গাজায় ইসরায়েলি হামলায় মারা গেছেন প্রখ্যাত হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. মারওয়ান আল-সুলতান। তাঁর মৃত্যু গাজার স্বাস্থ্যখাতে অপূরণীয় ক্ষতি হিসেবে দেখা দিয়েছে, যেখানে চলমান যুদ্ধ পরিস্থিতির কারণে চিকিৎসক ও চিকিৎসা সরঞ্জামের তীব্র সংকট চলছে।
ডা. সুলতানের মৃত্যু শুধু একজন খ্যাতিমান চিকিৎসকের প্রস্থান নয়, বরং গাজার স্বাস্থ্য ব্যবস্থার জন্য এক গভীর ক্ষত সৃষ্টি করেছে। তাঁর সহকর্মীরা জানিয়েছেন, ডা. সুলতানের চিকিৎসা জ্ঞান এবং অভিজ্ঞতা হাজারো মানুষের জীবন বাঁচিয়েছে।
তিনি ছিলেন শিয়াফা হাসপাতালের হৃদরোগ বিভাগের প্রধান এবং গাজার স্বাস্থ্যখাতে একজন উজ্জ্বল নক্ষত্র।
গাজার বৃহত্তম হাসপাতাল, শিয়াফা হাসপাতালের পরিচালক মোহাম্মদ আবু সায়লামিয়া বলেন, “ডা. মারওয়ান ছিলেন আমাদের হৃদরোগ বিভাগের স্তম্ভস্বরূপ। তাঁর মৃত্যুতে হাজারো মানুষ চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হবে।”
ডা. সুলতান ছাড়াও, একই বিশ্ববিদ্যালয়ের আরও কয়েকজন শিক্ষক, যারা গাজার পরবর্তী প্রজন্মের চিকিৎসক তৈরিতে সহায়তা করেছেন, তাঁরাও ইসরায়েলি হামলায় নিহত হয়েছেন।
২০২৩ সালের অক্টোবর মাস থেকে শুরু হওয়া এই যুদ্ধে এ পর্যন্ত ১৪০০ জনের বেশি ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্যকর্মী নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ। হাসপাতালগুলোতে আহত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে, কিন্তু সে তুলনায় প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সরঞ্জামের অভাব প্রকট।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, যুদ্ধ শুরুর পর থেকে স্বাস্থ্যখাতে প্রায় ৭০০ বারের বেশি হামলা হয়েছে।
ডা. সুলতান ছিলেন উত্তর গাজার বাসিন্দা এবং সেখানকার ইন্দোনেশীয় হাসপাতালের পরিচালক ছিলেন। ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী হাসপাতালটি বন্ধ করে দেওয়ার পর তিনি গাজা শহরের একটি অ্যাপার্টমেন্টে পরিবার নিয়ে বসবাস করছিলেন।
গত সপ্তাহে তাঁর আবাসনে আঘাত হানে ইসরায়েলি বিমান হামলা। হামলায় ডা. সুলতান, তাঁর স্ত্রী, এক মেয়ে এবং জামাতা নিহত হন।
ডা. সুলতানের আরেক মেয়ে লুবনা আল-সুলতান জানান, তাঁর বাবার কক্ষে সরাসরি আঘাত হানে ক্ষেপণাস্ত্রটি। ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, তারা হামাসের একজন গুরুত্বপূর্ণ সদস্যকে লক্ষ্য করে এই হামলা চালিয়েছিল।
তবে, এতে সাধারণ মানুষের হতাহতের ঘটনায় তারা দুঃখ প্রকাশ করেছে এবং ঘটনাটি পর্যালোচনা করা হচ্ছে।
ডা. সুলতানের বন্ধু এবং সহকর্মী, ডা. মোহাম্মদ আল-আসি বলেন, “ডা. সুলতানের মতো একজন নিবেদিতপ্রাণ চিকিৎসকের এভাবে চলে যাওয়াটা মেনে নেওয়া কঠিন। তিনি সবসময় গাজার মানুষের জন্য কাজ করতে চেয়েছিলেন।”
ডা. সুলতানের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন তাঁর অন্যান্য সহকর্মীরাও। তাঁরা বলছেন, গাজার স্বাস্থ্যখাতে তাঁর শূন্যতা পূরণ করা কঠিন। বিশেষ করে, যখন আহত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে, তখন জরুরি চিকিৎসার জন্য বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের খুবই প্রয়োজন।
গাজায় বর্তমানে মাত্র ১৭টি হাসপাতাল চালু আছে, যেখানে জরুরি স্বাস্থ্য পরিষেবা সীমিত। জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, সেখানকার হাসপাতালগুলোতেও চিকিৎসা সরঞ্জামের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে।
গাজার এই কঠিন পরিস্থিতিতেও, ডা. সুলতানের ছেলে আহমেদ একজন মেডিকেল শিক্ষার্থী। আবু সায়লামিয়া আশা প্রকাশ করেন, “আহমেদ বাবার মতোই মানুষের সেবা করবে।”
তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস