টেক্সাসে ভয়াবহ বন্যা: মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৪৩, কর্মকর্তাদের প্রস্তুতি নিয়ে উঠছে প্রশ্ন।
যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস অঙ্গরাজ্যে ভয়াবহ বন্যায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৩ জনে। নিহতদের মধ্যে একটি খ্রিস্টান সামার ক্যাম্পের ২৭ জন কিশোরীও রয়েছে।
গত ৪ঠা জুলাইয়ের ছুটিতে গুয়াডেলুপ নদীর আশেপাশে এই বন্যা হয়। ঘটনার পর স্থানীয় কর্মকর্তাদের প্রস্তুতি এবং সতর্কতা ব্যবস্থা নিয়ে তীব্র সমালোচনা শুরু হয়েছে।
কয়েক ঘণ্টার বৃষ্টিতে টেক্সাসের পার্বত্য অঞ্চলে শুক্রবার ভোরে এই ভয়াবহ বন্যা শুরু হয়। বন্যায় সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কেরি কাউন্টি এলাকা।
স্থানীয় কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বন্যার কারণে এখনো বহু মানুষ নিখোঁজ রয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বন্যার পূর্বাভাস পাওয়ার পরও অনেককে সরিয়ে নিতে দেরি হয়েছে। ন্যাশনাল ওয়েদার সার্ভিস (National Weather Service) শুক্রবার ভোররাতের দিকে জরুরি ফ্ল্যাশ ফ্লাড সতর্কতা জারি করে, যা ছিল আসন্ন বিপদ সম্পর্কে জানানোর একটি বিরল প্রচেষ্টা।
বন্যার ভয়াবহতা বর্ণনা করতে গিয়ে স্থানীয় বাসিন্দা ক্রিস্টোফার ফ্লাওয়ার্স জানান, বন্যার সময় তিনি একটি বন্ধুর বাড়িতে ছিলেন। তিনি যখন জেগে ওঠেন, তখন দেখেন তার পায়ের গোড়ালি পর্যন্ত পানি।
চারপাশে বিদ্যুতের তার ছিঁড়ে আসবাবপত্রের ওপর পড়ছিল। পরে পরিবারের ৯ জন সদস্যকে নিয়ে তিনি বাড়ির অ্যাটিকে আশ্রয় নেন। তিনি আরও বলেন, “টর্নেডোর মতো কোনো সতর্কীকরণ ব্যবস্থা থাকলে হয়তো মানুষজন দ্রুত পালাতে পারতো।
তবে, স্থানীয় কর্মকর্তারা বলছেন, তারা এই ধরনের বৃষ্টির পূর্বাভাস পাননি। কেরি কাউন্টির বিচারক রবার্ট কেলি জানান, “আমরা জানি এখানে বৃষ্টি হয়, নদীতে জল বাড়ে। কিন্তু এমনটা আগে কখনো দেখিনি।
এদিকে, টেক্সাসের গভর্নর গ্রেগ অ্যাবট জানিয়েছেন, উদ্ধার ও ত্রাণ তৎপরতা চালিয়ে ৮৫০ জনের বেশি মানুষকে উদ্ধার করা হয়েছে। হেলিকপ্টারের মাধ্যমেও অনেককে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের স্বরাষ্ট্র নিরাপত্তা বিষয়ক মন্ত্রী ক্রিস্টি নোয়েম জানিয়েছেন, আবহাওয়াবিদরা ঠিক কতটা বৃষ্টি হবে, তা আগে থেকে অনুমান করতে পারেননি। তবে, ভবিষ্যতে সতর্কবার্তা দেওয়ার জন্য ন্যাশনাল ওয়েদার সার্ভিসের প্রযুক্তি উন্নত করার ওপর জোর দেওয়া হচ্ছে।
আবহাওয়াবিদ জেসন রানিয়েন জানিয়েছেন, ওই সময় নিউ ব্রাউনফেলসের ন্যাশনাল ওয়েদার সার্ভিস অফিসে অতিরিক্ত কর্মী কাজ করছিলেন। সাধারণত যেখানে দুইজন পূর্বাভাস কর্মী থাকেন, সেখানে পাঁচজন কাজ করছিলেন।
আবহাওয়ার পূর্বাভাস প্রদানকারী একটি বেসরকারি সংস্থা AccuWeather-এর প্রধান আবহাওয়াবিদ জোনাথন পোর্টার বলেছেন, “বৃষ্টিপাতের পরিমাণ যা-ই হোক না কেন, ফ্ল্যাশ ফ্লাড সতর্কতা পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই মানুষ, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এবং সরকারের ব্যবস্থা নেওয়া উচিত ছিল।
স্থানীয় কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, প্রায় ৬-৭ বছর আগে নদীর পাশে একটি বন্যা সতর্কীকরণ ব্যবস্থা তৈরির পরিকল্পনা করা হয়েছিল। কিন্তু অতিরিক্ত খরচের কারণে সেটি বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি।
এই ঘটনার প্রেক্ষাপটে, কর্মকর্তাদের প্রস্তুতি এবং সতর্কতা ব্যবস্থা নিয়ে ওঠা প্রশ্নগুলোর দ্রুত সমাধান করা প্রয়োজন। একইসঙ্গে, ভবিষ্যতে এমন প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় আরও উন্নত প্রযুক্তি এবং সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণের ওপর গুরুত্ব দিতে হবে।
তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস