চীনের একটি কিন্ডারগার্টেনে শিশুদের খাবারে রং মেশানোর জন্য পেইন্ট ব্যবহার করার ফলে দুই শতাধিক শিশুর শরীরে সীসার (Lead) মাত্রাতিরিক্ত উপস্থিতি পাওয়া গেছে। চীনের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে অবস্থিত তিয়ানশুই শহরের একটি কিন্ডারগার্টেনে ঘটেছে এই ঘটনাটি, যা খাদ্য নিরাপত্তা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে চলা উদ্বেগকে আরও একবার সামনে নিয়ে এসেছে।
স্থানীয় কর্তৃপক্ষের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, হেসি পেইক্সিন কিন্ডারগার্টেনের বাবুর্চিরা শিশুদের খাবারের রঙ তৈরি করতে পেইন্ট ব্যবহার করত। এর ফলস্বরূপ, কিন্ডারগার্টেনের ২৫১ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে ২৩৩ জনের শরীরেই স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি মাত্রায় সীসা পাওয়া গেছে। শিশুদের চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে এবং তাদের স্বাস্থ্য পরীক্ষার প্রক্রিয়া চলছে।
চীনের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন চ্যানেল, সিসিটিভি-র খবর অনুযায়ী, এই ঘটনায় কিন্ডারগার্টেন প্রধান এবং আরও সাত জনকে আটক করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে বিষাক্ত ও ক্ষতিকর খাদ্য উৎপাদন করার অভিযোগ আনা হয়েছে। তদন্তে জানা গেছে, স্কুলের প্রধান এবং একজন অর্থ সরবরাহকারী, শিশুদের আকৃষ্ট করতে এবং স্কুলের আয় বাড়ানোর উদ্দেশ্যে, বাবুর্চিদের পেইন্ট ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছিলেন।
তদন্তকারীরা খাদ্য হিসেবে প্রস্তুত করা দুটি নমুনা পরীক্ষা করে দেখেন। এর মধ্যে ছিল একটি লাল খেজুরের কেক এবং একটি সসেজ রোল। পরীক্ষায় এই খাবারগুলোতে জাতীয় খাদ্য নিরাপত্তা মানের চেয়ে ২,০০০ গুণেরও বেশি সীসার উপস্থিতি পাওয়া গেছে। এছাড়াও, কর্তৃপক্ষ পেইন্ট রাখার বালতিগুলো জব্দ করেছে। সেগুলোতে স্পষ্টভাবেই ‘খাবার অনুপযোগী’ লেখা ছিল।
শিশুদের শরীরে সীসার উপস্থিতি তাদের মস্তিষ্কের বিকাশ, আচরণ এবং বুদ্ধিমত্তার ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলতে পারে। ক্ষতিগ্রস্ত শিশুদের অভিভাবকদের অনেকেই জানিয়েছেন, তাদের সন্তানেরা বেশ কয়েক মাস ধরে অসুস্থ ছিল এবং তাদের মধ্যে অস্বাভাবিক আচরণ দেখা যাচ্ছিল। অভিভাবকদের অভিযোগ, স্থানীয় কর্তৃপক্ষ প্রথমে তাদের উদ্বেগকে গুরুত্ব দেয়নি।
এই ঘটনার পর চীনের খাদ্য নিরাপত্তা ব্যবস্থা এবং স্বচ্ছতা নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন উঠেছে। অতীতেও চীনে খাদ্য নিরাপত্তা নিয়ে একাধিক কেলেঙ্কারি ঘটেছে, যা জনমনে গভীর উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে। ২০০৮ সালের একটি ঘটনায়, বিষাক্ত রাসায়নিক মেশানো দুধ পান করে কয়েকজন শিশুর মৃত্যু হয়েছিল এবং আরও অনেকে অসুস্থ হয়ে পড়েছিল।
বর্তমানে, তিয়ানশুই শহরের মেয়র লিউ লিজিয়াং বলেছেন, শিশুদের চিকিৎসা, পুনর্বাসন এবং তাদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হবে। একইসঙ্গে খাদ্য সুরক্ষায় দুর্বলতাগুলো চিহ্নিত করে তা দূর করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তিনি।
এই ঘটনার জেরে চীনের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। নেটিজেনরা খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন।
তথ্য সূত্র: সিএনএন