টেক্সাসের ভয়াবহ বন্যা: প্রথম কয়েক ঘণ্টায় কী ঘটেছিল? জবাব নেই!

টেক্সাসে ভয়াবহ বন্যায় মৃতের সংখ্যা বাড়ছে, কর্মকর্তাদের ভূমিকা নিয়ে উঠছে প্রশ্ন।

যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস অঙ্গরাজ্যে সম্প্রতি ভয়াবহ বন্যায় অন্তত ১২০ জন মানুষের মৃত্যু হয়েছে এবং এখনো প্রায় ১৫০ জন নিখোঁজ রয়েছেন। স্বাধীনতা দিবসের ভোরে হওয়া এই প্রাকৃতিক দুর্যোগে উদ্ধারকাজ এখনো চলছে, তবে এর মধ্যেই স্থানীয় কর্তৃপক্ষের প্রস্তুতি ও প্রতিক্রিয়ার দুর্বলতা নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন উঠেছে।

বিশেষ করে দুর্যোগের শুরু দিকের কয়েক ঘন্টায় কর্মকর্তাদের ভূমিকা নিয়ে এখনো পর্যন্ত কোনো স্পষ্ট জবাব পাওয়া যায়নি।

স্থানীয় সংবাদ মাধ্যম সূত্রে জানা যায়, ৪ঠা জুলাই, অর্থাৎ স্বাধীনতা দিবসের সকালে, গুয়াদালুপ নদীর পানি হঠাৎ করেই বিপদসীমার উপর দিয়ে বইতে শুরু করে। এর কিছুক্ষণ পরেই ন্যাশনাল ওয়েদার সার্ভিস (NWS) কেরি কাউন্টিতে ফ্ল্যাশ ফ্লাডের সতর্কবার্তা জারি করে।

কিন্তু স্থানীয় কর্মকর্তাদের মধ্যে অনেকেই এই বিষয়ে অবগত ছিলেন না বা জরুরি পদক্ষেপ নিতে দেরি করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

কেরি কাউন্টির শেরিফ ল্যারি লেইথা জানিয়েছেন, তিনি সকাল ৪টা বা ৫টার দিকে বন্যার খবর পান, যখন সাহায্য চেয়ে ৯১১ নম্বরে ফোন আসা শুরু হয়। অথচ, এর অনেক আগেই, ১টা ১৪ মিনিটে ওয়েদার সার্ভিস সতর্কবার্তা দিয়েছিল।

স্থানীয় একটি ফায়ার সার্ভিসের কর্মীর বরাত দিয়ে জানা যায়, সকাল ৪টা ২২ মিনিটে কোড রেড এলার্ট (CodeRED alert) জারির জন্য আবেদন করা হলেও অনেক বাসিন্দাই সেটি পাননি।

এই ঘটনার পরে জরুরি অবস্থার ব্যবস্থাপনায় থাকা কর্মকর্তাদের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। বিশেষ করে, জরুরি অবস্থার সময় কে নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন, সেই বিষয়ে কোনো সুস্পষ্ট তথ্য পাওয়া যায়নি।

দুর্যোগের সময় দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া এবং মানুষকে নিরাপদে সরিয়ে নেওয়ার জন্য একটি সুসংগঠিত পরিকল্পনা থাকা জরুরি, যা এখনো অনেকের কাছে স্পষ্ট নয়।

টেক্সাসের লেফটেন্যান্ট গভর্নর ড্যান প্যাট্রিক জানিয়েছেন, বন্যার পূর্বাভাস নিয়ে আলোচনা করার জন্য আগের দিন মেয়র ও সিটি জাজদের একটি মিটিংয়ে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল।

কিন্তু কেরিভিলের মেয়র জো হিয়ারিং জুনিয়র জানিয়েছেন, তিনি কোনো আমন্ত্রণ পাননি।

এদিকে, বন্যা কবলিত এলাকার কিছু ক্যাম্পের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।

জানা গেছে, গুয়াদালুপ নদীর তীরে অবস্থিত অন্তত ১৮টি গ্রীষ্মকালীন ক্যাম্পের মধ্যে বেশ কয়েকটি বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে ক্যাম্প মিস্টিক অন্যতম।

এই ক্যাম্পটি প্রায় একশো বছর ধরে সেখানে বিদ্যমান। ১৯৮৭ সালেও একই নদীতে বন্যায় ১০ জন শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়েছিল, সেই ঘটনার পরেও কি কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছিল, সেই বিষয়েও এখনো পর্যন্ত কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।

যুক্তরাষ্ট্রের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সংস্থা FEMA এর প্রতিক্রিয়া জানাতেও দেরি হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয় কর্মকর্তাদের মধ্যে সমন্বয়হীনতা এবং জরুরি অবস্থার সময় কার্যকর পদক্ষেপের অভাব নিয়েও অনেকে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।

এই ঘটনার পর টেক্সাসের কর্মকর্তাদের কাছে জনগণের একটাই প্রশ্ন, ভবিষ্যতে এমন দুর্যোগ মোকাবিলায় তারা কতটা প্রস্তুত?

এই ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্তদের সাহায্য করার পাশাপাশি, ভবিষ্যতে যাতে এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি না হয়, তার জন্য জরুরি ভিত্তিতে পদক্ষেপ নেওয়া দরকার।

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *