যুদ্ধবিরতির মাঝে গাজায় ইসরায়েলি হামলায় ৪০ জনের মৃত্যু: খবর

গাজায় ইসরায়েলি বিমান হামলায় ৪০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। যুদ্ধবিরতির জন্য চলছে আলোচনা।

গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি বিমান হামলায় অন্তত ৪০ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। বুধবার হাসপাতালের কর্মকর্তারা এই তথ্য জানিয়েছেন। একই সময়ে আন্তর্জাতিক মধ্যস্থতাকারীরা যুদ্ধবিরতির চূড়ান্ত চুক্তিতে পৌঁছানোর চেষ্টা করছেন।

মঙ্গলবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে হোয়াইট হাউসে দ্বিতীয় দিনের মতো বৈঠক করেছেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু। ট্রাম্প গাজায় ২১ মাস ধরে চলা যুদ্ধের সমাপ্তির জন্য একটি যুদ্ধবিরতির চেষ্টা করছেন। যুক্তরাষ্ট্র-সমর্থিত একটি নতুন যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব বিবেচনা করছে ইসরায়েল ও হামাস। এই প্রস্তাবের মাধ্যমে যুদ্ধ বিরতি, ইসরায়েলি জিম্মিদের মুক্তি এবং গাজায় জরুরি সহায়তা পাঠানোর বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।

খান ইউনিস শহরের নাসের হাসপাতালে জানানো হয়েছে, নিহতদের মধ্যে ১৭ জন নারী এবং ১০ জন শিশু রয়েছে। একটি হামলায় একই পরিবারের ১০ জন নিহত হয়েছে, যাদের মধ্যে তিনজন শিশুও ছিল।

ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী নির্দিষ্ট কোনো হামলার বিষয়ে মন্তব্য করেনি। তবে তারা জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় গাজাজুড়ে শতাধিক লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানা হয়েছে, যার মধ্যে জঙ্গি, ফাঁদযুক্ত কাঠামো, অস্ত্র গুদাম, ক্ষেপণাস্ত্র লঞ্চার এবং টানেল ছিল। ইসরায়েল হামাসের বিরুদ্ধে বেসামরিক নাগরিকদের মধ্যে অস্ত্র ও যোদ্ধা লুকিয়ে রাখার অভিযোগ করেছে।

যুদ্ধবিরতির আলোচনার দিকে গভীর আগ্রহ নিয়ে তাকিয়ে আছে অনেক ফিলিস্তিনি। তারা এই যুদ্ধের অবসান চায়। মুয়াসী উপকূলীয় অঞ্চলে, যেখানে বাস্তুচ্যুত অনেক মানুষ অস্থায়ী তাঁবুতে বাস করছে, সেখানকার আবেইর আল-নাজ্জার জানিয়েছেন, ক্রমাগত বোমা হামলার মধ্যে তিনি তার পরিবারের জন্য খাবার ও জল সংগ্রহ করতে হিমশিম খাচ্ছেন। তিনি বলেন, “আমি আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করি, যেন যুদ্ধবিরতি হয়।

তবে এমন বিরতি চাই না, যা এক বা দুই মাস পর আবার আমাদের সঙ্গে প্রতারণা করবে। আমরা একটি পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধবিরতি চাই।”

আবেইর আল-নাজ্জারের স্বামী আলি আল-নাজ্জার জানান, গ্রীষ্মকালে এখানকার জীবনযাত্রা খুবই কঠিন হয়ে পড়েছে। মধ্যপ্রাচ্যের তীব্র গরমে একটি জনাকীর্ণ তাঁবুতে তাদের খাবার জল পাওয়ারও কোনো উপায় নেই। তিনি বলেন, “আমরা আশা করি, আমাদের এই কষ্টের অবসান হবে এবং আমরা আবার আমাদের দেশ পুনর্গঠন করতে পারব।” এরপর তিনি দুটি বালতি হাতে জল সংগ্রহের জন্য একটি ওয়াটার ট্রাকের দিকে দৌড়ে যান।

আমানি আবু-ওমর নামে আরেকজন জানিয়েছেন, জল সরবরাহকারী ট্রাকটি চার দিন পর পর আসে, যা তার শিশুদের জন্য যথেষ্ট নয়। গ্রীষ্মের গরমে তার বাচ্চাদের ত্বকের সমস্যা হচ্ছে বলেও তিনি অভিযোগ করেন। তিনি যুদ্ধবিরতির জন্য আকুল আবেদন জানিয়ে বলেন, “আমরা অনেকবার যুদ্ধবিরতির আশা করেছিলাম, কিন্তু কোনো লাভ হয়নি।”

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাস ইসরায়েলে হামলা চালালে যুদ্ধ শুরু হয়। এতে প্রায় ১,২০০ জন নিহত হয় এবং ২৫১ জনকে জিম্মি করা হয়। আগের যুদ্ধবিরতিতে বেশিরভাগ জিম্মিকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে।

গাজায় ইসরায়েলের হামলায় এখন পর্যন্ত ৫০,০০০ জনের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে, যাদের অর্ধেকের বেশি নারী ও শিশু। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে এই তথ্য।

গাজার হামাস-নিয়ন্ত্রিত সরকার পরিচালিত মন্ত্রণালয় বেসামরিক ও যোদ্ধাদের মধ্যে পার্থক্য করে না। জাতিসংঘ এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো হতাহতের সংখ্যা সম্পর্কে তাদের দেওয়া পরিসংখ্যানকে সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য বলে মনে করে।

মঙ্গলবার ক্যাপিটলে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে নেতানিয়াহু বলেন, হামাসকে নির্মূল করার প্রয়োজনীয়তার বিষয়ে তিনি ও ট্রাম্প একমত। তিনি আরও যোগ করেন, ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে সহযোগিতা ও সমন্বয় বর্তমানে ইসরায়েলের ৭৭ বছরের ইতিহাসে সেরা পর্যায়ে রয়েছে।

এ সপ্তাহের শেষে, ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক দূত স্টিভ উইটকফ, হামাসের সঙ্গে যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার জন্য কাতারের রাজধানী দোহায় যাবেন বলে আশা করা হচ্ছে।

উইটকফ জানিয়েছেন, তিনটি প্রধান মতপার্থক্য দূর করা হয়েছে, তবে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এখনো অমীমাংসিত রয়েছে। তিনি বিস্তারিত কিছু জানাননি।

দ্বিতীয় বৈঠকের পর নেতানিয়াহু বলেন, তিনি এবং ট্রাম্প ইসরায়েলি ও আমেরিকান হামলায় দুই সপ্তাহ আগে শেষ হওয়া ১২ দিনের যুদ্ধের সময় ইরানের বিরুদ্ধে “বিজয়” নিয়েও আলোচনা করেছেন।

নেতানিয়াহু আরও বলেন, “এখানে শান্তির পরিধি প্রসারিত করার এবং আব্রাহাম অ্যাকর্ডকে আরও বিস্তৃত করার সুযোগ তৈরি হয়েছে।” তিনি ট্রাম্পের আমলে ইসরায়েল ও একাধিক আরব দেশের মধ্যে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার চুক্তির কথা উল্লেখ করেন। যুক্তরাষ্ট্র সৌদি আরব ও ইসরায়েলের মধ্যে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার জন্য চাপ দিচ্ছে।

তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *