মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্ক আরোপের হুমকি এবং এর প্রতিক্রিয়ায় ওয়াল স্ট্রিটের বিনিয়োগকারীদের মনোভাব নিয়ে একটি চাঞ্চল্যকর পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। বাজার বিশ্লেষকদের মতে, বিনিয়োগকারীরা মনে করছেন, ট্রাম্প শেষ পর্যন্ত নমনীয় হবেন এবং তাঁর কঠোর সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসবেন।
এই ধারণাকে ‘টাকো ট্রেড’ বা ‘ট্রাম্প অলওয়েজ চিকেনস আউট’ নামে অভিহিত করা হচ্ছে। সহজ কথায়, ট্রাম্প সব সময়ই শেষ মুহূর্তে তার কঠোর অবস্থান থেকে সরে আসেন।
ওয়াল স্ট্রিটের এই মনোভাবের কারণ হলো, অতীতে ট্রাম্প একাধিকবার একই ধরনের কাজ করেছেন। উদাহরণস্বরূপ, গত এপ্রিল মাসে তিনি যখন বিভিন্ন পণ্যের ওপর উচ্চ হারে শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেন, তখন বাজারে অস্থিরতা দেখা দেয়। কিন্তু পরে তিনি সেই সিদ্ধান্ত স্থগিত করেন।
বিনিয়োগকারীরা মনে করেন, এবারও তেমন কিছু হতে পারে।
তবে, এই ‘টাকো ট্রেড’-এর একটি দুর্বল দিক রয়েছে। যদি বিনিয়োগকারীরা ধরেই নেন যে ট্রাম্প নমনীয় হবেন, তাহলে বাজারের উপর তার নেতিবাচক প্রভাব পড়ার সম্ভাবনা কমে যায়। এর ফলে, ট্রাম্পের উপর তাঁর নীতি পরিবর্তনের জন্য চাপ সৃষ্টি হবে না।
বিশ্লেষকদের মতে, এটি অনেকটা “ডিম আগে নাকি মুরগি আগে” –র মতো পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে। কারণ, বাজার যদি প্রতিক্রিয়া না দেখায়, তাহলে ট্রাম্প সম্ভবত তাঁর সিদ্ধান্ত বহাল রাখবেন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ট্রাম্প সম্ভবত আসন্ন মার্কিন নির্বাচনের কথা মাথায় রেখে এমন পদক্ষেপ নিচ্ছেন। কারণ, উচ্চ শুল্ক আরোপের ফলে যদি মার্কিন অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তবে রিপাবলিকানদের নির্বাচনে জেতার সম্ভাবনা কমে যেতে পারে।
তবে, এখানে একটি ঝুঁকিও রয়েছে। যদি ওয়াল স্ট্রিট থেকে কোনো জোরালো প্রতিক্রিয়া না আসে, তাহলে ট্রাম্প তাঁর সিদ্ধান্ত বহাল রাখতে পারেন। যদিও ট্রাম্প নিজে অবশ্য বলছেন, এবার তিনি পিছু হটবেন না।
তাঁর দাবি, ২০২৩ সালের ১লা আগস্ট থেকে শুল্ক কার্যকর হবে।
এই পরিস্থিতিতে, বাংলাদেশের জন্য উদ্বেগের কারণ হলো, ট্রাম্পের শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্ত বিশ্ব বাণিজ্যকে প্রভাবিত করতে পারে। এর ফলে, বাংলাদেশের আমদানি ও রপ্তানি খাতেও পরিবর্তন আসতে পারে।
বিশেষ করে, যদি যুক্তরাষ্ট্র, চীন, ভারত, রাশিয়া এবং ব্রাজিলের (ব্রিক্স) মতো দেশগুলোর উপর শুল্ক আরোপ করা হয়, তাহলে বাংলাদেশের বাণিজ্য ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
সুতরাং, ট্রাম্পের এই শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্ত শুধু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ বিষয় নয়, বরং এটি বিশ্ব অর্থনীতির জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
তথ্য সূত্র: সিএনএন