লস অ্যাঞ্জেলেসের একটি পার্কে মার্কিন সামরিক বাহিনী ও ফেডারেল এজেন্টের উপস্থিতিতে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। স্থানীয় কর্মকর্তাদের মতে, এই ধরনের সেনা সমাবেশ মূলত অভিবাসী-প্রধান একটি জনবহুল এলাকার বাসিন্দাদের মধ্যে ভীতি সঞ্চারের উদ্দেশ্যে করা হয়েছে। খবর পাওয়ার সাথে সাথেই এলাকার বাসিন্দাদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পরে।
সোমবার সকালে প্রায় নব্বই জন ন্যাশনাল গার্ড সেনা এবং কয়েক ডজন ফেডারেল অফিসার ম্যাকআর্থার পার্কে প্রবেশ করে।
পার্কটিতে সৈন্যদের উপস্থিতি নিয়ে স্থানীয় মেয়র এবং গভর্নর তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। লস অ্যাঞ্জেলেসের মেয়র, কারেন বাস, একে একটি রাজনৈতিক চাল হিসেবে অভিহিত করেছেন। তিনি বলেন, এই ধরনের পদক্ষেপ অভিবাসী সম্প্রদায়কে ভয় দেখানোর উদ্দেশ্যে নেওয়া হয়েছে।
ক্যালিফোর্নিয়ার গভর্নর গ্যাভিন নিউসামও একই সুরে কথা বলেছেন। তিনি একে “ভয় দেখানোর কৌশল” হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
ম্যাকআর্থার পার্ক, যা একসময় “পশ্চিম উপকূলের এলিস আইল্যান্ড” নামে পরিচিত ছিল, বহু বছর ধরে একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান হিসেবে পরিচিত। এটি মেক্সিকো এবং মধ্য আমেরিকা থেকে আসা অভিবাসীদের একটি প্রধান আবাসস্থল। এখানকার বাসিন্দারা বিভিন্ন ধরনের অধিকার ও আইনি সহায়তার জন্য বিভিন্ন সংগঠনের সাথে যুক্ত।
ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে, পার্কটি উনিশ শতকের শেষের দিকে একটি ময়লা-আবর্জনার স্তূপ ছিল। পরে এটিকে পরিষ্কার করে একটি ছোট লেকের সাথে ওয়েস্টলেক পার্ক হিসেবে তৈরি করা হয়। ১৯৪২ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী জেনারেল ডগলাস ম্যাকআর্থারের সম্মানে পার্কটির নামকরণ করা হয়।
বর্তমানে, পার্কটিতে প্রায়ই আশ্রয়হীন মানুষের আনাগোনা দেখা যায়। মাদকাসক্তদের পুনর্বাসনের জন্য এখানে নিয়মিত কার্যক্রম চলে। অতীতে, এই পার্কে অভিবাসন আইনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়েছে, যেখানে পুলিশের সাথে বিক্ষোভকারীদের সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটেছে।
সামরিক বাহিনীর এই উপস্থিতি নিয়ে জনসাধারণের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। স্থানীয় একজন বাসিন্দা, বেটসি বোল্ট, এই ঘটনার তীব্র নিন্দা করে বলেন, এটি “ভীতিকর” এবং “লস অ্যাঞ্জেলেসের হৃদয় ও আত্মা” কেড়ে নেওয়ার মতো একটি ঘটনা।
ন্যাশনাল ডে লেবার অর্গানাইজিং নেটওয়ার্কের আইনি পরিচালক, ক্রিস নিউম্যান, এই অভিযান সম্পর্কে আগে থেকেই একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র থেকে খবর পেয়েছিলেন।
মার্কিন প্রতিরক্ষা বিভাগ জানিয়েছে, প্রায় ৪,০০০ ক্যালিফোর্নিয়া ন্যাশনাল গার্ড সেনা এবং ৮০০ জন সক্রিয় সেনা সদস্যকে অভিবাসন সংক্রান্ত অভিযানে সহায়তা করার জন্য মোতায়েন করা হয়েছে।
তবে, এই ধরনের সেনা মোতায়েন নিয়ে ইতিমধ্যে বিভিন্ন আইনি প্রশ্ন উঠেছে। বিশেষ করে, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আমলে অভিবাসন নীতি কঠোর করার অংশ হিসেবে এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে কিনা, তা নিয়ে বিতর্ক চলছে।
তথ্যসূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস।