বিদেশি নেতাদের হুঁশিয়ারি! ট্রাম্পের ওভাল অফিসে এখন নতুন খেলা?

ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে হোয়াইট হাউজে বিদেশি নেতাদের সঙ্গে বৈঠকের ধরনে এসেছে পরিবর্তন

যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদের সময় হোয়াইট হাউজে বিদেশি নেতাদের সঙ্গে বৈঠকের ধরন নিয়ে নতুন আলোচনা শুরু হয়েছে। এই বৈঠকগুলোতে এখন আর দ্বিপাক্ষিক আলোচনার চিরাচরিত কূটনৈতিক শিষ্টাচার বজায় থাকছে না।

বরং অনেক ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে ভিন্ন চিত্র। বিষয়টিকে কূটনৈতিক অঙ্গনে উদ্বেগের সঙ্গে দেখা হচ্ছে।

বৈঠকগুলোতে ট্রাম্পের কিছু সিদ্ধান্তের কারণে অনেক বিদেশি নেতাকে এখন ভিন্ন প্রস্তুতি নিয়ে আসতে হচ্ছে। কারণ, ট্রাম্পের সময়ে আলোচনার ধরন অনেকটাই পাল্টে গেছে।

কারো কারো মতে, আলোচনার চেয়ে যেন এটি এখন এক ধরনের ‘শো’-তে পরিণত হয়েছে। যেখানে ট্রাম্প নিজেকে প্রভাবশালী নেতা হিসেবে জাহির করতে চান।

হোয়াইট হাউজে বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপ্রধানদের সঙ্গে আলোচনার সময় ট্রাম্পের ভিন্ন আচরণ এর আগে বহুবার দেখা গেছে। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে বৈঠকের সময় ট্রাম্পের ভর্ৎসনামূলক আচরণ ছিল বেশ সমালোচিত।

এমনকি তিনি ইউক্রেনকে সহায়তা করা বন্ধ করে দেওয়ার হুমকিও দিয়েছিলেন। এমন পরিস্থিতিতে অনেক কূটনীতিক মনে করছেন, এখন থেকে হোয়াইট হাউজের বৈঠকগুলোতে ভিন্ন ধরনের প্রস্তুতি প্রয়োজন।

কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, এসব বৈঠকে নেতাদের এখন মানসিক প্রস্তুতি নিয়ে আসতে হবে, যেন তারা ‘কূটনৈতিক জুজুৎসু’র জন্য প্রস্তুত থাকতে পারেন।

ট্রাম্পের সমালোচনামূলক মন্তব্যের জবাব দেওয়ার মতো মানসিকতা রাখতে হবে। এমনকি অনেকে মনে করেন, এক্ষেত্রে উত্তর কোরিয়ার নেতাদের মতো স্তুতি করারও প্রয়োজন হতে পারে।

সাবেক ফরাসি রাষ্ট্রদূত জেরার্ড অ্যারোডের মতে, ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠকে কখনোই প্রকাশ্যে দ্বিমত পোষণ করা উচিত নয়। কারণ, এতে তিনি অপমানিত বোধ করেন।

আগামী সোমবার ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর হোয়াইট হাউস সফরের কথা রয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, তিনিও সম্ভবত কোনো ধরনের বিতর্কের ঝুঁকি এড়াতে চাইছেন।

কারণ, এর আগে ট্রাম্প গাজায় যুদ্ধবিরতির প্রয়োজনীয়তার বিষয়ে নেতানিয়াহুর সঙ্গে আলোচনা করবেন বলে জানিয়েছিলেন।

বিশ্লেষকদের মতে, ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদের তুলনায় দ্বিতীয় মেয়াদের কার্যক্রম আরও বেশি সুস্পষ্ট এবং লেনদেন-নির্ভর। সাবেক অস্ট্রেলীয় রাষ্ট্রদূত জো হকি মনে করেন, ট্রাম্প এখন অনেক বেশি শক্তিশালী একজন দর কষাকষিকারক।

জানুয়ারির পর থেকে মিত্র ও প্রতিদ্বন্দ্বী উভয় দেশকেই বাণিজ্য সুবিধা পাওয়ার জন্য নজিরবিহীন শুল্ক এবং ট্রাম্পের মন জুগিয়ে চলতে হয়েছে।

লিথুয়ানিয়ার সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী গ্যাব্রিয়েলিয়াস ল্যান্ডসবার্গিস মনে করেন, বিদেশি নেতাদের সঙ্গে বৈঠকের মাধ্যমে ট্রাম্প নিজেকে একজন প্রভাবশালী নেতা হিসেবে তুলে ধরেন।

হোয়াইট হাউজের ওভাল অফিসে ট্রাম্পের রুচি ও পছন্দের ছাপ স্পষ্ট। তার অফিসটি যেন এক ধরনের প্রদর্শনী কেন্দ্র। এছাড়া, ট্রাম্পের হোয়াইট হাউস অতীতের প্রেসিডেন্টদের আমলের মতো নয়।

এটি অনেকটা রাজপরিবার বা রাজার দরবারের মতো কাজ করে। কোনো নেতার যদি ট্রাম্প বা তার পরিবারের ঘনিষ্ঠদের সঙ্গে ব্যক্তিগত যোগাযোগ না থাকে, তবে তার অনুরোধগুলো খুব একটা গুরুত্ব পায় না।

সাবেক মার্কিন কূটনীতিক রুফাস গিবোর্ড মনে করেন, অতীতের সরকারগুলোতে হোয়াইট হাউসের বৈঠকগুলোতে কিছু নিয়ম-কানুন ছিল। এসব বৈঠককে বিদেশি নেতাদের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সাক্ষাৎ এবং নিজেদের কথা বলার একটি অনন্য সুযোগ হিসেবে দেখা হতো।

বৈঠকে নেতাদের প্রতি ট্রাম্পের অপ্রত্যাশিত আচরণ অনেক সময় দেখা যায়। তাই কর্মকর্তাদের পরামর্শ হলো, তারা যেন ট্রাম্পকে খুশি করার চেষ্টা না করেন।

কারণ, এটি স্বল্প সময়ের জন্য কাজ করতে পারে, কিন্তু দীর্ঘমেয়াদে ফলপ্রসূ হয় না।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, ট্রাম্পের সঙ্গে ওভাল অফিসের বৈঠকে ঝুঁকি থাকলেও এর কিছু সুবিধা রয়েছে। কারণ, এর মাধ্যমে ছোট দেশগুলো তাদের গুরুত্বপূর্ণ বার্তা বা উদ্বেগের বিষয়গুলো সরাসরি ট্রাম্পের কাছে পৌঁছে দিতে পারে।

সাবেক কূটনীতিক অ্যারোডের মতে, ট্রাম্পের সঙ্গে আলোচনায় আসার সময় বিশ্বের ক্ষমতাধর এই ব্যক্তির সঙ্গে একজন ‘অপ্রত্যাশিত ও খেয়ালি শিশুর’ মতো আচরণ করতে হয়।

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *