যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের একটি বিতর্কিত নির্বাহী আদেশ নিয়ে আবারও আইনি লড়াই শুরু হয়েছে। এই আদেশের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রে জন্ম নেওয়া শিশুদের নাগরিকত্ব দেওয়ার বিষয়ে কড়াকড়ি আরোপ করতে চেয়েছিলেন ট্রাম্প।
সুপ্রিম কোর্টের সাম্প্রতিক একটি রায়ের পর এই বিষয়ে নিম্ন আদালতগুলোর ক্ষমতা কিছুটা সীমিত করা হয়েছে, যে কারণে নতুন করে মামলার শুনানি শুরু হয়েছে। খবরটি এখন সারা বিশ্বে আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
নিউ হ্যাম্পশায়ারের একটি ফেডারেল আদালতে এই মামলার শুনানি চলছে। এই শুনানি মূলত ট্রাম্পের সেই নির্বাহী আদেশের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগগুলোর ওপর ভিত্তি করে হচ্ছে।
ট্রাম্পের এই আদেশ কার্যকর হওয়ার আগেই বিভিন্ন আদালত এর ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল। এর বিরুদ্ধে করা আপিলের শুনানিতে সুপ্রিম কোর্ট জানায়, নিম্ন আদালতগুলো এখন থেকে কিভাবে এই ধরনের নীতিমালার বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিতে পারবে, সে বিষয়ে কিছু সীমাবদ্ধতা আনা হয়েছে। তবে, এই রায়ে ট্রাম্পের নীতির বৈধতা নিয়ে কোনো কথা বলা হয়নি।
ইমিগ্রেশন বিষয়ক আইনজীবীরা এখন আদালতের কাছে আবেদন করছেন, যাতে এই নীতির কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া শিশুদের সুরক্ষার জন্য একটি নতুন আদেশ জারি করা হয়। যদি বিচারক তাঁদের পক্ষে রায় দেন, তাহলে ট্রাম্পের এই নীতির বিরুদ্ধে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হবে।
এর আগে, বিচারক জোসেফ ল্যাপ্ল্যান্ট ট্রাম্প প্রশাসনের এই আদেশকে অনির্দিষ্টকালের জন্য আটকে দিয়েছিলেন। তাঁর মতে, এই নির্বাহী আদেশটি যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানের চতুর্দশ সংশোধনীর পরিপন্থী।
আদালতে শুনানির মূল বিষয় হলো, ট্রাম্পের আদেশের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত ‘ভবিষ্যতের সব শিশু’ এবং তাদের অভিভাবকদের একটি তালিকা তৈরি করা যায় কিনা। যদি বিচারক এই তালিকা তৈরির অনুমতি দেন, তাহলে তিনি সম্ভবত এই আদেশের বিরুদ্ধে একটি নতুন নিষেধাজ্ঞা জারি করতে পারেন, যা কার্যত সারা দেশে এই নীতিকে অকার্যকর করে দেবে।
আবেদনকারীদের আইনজীবী কোডি ওফসি বলেছেন, “এই নীতির সাংবিধানিক প্রশ্নে এখন পর্যন্ত কোনো আদালত ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে একমত হয়নি। সব আদালতই এই আদেশকে অসাংবিধানিক বলেছে। আমরা আশা করছি, এই প্রশ্নে আমরা জয়ী হব।”
এই মামলায় প্রতিনিধিত্ব করার জন্য কয়েকজন ব্যক্তির নাম প্রস্তাব করা হয়েছে। তাঁদের মধ্যে একজন হলেন “বারবারা” নামের হন্ডুরান এক নারী, যিনি বর্তমানে নিউ হ্যাম্পশায়ারে বসবাস করছেন এবং অক্টোবরে সন্তানের জন্ম দিতে যাচ্ছেন।
এছাড়া, “মার্ক” নামের একজন ব্রাজিলীয়ও আছেন, যিনি যুক্তরাষ্ট্রে স্থায়ীভাবে বসবাসের চেষ্টা করছেন। মার্চের শুরুতে মার্কের স্ত্রী একটি সন্তানের জন্ম দিয়েছেন, যিনি বৈধভাবে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করেন না।
আইনজীবীরা বলছেন, এই আদেশ বহাল থাকলে, শিশুদের জন্য যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করা কঠিন হয়ে পড়বে। তারা ভোট দেওয়ার অধিকার, সরকারি কাজে যোগ দেওয়া, এমনকি বিভিন্ন সরকারি সুযোগ-সুবিধা থেকেও বঞ্চিত হবে।
এছাড়া, তাদের গ্রেপ্তার ও বিতাড়িত করারও সম্ভাবনা রয়েছে।
ট্রাম্পের এই নির্বাহী আদেশের শিরোনাম ছিল, “মার্কিন নাগরিকত্বের অর্থ ও মূল্য রক্ষা করা”। এই আদেশে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রে জন্ম নেওয়া কোনো শিশুর বাবা-মা যদি অবৈধভাবে অথবা স্বল্প সময়ের জন্য বৈধভাবে বসবাস করেন, তবে তাদের সন্তানদের নাগরিকত্বের প্রমাণপত্র দেওয়া হবে না।
সুপ্রিম কোর্ট তার গত ২৭ জুনের রায়ে জানায়, সরকার এই নীতি এখনই কার্যকর করতে পারবে না। তবে, কীভাবে এটি বাস্তবায়ন করা হবে, সে বিষয়ে তারা নির্দেশনা তৈরি করতে পারবে।
অন্যান্য আদালতগুলোও ট্রাম্পের এই আদেশের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলোর শুনানির জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। তবে, সেই প্রক্রিয়া সময়সাপেক্ষ এবং এখনই বলা যাচ্ছে না, কোনো আদালত ট্রাম্পের এই নীতির বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা শিথিল করবে কিনা।
তথ্য সূত্র: সিএনএন