্যে হাইকাররা নাকাল হচ্ছেন। একজন মানুষকে তো পুরো পোকার দল ঘিরে ধরেছিল।

আরেকজন ব্যক্তি ট্রেইল থেকে হাজার হাজার পোকার মৃতদেহ সরিয়েছেন। এমনকি ইউটিউবে প্রকাশিত একটি ভিডিওতে এক ব্যক্তি এই পোকাগুলো সংগ্রহ করে তা দিয়ে বার্গার তৈরি করে খাওয়ার দৃশ্য দেখিয়েছেন।

আসলে, লাভবাগ কী? এরা কেন এত সমস্যা করছে?

বৈজ্ঞানিকভাবে ‘প্লেসিয়া লঙ্গিফোরসেপস’ নামে পরিচিত লাভবাগগুলো তাদের প্রজননকালে একসঙ্গে ওড়ার সময় একে অপরের সঙ্গে লেগে থাকার কারণে এই নামে পরিচিতি লাভ করেছে। সাধারণত, এদের দেখা যায় চীন, তাইওয়ান এবং জাপানের রিউকু দ্বীপপুঞ্জের মতো উপক্রান্তীয় অঞ্চলে।

মধ্য আমেরিকা এবং যুক্তরাষ্ট্রের কিছু অংশেও এদের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়, যেমন টেক্সাস ও ফ্লোরিডাতে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, জলবায়ু পরিবর্তন এবং উষ্ণতা বৃদ্ধির কারণে লাভবাগগুলো উত্তর দিকে, বিশেষ করে সিউল এবং ইনছনের মতো অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ছে। যদিও বৈশ্বিক উষ্ণতা একটি বিশ্বব্যাপী সমস্যা, তবে বিজ্ঞানীরা চিহ্নিত করেছেন যে সিউলে অন্যান্য অঞ্চলের তুলনায় তাপমাত্রা দ্রুত বাড়ছে।

শহরের ‘হিট-আইল্যান্ড’ প্রভাবও এর জন্য দায়ী, যেখানে মানবসৃষ্ট কাঠামো বেশি তাপ শোষণ করে ধরে রাখে, ফলে আশেপাশের গ্রামীণ এলাকার তুলনায় তাপমাত্রা অনেক বেশি থাকে।

লাভবাগগুলো কি ক্ষতিকর?

লাভবাগগুলো রোগ ছড়ায় না বা মানুষ ও অন্যান্য প্রাণীকে কামড়ায় না।

তবে, গাড়ির কাঁচ, ঘরবাড়ি, রেস্তোরাঁ এবং মেট্রো ট্রেনের দেয়ালে এদের লেগে থাকার কারণে জনসাধারণের মধ্যে অভিযোগ বাড়ছে।

এখন পর্যন্ত, সরকারি কর্মকর্তারা স্থানীয় কর্মী ও বাসিন্দাদের রাসায়নিক কীটনাশকের পরিবর্তে পানি স্প্রে করা বা আঠালো ফাঁদ ব্যবহারের পরামর্শ দিয়েছেন।

বাংলাদেশেও কি এমন কোনো ঘটনার সম্ভাবনা আছে?

বাংলাদেশে সরাসরি লাভবাগ-এর উপদ্রব দেখা না গেলেও, বর্ষাকালে বিশেষ করে ঢাকা শহরে মশার উপদ্রব বা বিভিন্ন ফসলের মাঠে পোকামাকড় আক্রমণের মতো সমস্যা প্রায়ই দেখা যায়।

জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে এমন পরিস্থিতি ভবিষ্যতে আরও বাড়তে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন।

দক্ষিণ কোরিয়ার সরকার পরিস্থিতি মোকাবিলায় বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। পরিবেশমন্ত্রী বলেছেন, “আমরা পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করব এবং যে কোনো ধরনের উপদ্রবের শুরুতেই স্থানীয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কাজ করব।

তবে, জানা গেছে, প্রাকৃতিক উপায়েও লাভবাগ নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চলছে।

যেমন – চড়ুই ও শালিকের মতো পাখিরা এই পোকাগুলো খাচ্ছে, যার ফলে তাদের সংখ্যা কমতে শুরু করেছে।

সিউল শহর কর্তৃপক্ষ লাভবাগগুলোকে ‘পরিবেশগতভাবে উপকারী’ হিসেবে বিবেচনা করে।

কারণ, এগুলো মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য কোনো ঝুঁকি তৈরি করে না এবং ফুলের পরাগায়ণে সাহায্য করে। তা সত্ত্বেও, স্থানীয় গণমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে, ২০২৩ সালে শহরের কর্তৃপক্ষের কাছে লাভবাগ সম্পর্কিত অভিযোগের সংখ্যা ছিল ৪,৪১৮, যা গত বছর বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯,২৯৬-এ।

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *