টেক্সাসে ভয়াবহ বন্যায় উদ্ধারকাজে নেমেছেন স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবকরা, কর্তৃপক্ষের সতর্কবার্তা সত্ত্বেও।
যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস অঙ্গরাজ্যে সম্প্রতি বয়ে যাওয়া ভয়াবহ বন্যায় বিপর্যস্ত এলাকাগুলোতে উদ্ধারকাজে নেমেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। ৪ঠা জুলাইয়ের ছুটিতে হওয়া এই প্রাকৃতিক দুর্যোগে মৃতের সংখ্যা একশ ছাড়িয়েছে।
ভয়াবহ এই পরিস্থিতিতে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ উদ্ধারকাজ ত্বরান্বিত করতে চেষ্টা চালাচ্ছেন, কিন্তু একইসাথে তারা সাধারণ স্বেচ্ছাসেবকদের কাজে বাধা দিচ্ছেন।
কর্তৃপক্ষের মতে, উদ্ধারকাজ একটি সুসংগঠিত প্রক্রিয়া, যেখানে প্রশিক্ষিত কর্মীর প্রয়োজন। তাদের আশঙ্কা, অসংগঠিত স্বেচ্ছাসেবকদের কারণে উদ্ধারকাজ ব্যাহত হতে পারে এবং তাদের নিরাপত্তা নিয়েও ঝুঁকি তৈরি হতে পারে।
টেক্সাসের পার্বত্য অঞ্চলে বয়ে যাওয়া এই বন্যায় গুয়াদালেপ নদীর তীরবর্তী এলাকা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পানির স্রোত এতটাই শক্তিশালী ছিল যে, এক ঘণ্টার মধ্যে একটি দ্বিতল বাড়ির সমান উচ্চতায় জল বেড়ে যায়।
বন্যায় গাছপালা উপড়ে গেছে, রাস্তাঘাট ভেঙে গেছে এবং অনেক ঘরবাড়ি জলের তোড়ে ভেসে গেছে।
এই পরিস্থিতিতে স্থানীয় মানুষজন তাদের সাধ্যমতো উদ্ধারকাজে এগিয়ে এসেছেন। অনেকেই আহতদের উদ্ধারে সহায়তা করছেন, আবার অনেকে খাবার ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিস সরবরাহ করছেন।
স্থানীয় বাসিন্দা জাস্টিন রুবিও জানিয়েছেন, তিনি ঘরে বসে থাকতে পারেননি, কারণ এই দুর্যোগে মানুষের পাশে দাঁড়ানোটা জরুরি।
তিনি বলেন, “এই দৃশ্যগুলো হৃদয়বিদারক। আমি চাইনি ঘরে বসে থাকতে, তাই সাহায্য করতে এসেছি।”
তবে, কর্তৃপক্ষের উদ্বেগের কারণ হলো, স্বেচ্ছাসেবকদের এই স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ অনেক সময় সমন্বিত উদ্ধারকাজের পথে বাধা সৃষ্টি করতে পারে।
কার কাউন্টির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, স্বেচ্ছাসেবকদের জন্য নির্দিষ্ট কিছু স্থান চিহ্নিত করা হয়েছে এবং তাদের সেখানে কাজ করতে বলা হয়েছে।
এছাড়া, উদ্ধারকর্মীদের কাজে সহযোগিতা করার জন্য স্থানীয় ‘সলভেশন আর্মি’র সঙ্গে যোগাযোগ করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
কারভিলের মেয়র জো হেরিঙ্গ জুনিয়র স্বেচ্ছাসেবকদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, “আমাদের সুসংগঠিত ও নিবেদিত স্বেচ্ছাসেবক দরকার, এলোমেলোভাবে আসা মানুষের প্রয়োজন নেই।”
উদ্ধারকর্মীরা জানিয়েছেন, বিশাল এলাকা জুড়ে তল্লাশি অভিযান চালানো হচ্ছে। প্রায় ১০০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে ১৯টি স্থানীয় ও রাজ্য সংস্থার কর্মীরা ড্রোন, কুকুর এবং হেলিকপ্টারের মাধ্যমে অনুসন্ধান চালাচ্ছেন।
প্রতিটি এলাকার অনুসন্ধানে এক থেকে তিন ঘণ্টা পর্যন্ত সময় লাগছে।
উদ্ধারকর্মীদের প্রধান লক্ষ্য হলো, কোনো জীবিত ব্যক্তিকে দ্রুত খুঁজে বের করা এবং মৃতের সংখ্যা কমানো।
অন্যদিকে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কিছু ভুল তথ্য ছড়ানোর কারণে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়েছে।
একজন ব্যক্তি ফেসবুকে দুটি মেয়েকে জীবিত উদ্ধারের মিথ্যা খবর দিয়েছিলেন, যা পরে ভুয়া প্রমাণিত হয়।
স্থানীয় জনপ্রতিনিধি চিপ রয় জনগণকে সতর্ক করে বলেছেন, “ভুল খবর পরিবারের জন্য কষ্টের কারণ হয় এবং আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাজে ব্যাঘাত ঘটায়।”
দুর্যোগের পর স্বেচ্ছাসেবকদের এই স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ টেক্সাসের মানুষের একতা ও সহানুভূতির প্রমাণ। স্থানীয়রা সবসময়ই বিপদের সময় একে অপরের পাশে এসে দাঁড়ায়।
উদ্ধারকর্মীরা জানিয়েছেন, তারা ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর প্রতি সহানুভূতিশীল এবং সবার সহযোগিতায় পরিস্থিতি মোকাবিলা করার চেষ্টা করছেন।
তথ্যসূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস