পৃথিবী সূর্যের থেকে দূরে, তবুও কেন এত উষ্ণতা?

গ্রীষ্মকাল প্রায় এসেই গেছে, উত্তাপ বাড়ছে ধীরে ধীরে। আমরা যারা উত্তর গোলার্ধে বাস করি, তাদের জন্য গরমের দিনগুলো যেন সূর্যের তেজ আরও বাড়িয়ে দেয়।

তবে এই সময়েই কিন্তু পৃথিবীর কক্ষপথে সূর্যের থেকে সবচেয়ে দূরে অবস্থান করে আমাদের এই গ্রহটি। শুনতে হয়তো একটু অদ্ভুত লাগতে পারে, তাই না?

সবচেয়ে দূরে থেকেও কেন এত গরম? আসুন, এর পেছনের আসল বিজ্ঞানটা জানার চেষ্টা করি।

বৃহস্পতিবার, স্থানীয় সময় বিকেল ৩টা ৫৫ মিনিটে, পৃথিবী তার ‘অ্যাপেলিয়ন’-এ পৌঁছেছিল। অ্যাপেলিয়ন হলো সূর্যের চারদিকে ঘোরার সময় পৃথিবীর সবচেয়ে দূরবর্তী অবস্থান।

এই সময়ে সূর্য থেকে পৃথিবীর দূরত্ব প্রায় ১৫২ মিলিয়ন কিলোমিটারের বেশি থাকে। জানুয়ারীর শুরুতে, যখন আমরা শীত অনুভব করি, তখন পৃথিবী সূর্যের সবচেয়ে কাছে থাকে – ‘পেরিহিলিয়ন’ অবস্থায়, সেই সময়ের চেয়ে প্রায় ৪৮ লক্ষ কিলোমিটার বেশি দূরে।

সাধারণভাবে, আমরা মনে করি সূর্যের কাছাকাছি থাকলে গরম লাগে, আর দূরে থাকলে ঠান্ডা। কিন্তু ঋতু পরিবর্তনের আসল কারণ আসলে পৃথিবীর সূর্যের থেকে দূরত্ব নয়, বরং এর অক্ষের সামান্য হেলানো অবস্থা।

পৃথিবী তার নিজের অক্ষের উপর ২৩.৫ ডিগ্রি কোণে হেলে অবস্থান করে। এই কারণে বছরের বিভিন্ন সময়ে পৃথিবীর বিভিন্ন অংশে সূর্যের আলো সরাসরি বা তির্যকভাবে পরে।

জুলাই মাসে, যখন উত্তর গোলার্ধ সূর্যের দিকে বেশি ঝুঁকে থাকে, তখন দিনের আলো বেশি সময় ধরে পাওয়া যায় এবং সূর্যের আলোও তুলনামূলকভাবে খাড়াভাবে আসে। ফলে এই অঞ্চলে গ্রীষ্মকালের আবহাওয়া সৃষ্টি হয়।

অন্যদিকে, পৃথিবীর কক্ষপথ ডিম্বাকৃতির হলেও, সূর্যের থেকে দূরত্বের এই সামান্য পরিবর্তন তাপমাত্রার উপর খুব বেশি প্রভাব ফেলে না।

সূর্যের আলো যখন আমাদের গ্রহে আসে, তখন তা চারদিকে ছড়িয়ে পরে, ফলে সামান্য দূরত্ব বাড়লেও সৌরশক্তির পরিমাণে খুব বেশি হেরফের হয় না।

উদাহরণস্বরূপ, বাংলাদেশের কথা ধরা যাক। গ্রীষ্মকালে, যখন সূর্যের আলো সরাসরি পরে, তখন দিনের তাপমাত্রা অনেক বেড়ে যায়।

আবার শীতকালে, যখন সূর্যের আলো কিছুটা বাঁকা হয়ে আসে, তখন দিনের বেলাতেও ঠান্ডা অনুভূত হয়। এই তাপমাত্রার তারতম্যের মূল কারণ হলো পৃথিবীর এই হেলে থাকা অক্ষ।

সুতরাং, গ্রীষ্মকালে গরম অনুভব করার কারণ হলো সূর্যের থেকে আমাদের দূরত্ব নয়, বরং সূর্যের দিকে পৃথিবীর ঝুঁকে থাকা। সূর্যের আলো আমাদের উপর কতটা সরাসরি পড়ছে, সেটাই আসল কথা।

তথ্য সূত্র: CNN

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *