টিকটকের ভবিষ্যৎ: ট্রাম্পের ডিলের ঘোষণা, চীনের নীরবতা!

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে টিকটকের ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চয়তা: চীন-যুক্তরাষ্ট্র উত্তেজনার মাঝে বাংলাদেশের জন্য এর তাৎপর্য।

বর্তমান সময়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারকারীর সংখ্যা বাড়ছে, সেই সাথে বাড়ছে এই মাধ্যমগুলোর নিরাপত্তা ও নিয়ন্ত্রণ বিষয়ক আলোচনা। সম্প্রতি, জনপ্রিয় শর্ট-ভিডিও প্ল্যাটফর্ম টিকটকের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে কার্যক্রম চালানো নিয়ে জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে, যা বাংলাদেশ সহ সারা বিশ্বের প্রযুক্তি প্রেমীদের মনোযোগ আকর্ষণ করেছে।

যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি দাবি করেছেন যে, টিকটকের আমেরিকান মালিকানা নিয়ে চীনের সাথে একটি ‘চুক্তি’ প্রায় চূড়ান্ত হয়ে গেছে। যদিও, চীনা কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে এখন পর্যন্ত বিষয়টির কোনো নিশ্চিত প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।

বাইটড্যান্স, টিকটকের মূল চীনা কোম্পানি, তাদের মার্কিন কার্যক্রম বন্ধ করে দিতে পারে অথবা আগামী ১৭ সেপ্টেম্বরের মধ্যে কোনো আমেরিকান মালিকের কাছে বিক্রি করতে পারে।

যুক্তরাষ্ট্র সরকার টিকটকের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। তাদের মতে, এই প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে ব্যবহারকারীর তথ্য চীনের হাতে যেতে পারে, যা জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি স্বরূপ। গত বছর, তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন একটি আইন স্বাক্ষর করেন, যেখানে বাইটড্যান্সকে তাদের অ্যাপটি একজন আমেরিকান মালিকের কাছে বিক্রি করতে বলা হয়।

যদিও, ট্রাম্প একাধিকবার এই আইনের প্রয়োগের সময়সীমা পিছিয়ে দিয়েছেন।

চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মাও নিং, টিকটক সংক্রান্ত সর্বশেষ আলোচনা সম্পর্কে জানতে চাইলে কোনো বিস্তারিত তথ্য দেননি। তবে, চীন এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি আহ্বান জানিয়েছিল, চীনা কোম্পানিগুলোর জন্য একটি “মুক্ত, ন্যায্য, এবং বৈষম্যহীন” ব্যবসার পরিবেশ তৈরি করতে।

তারা আরও জানায়, ব্যবসা অধিগ্রহণের বিষয়টি “বাজার নীতির সঙ্গে সঙ্গতি রেখে কোম্পানিগুলোর স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত।”

চীন সরকার এখনো পর্যন্ত এই বাধ্যতামূলক বিক্রির বিষয়ে তাদের সম্মতি জানায়নি। চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্র ২০২৩ সালের শুরুর দিকে জানান, টিকটকের জোরপূর্বক বিক্রির বিরোধিতা করবে চীন।

তাদের মতে, এই ধরনের বিক্রি “প্রযুক্তি রপ্তানির” শামিল, যার জন্য চীনা সরকারের অনুমোদন প্রয়োজন। টিকটকের সাফল্যের পেছনে এর “অ্যালগরিদম”-এর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে বলে মনে করা হয়।

যুক্তরাষ্ট্রে টিকটকের ব্যবহারকারীর সংখ্যা অনেক। কোম্পানিটির তথ্য অনুযায়ী, এখানে প্রতি মাসে প্রায় ১৭ কোটির বেশি সক্রিয় ব্যবহারকারী রয়েছে। পিউ রিসার্চ সেন্টারের এক গবেষণা অনুসারে, ৬০ শতাংশের বেশি মার্কিন কিশোর এবং এক তৃতীয়াংশ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ সংবাদ, বিনোদন এবং এমনকি জীবিকা নির্বাহের জন্য এই প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে।

ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি সাংবাদিকদের জানান, টিকটক বিক্রির ব্যাপারে তাদের একটি চুক্তি প্রায় চূড়ান্ত হয়ে গেছে। তবে, তিনি চীন এই চুক্তিতে রাজি হবে কিনা, সে বিষয়ে নিশ্চিত নন।

তিনি আরও বলেন, সম্ভবত সোমবার বা মঙ্গলবার তিনি চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং বা তার প্রতিনিধিদের সাথে এ বিষয়ে আলোচনা শুরু করবেন।

এদিকে, টিকটক তাদের মার্কিন ব্যবহারকারীদের জন্য একটি নতুন অ্যাপ তৈরি করছে। জানা গেছে, সেপ্টেম্বরের সময়সীমার আগেই এই অ্যাপ চালু করা হতে পারে। পুরনো অ্যাপটি আগামী মার্চ মাস পর্যন্ত বন্ধ করে দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে।

এই ঘটনার প্রেক্ষাপটে, বাংলাদেশের জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় রয়েছে। টিকটকের মতো জনপ্রিয় একটি প্ল্যাটফর্ম যদি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নিষিদ্ধ হয়, তবে এর প্রভাব বিশ্বজুড়ে অনুভূত হবে। বাংলাদেশের ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মগুলোর নিরাপত্তা ও নিয়ন্ত্রণ নিয়েও নতুন করে আলোচনা শুরু হতে পারে।

এছাড়া, বিদেশি মালিকানাধীন অন্যান্য অ্যাপগুলোর ক্ষেত্রেও একই ধরনের চাপ আসতে পারে কিনা, সেই সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যায় না।

টিকটকের ঘটনা প্রমাণ করে, ডিজিটাল বিশ্বে জাতীয় নিরাপত্তা এবং ভূ-রাজনৈতিক সম্পর্ক কত গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশের নীতিনির্ধারকদেরও এই বিষয়গুলো মাথায় রেখে একটি সুসংহত ডিজিটাল নীতি তৈরি করতে হবে।

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *