যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য নীতিতে শুল্ক বৃদ্ধির কারণে জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে, যা বাংলাদেশের অর্থনীতিতেও প্রভাব ফেলতে পারে। সম্প্রতি বিভিন্ন অর্থনীতিবিদ সতর্ক করে বলেছেন, এই মূল্যবৃদ্ধি কেবল শুরু।
ডোনাল্ড ট্রাম্পের সরকার আমদানি পণ্যের উপর শুল্ক আরোপ করায় এর প্রভাব ভোক্তাদের উপর পড়ছে, যার ফলস্বরূপ জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে। যদিও সরকারিভাবে এখনো মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আছে বলে দাবি করা হচ্ছে, তবে বাস্তবে অনেক পণ্যের দাম বাড়ছে এবং এই প্রবণতা ভবিষ্যতে আরও বাড়বে বলেই ধারণা করা হচ্ছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শুল্ক আরোপের প্রক্রিয়াটি ধীর গতিতে হচ্ছে। প্রথমে চীন এবং অন্যান্য কিছু দেশের পণ্যের উপর শুল্ক বসানো হয়, এরপর ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়ামের মত পণ্যের ওপরও শুল্ক বৃদ্ধি করা হয়।
এছাড়া, বাণিজ্য নীতি প্রায়ই পরিবর্তন হচ্ছে, কিছু শুল্ক হয়তো স্থগিত করা হচ্ছে, আবার কোনোটির পরিমাণ বাড়ছে বা কমছে। সমুদ্রপথে পণ্য আসতে সময় লাগে, ফলে বাজারে এর প্রভাব দেরিতে দেখা যায়।
আমেরিকার বাজারে পণ্য পৌঁছাতে কয়েক সপ্তাহ থেকে এক মাসের বেশি সময় লাগে। এছাড়া, অভ্যন্তরীণ সরবরাহ শৃঙ্খলও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। পণ্যগুলো বন্দরে আসার পর সরাসরি দোকানে চলে যায় না।
উৎপাদন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হতেও সময় লাগে। ব্যবসায়ীরাও প্রথমে এই শুল্কের কিছু অংশ বহন করছেন, তবে বাজারের পরিস্থিতি এবং ভোক্তাদের ক্রয়ক্ষমতা কমে যাওয়ায় তারা ধীরে ধীরে দাম বাড়াতে বাধ্য হচ্ছেন।
বর্তমানে গ্রীষ্মকালে মানুষের ভ্রমণ ও বিনোদনে বেশি আগ্রহ থাকে, তাই জিনিসপত্রের দামের দিকে মানুষের মনোযোগ তুলনামূলকভাবে কম থাকে। তবে, শরৎ ও শীতকালে যখন স্কুল খোলার মৌসুম এবং বিভিন্ন উৎসব শুরু হয়, তখন পরিবারের বাজেট ব্যবস্থাপনায় পণ্যের দাম একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে দাঁড়ায়।
অর্থনীতিবিদদের মতে, এই সময়ে ভোক্তাদের উপর মূল্যবৃদ্ধির প্রভাব আরও স্পষ্টভাবে অনুভূত হবে।
বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ইতিমধ্যে কিছু পণ্যের দাম বেড়েছে। উদাহরণস্বরূপ, জুনের মধ্যে আসবাবপত্রের দাম ১.৯ শতাংশ, খেলনার দাম ০.৪ শতাংশ এবং পোশাক ও জুতার দাম ০.৭ শতাংশ বেড়েছে।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, শুল্কের প্রভাব ধীরে ধীরে সরবরাহ শৃঙ্খলের মাধ্যমে আরও বিস্তৃত হবে এবং পণ্যের দাম আরও বাড়বে। এর পাশাপাশি, প্যাকেজের আকার ছোট করা অথবা কম দামে পণ্য বিক্রির প্রবণতাও দেখা যেতে পারে।
ওয়েলস ফার্গোর অর্থনীতিবিদ নিকোল সার্ভি মনে করেন, আসন্ন মাসগুলোতে মূল্যবৃদ্ধির চাপ আরও বাড়বে এবং সামগ্রিক মূল্যসূচক বা সিপিআই (Consumer Price Index)-এর উপর এর প্রভাব স্পষ্ট হবে।
এই পরিস্থিতিতে, অর্থনীতির উপর শুল্কের প্রভাব বেশি অনুভূত হলে তা ভোক্তাদের জন্য আরও কঠিন পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রের এই বাণিজ্য নীতির কারণে সৃষ্ট মূল্যবৃদ্ধির প্রভাব বিশ্ব অর্থনীতিতে পড়বে, যা বাংলাদেশের বাজারেও পরোক্ষভাবে প্রভাব ফেলতে পারে।
আমদানি করা পণ্যের দাম বাড়লে, তা সরাসরি ভোক্তাদের পকেটে আঘাত হানবে। তাই, আন্তর্জাতিক বাজারে পরিবর্তনের দিকে আমাদের সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন