শিরোনাম: দুর্যোগ থেকে অর্থনীতির মন্দা, বাইডেনের কাঁধে দায় চাপানোর প্রবণতা ট্রাম্পের
যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ঘটনার জন্য বর্তমান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে দায়ী করে আসছেন। টেক্সাসের ভয়াবহ বন্যা থেকে শুরু করে অর্থনীতির খারাপ অবস্থা—এমনকি বিতর্কিত কিছু সিদ্ধান্তের জন্যও তিনি বাইডেনকে কাঠগড়ায় তুলেছেন।
সম্প্রতি এক প্রতিবেদনে এই বিষয়টি তুলে ধরা হয়েছে।
হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলিন লেভিট সোমবার এক বিবৃতিতে প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় সরকারের ওপর দ্রুত দোষ চাপানোকে অনুচিত বলে মন্তব্য করেন।
টেক্সাসের বন্যা পরিস্থিতির উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, “অনেক ডেমোক্র্যাট নির্বাচিত কর্মকর্তা এটিকে রাজনৈতিক খেলায় পরিণত করতে চাইছে, যা একেবারেই ঠিক নয়।”
তিনি আরও যোগ করেন, “আমি মনে করি, এই ধরনের মন্তব্যগুলো অত্যন্ত ঘৃণ্য এবং নিন্দনীয়, বিশেষ করে যখন এত আমেরিকান তাঁদের সন্তানদের হারিয়ে শোকাহত।”
তবে লেভিটের এই মন্তব্যের ২৪ ঘণ্টারও কম সময় আগে তাঁর বস, অর্থাৎ ডোনাল্ড ট্রাম্প, বর্তমান সরকারের পরিবর্তে অতীতের দিকে আঙুল তুলেছিলেন।
ট্রাম্পের অভিযোগ ছিল, টেক্সাসের বন্যার জন্য বাইডেন প্রশাসন দায়ী। যদিও পরে তিনি তাঁর বক্তব্য স্পষ্ট করে বলেন, এই বন্যার ঐতিহাসিক গুরুত্ব রয়েছে।
তবে অনেকেই মনে করেন, ট্রাম্প সম্ভবত কোনো সরকারি ব্যর্থতার দায় তাঁর পূর্বসূরীর ওপর চাপাতে চেয়েছেন।
বিভিন্ন সময়ে ট্রাম্পের এমন অভিযোগের প্রবণতা দেখা গেছে। কোনো খারাপ ঘটনা ঘটলেই তিনি এর জন্য বাইডেনকে দায়ী করেছেন।
এমনকি যখন কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি, তখনও তিনি এমনটা করেছেন।
উদাহরণস্বরূপ, গত জানুয়ারিতে ওয়াশিংটন ডিসির কাছে পোটোম্যাক নদীতে একটি দুর্ঘটনায় ৬৭ জন নিহত হয়েছিলেন।
ট্রাম্প এর জন্য বাইডেন প্রশাসন এবং ডাইভারসিটি, ইক্যুইটি অ্যান্ড ইনক্লুশন (ডিইআই) নীতিকে দায়ী করেন।
অথচ এই ঘটনার সঙ্গে তাদের কোনো সম্পর্ক ছিল না।
মে মাসে বিমান দুর্ঘটনা এবং কারিগরি ত্রুটির কারণে বিমান ট্রাফিক কন্ট্রোলারদের সমস্যা হয়েছিল। সেই সময় ট্রাম্প মন্তব্য করেন, “বাইডেন চার বছরে কিছুই করেননি।”
গত সপ্তাহেও ট্রাম্প বলেছিলেন, বিমান ট্রাফিক কন্ট্রোলরদের ভালো সরঞ্জাম থাকার কথা ছিল, কিন্তু বাইডেন ক্ষমতায় আসার পর সেই অর্ডার বাতিল করেন।
যদিও এই মন্তব্যের কোনো ভিত্তি পাওয়া যায়নি। এমনকি, ট্রাম্পের এমন প্রস্তাবও ছিল, যা বাস্তবায়ন হয়নি।
গত মাসে কলোরাডোর বোল্ডারে ইহুদি বিদ্বেষী একটি বোমা হামলায় বহু মানুষ আহত হন এবং পরে একজনের মৃত্যু হয়।
এর পরদিনই ট্রাম্প বাইডেনের ‘অযৌক্তিক মুক্ত সীমান্ত নীতি’কে দায়ী করেন।
তবে ঘটনার তদন্তে জানা যায়, হামলাকারী মিশরের নাগরিক হলেও, তিনি অবৈধভাবে সীমান্ত পার হননি।
তিনি বাইডেন প্রশাসনের সময়ে পর্যটন ভিসায় এসেছিলেন এবং আশ্রয় চেয়ে আবেদন করেছিলেন।
গাজায় যুদ্ধবিরতি ভেঙে যাওয়ার ঘটনাতেও ট্রাম্প বাইডেনকে দায়ী করেন।
জাতিসংঘের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, যুদ্ধবিরতি ভেঙে যাওয়ার পর গাজায় ৩০০ জনের বেশি শিশু নিহত এবং ৬০০ জনের বেশি আহত হয়েছে।
এই প্রসঙ্গে ট্রাম্প হামাস বা ইসরায়েলের কথা উল্লেখ না করে বাইডেনকে দায়ী করেন।
তিনি বলেন, “এজন্য বাইডেনই দায়ী, কারণ তিনি ইরানের ধনী হওয়ার সুযোগ করে দিয়েছেন।”
ইউক্রেন ও রাশিয়ার মধ্যে যুদ্ধ বন্ধ করতে না পারার জন্যও ট্রাম্প বাইডেনকে দায়ী করেছেন।
তিনি প্রায়ই এই যুদ্ধকে ‘বাইডেনের যুদ্ধ’ বলে উল্লেখ করেন।
অর্থনৈতিক ক্ষেত্রেও ট্রাম্প বাইডেনকে দায়ী করতে পিছপা হননি।
যখন শেয়ার বাজারে দরপতন হয়, কিংবা কর্মসংস্থান কমে যায়, তখনও তিনি বাইডেনের নীতির সমালোচনা করেন।
এমনকি ডিমের দাম বাড়লেও তিনি বাইডেনকে দোষারোপ করেন।
তবে ট্রাম্পের এমন অভিযোগ সব সময় সত্যতা প্রমাণ করতে পারেনি।
উদাহরণস্বরূপ, ডিমের দাম বাড়ার আসল কারণ ছিল বার্ড ফ্লু।
কিন্তু ট্রাম্প এর জন্য বাইডেনকে দায়ী করেন।
এছাড়াও, ২০১৯ সালে সামরিক কর্মকর্তাদের মধ্যে গোপন তথ্য আদান-প্রদানের ঘটনা ‘সিগন্যাল গেট’-এর জন্য ট্রাম্প বাইডেনকে দায়ী করেন।
তিনি অভিযোগ করেন, বাইডেন ওই সময়ে একটি সামরিক হামলার নির্দেশ দেননি, যার কারণে অনেক ক্ষতি হয়েছে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন