মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতি নিয়ে যখন আলোচনা হয়, তখন একটি নাম বিশেষভাবে উঠে আসে – জেডি ভেন্স। ডোনাল্ড ট্রাম্পের শাসনামলে ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে তিনি শুধু একজন সহযোগী ছিলেন না, বরং পররাষ্ট্রনীতির গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও তা জনগণের কাছে তুলে ধরার ক্ষেত্রে প্রধান ভূমিকা পালন করেছেন।
বিশেষ করে ইরানের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক কেমন হবে, সেই প্রশ্নে তার অবস্থান বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
২০২০ সালের জানুয়ারিতে ইরানের শীর্ষ সামরিক কমান্ডার কাসেম সোলেইমানিকে হত্যার নির্দেশ দেন তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। সেই সময়ে জেডি ভেন্স এই পদক্ষেপের বিষয়ে কিছুটা সন্দিহান ছিলেন।
তিনি মনে করতেন, এর ফলে মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘমেয়াদি জড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে, যা চীনের সামরিক ও অর্থনৈতিক উত্থানকে আরও বেশি সুযোগ করে দেবে।
কিন্তু সময়ের সাথে সাথে ভেন্সের অবস্থানে পরিবর্তন আসে।
বর্তমানে তিনি ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি ধ্বংস করার লক্ষ্যে নেওয়া ট্রাম্প প্রশাসনের সিদ্ধান্তের একজন জোরালো সমর্থক।
গত মাসে ইরানের তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় হামলার সিদ্ধান্তের সময় তিনি সরাসরি সেই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।
এই পরিবর্তনের কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ভেন্স মনে করেন, ইরানের পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করা যেকোনো মূল্যে প্রতিহত করতে হবে।
তাঁর মতে, সীমিত সামরিক পদক্ষেপের মাধ্যমে এই লক্ষ্য অর্জন করা সম্ভব, যা দীর্ঘমেয়াদি কোনো সংঘাতের দিকে মোড় নেবে না।
হোয়াইট হাউসের কর্মকর্তাদের মতে, ট্রাম্প প্রায়ই বিভিন্ন বিষয়ে পরামর্শের জন্য ভেন্সের মতামতকে গুরুত্ব দেন।
কারণ, ভেন্স সবসময় ট্রাম্পকে একটি নিরপেক্ষ মূল্যায়ন দিতে প্রস্তুত থাকেন।
পররাষ্ট্রনীতি বিষয়ে ভেন্সের এই ভূমিকা ক্রমশ স্পষ্ট হচ্ছে।
সম্প্রতি, তিনি ট্রাম্পের বিশাল কর ও ব্যয় সংকোচন প্যাকেজের পক্ষে সমর্থন আদায়ের জন্য সিনেটে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, ভেন্সের এই পরিবর্তন ‘ট্রাম্প মতবাদ’-এরই প্রতিফলন।
এই মতবাদ অনুযায়ী, প্রথমে যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থ চিহ্নিত করতে হবে, এরপর কূটনৈতিক উপায়ে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করতে হবে।
কূটনৈতিক সমাধান সম্ভব না হলে, সামরিক শক্তি ব্যবহার করে দ্রুত সমস্যার সমাধান করতে হবে এবং এরপর সেই অঞ্চল থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।
ভেন্স মনে করেন, ইরানের পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি বন্ধ করতে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রয়োজনে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে।
তবে, ইসরায়েলের সঙ্গে ইরানের সংঘাতের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থ আলাদা হতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রের জন্য ইরানের সঙ্গে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়া একটি বড় ভুল হবে, যা দেশের জন্য বিশাল ক্ষতির কারণ হবে।
তবে, ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে উদ্বেগের কারণ এখনো বিদ্যমান।
জাতিসংঘের পরমাণু পর্যবেক্ষণ সংস্থা, আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থা (IAEA) জানিয়েছে, তেহরান কয়েক মাসের মধ্যে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ পুনরায় শুরু করতে পারে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ভবিষ্যতে ইরানকে কেন্দ্র করে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক পদক্ষেপের বিষয়ে নতুন করে সিদ্ধান্ত নিতে হতে পারে।
জেডি ভেন্সের এই পররাষ্ট্রনৈতিক অবস্থান এবং ‘ট্রাম্প মতবাদ’-এর প্রতি তার সমর্থন, যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক সম্পর্কে একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচন করতে পারে।
তবে, এর প্রভাব কেমন হবে, তা সময়ই বলবে।
তথ্যসূত্র: সিএনএন