ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখা তরুণদের জীবনে অন্ধকার! ট্রাম্পের সিদ্ধান্তে কি ক্ষতি?

যুক্তরাষ্ট্রে একটি সরকারি বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ কর্মসূচি বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে, যা নিম্ন-আয়ের এবং ঝুঁকিপূর্ণ তরুণ-তরুণীদের কারিগরি প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকে। ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের বাজেট কাটছাঁটের অংশ হিসেবে এই কর্মসূচিটি বন্ধ করার কথা ভাবা হচ্ছে।

এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের জন্য কি কোনো শিক্ষণীয় বিষয় রয়েছে?

যুক্তরাষ্ট্রের ‘জব কর্পস’ নামের এই প্রশিক্ষণ প্রকল্পটি মূলত দরিদ্র ও সুবিধাবঞ্চিত তরুণ-তরুণীদের জন্য তৈরি করা হয়েছিল। ৬০ বছর আগে প্রেসিডেন্ট লিন্ডন বি জনসনের ‘যুদ্ধ দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে যুদ্ধ’ কর্মসূচির অংশ হিসেবে এটির সূচনা হয়।

এই প্রোগ্রামের মাধ্যমে প্রশিক্ষণার্থীরা বিভিন্ন কারিগরি দক্ষতা অর্জন করে ভালো বেতনে চাকরি পাওয়ার সুযোগ পান। যেমন, একজন ট্রেনের কন্ডাক্টর বছরে প্রায় ৮০ হাজার মার্কিন ডলার বেতন পেতে পারেন, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৯৪ লাখ টাকার সমান।

তবে, সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের শ্রম দপ্তর বাজেট ঘাটতি এবং কর্মসূচির দুর্বল ফল-এর কারণ দেখিয়ে জব কর্পস বন্ধ করার ঘোষণা দেয়। এর ফলে প্রায় ২১,০০০ শিক্ষার্থীর প্রশিক্ষণ মাঝপথে বন্ধ হওয়ার সম্ভবনা দেখা দিয়েছে।

শ্রম দপ্তরের এমন সিদ্ধান্তের কড়া সমালোচনা করেছেন অনেকে। তাঁদের মতে, জব কর্পস বন্ধ হয়ে গেলে দক্ষ শ্রমিকের অভাব দেখা দেবে, যা যুক্তরাষ্ট্রের উৎপাদন শিল্পকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে।

এই সিদ্ধান্তের ফলে যারা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবেন, তাদের মধ্যে রয়েছেন তরুণ-তরুণীরা। যাদের অনেকেই ভালো কোনো সুযোগের অভাবে সমাজে পিছিয়ে পড়েন।

‘জব কর্পস’-এর মাধ্যমে প্রশিক্ষণ নিয়ে অনেকেই জীবন পরিবর্তনের সুযোগ পেয়েছেন। যেমন, ক্লোয়ি লসন নামের এক তরুণী, যিনি একসময় সামান্য বেতনে সাবওয়েতে কাজ করতেন, এখন ট্রেনের কন্ডাক্টর হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

যুক্তরাষ্ট্রের এই ঘটনার প্রেক্ষাপটে, বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ কিছু বিষয় উঠে আসে। আমাদের দেশেও তরুণদের কর্মসংস্থান একটি বড় চ্যালেঞ্জ।

কারিগরি শিক্ষার প্রসার এবং দক্ষ জনশক্তি তৈরি করা গেলে, তা দেশের অর্থনীতিকে আরও শক্তিশালী করতে পারে। সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন করে, তরুণদের জন্য কর্মসংস্থানের নতুন সুযোগ তৈরি করা যেতে পারে।

বর্তমানে, বাংলাদেশেও বিভিন্ন কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র রয়েছে। এইসব কেন্দ্রের মাধ্যমে তরুণদের বিভিন্ন ট্রেডে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়, যেমন – ইলেকট্রিশিয়ান, ওয়েল্ডিং, এবং অটোমোবাইল ইত্যাদি।

তবে, এই ধরনের প্রশিক্ষণের মান উন্নয়ন এবং আরও বেশি সংখ্যক তরুণের কাছে তা পৌঁছে দেওয়া জরুরি। এছাড়া, প্রশিক্ষণ শেষে উপযুক্ত কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করাটাও গুরুত্বপূর্ণ।

যুক্তরাষ্ট্রের ‘জব কর্পস’ বন্ধ হওয়ার উপক্রম হওয়ায়, সেখানকার নীতিনির্ধারকেরা যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন, তেমনি বাংলাদেশের নীতিনির্ধারকদেরও এই বিষয়ে সতর্ক হওয়া উচিত।

আমাদের দেশেও যাতে এমন পরিস্থিতি তৈরি না হয়, সেজন্য কারিগরি প্রশিক্ষণ কর্মসূচিগুলোকে আরও শক্তিশালী করতে হবে। তরুণদের জন্য উন্নত প্রশিক্ষণ এবং কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করতে পারলে, তা দেশের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *