হেলেনের তাণ্ডবে বিধ্বস্ত জনপদ: আজও ক্ষত, ঘুরে দাঁড়াচ্ছে মানুষ!

পশ্চিমবঙ্গের একটি ছোট শহরে ঘূর্ণিঝড়ের তাণ্ডবের নয় মাস পরেও শোকের ছায়া। সেখানকার মানুষজন এখনও বন্যার ক্ষতচিহ্ন বয়ে বেড়াচ্ছেন, তবে এর মধ্যেও টিকে থাকার অদম্য মানসিকতা চোখে পড়ার মতো।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নর্থ ক্যারোলাইনার মার্শাল এবং হট স্প্রিংস-এর বাসিন্দারা প্রকৃতির রুদ্র রূপের সাক্ষী হয়েছেন, যখন ঘূর্ণিঝড় হেলেনের প্রভাবে ভয়াবহ বন্যা দেখা দেয়।

নয় মাস পরেও, অনেক বাড়ির কাদা এখনো সরানো হয়নি, কিছু ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে পড়ে আছে, আর কিছু সংস্কারের অপেক্ষায় দিন গুনছে। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, জীবনযাত্রা স্বাভাবিক করতে তাঁদের আরও অনেক পথ পাড়ি দিতে হবে।

কোরি হ্যাম্পটন নামের এক নারী, যিনি ফ্রেঞ্চ ব্রড নদীর পাশে কাজ করেন, তিনি বলেন, “আমি এখনো ধ্বংসস্তূপ দেখি, আর মনে হয় এর নিচে হয়তো কেউ চাপা পড়েছে। গন্ধ পেলেই মনে হয়, আমাকে গিয়ে দেখতে হবে।”

মার্শাল এবং হট স্প্রিংস-এর মানুষজন তাদের জীবন নতুন করে সাজানোর চেষ্টা করছেন। মিচ হ্যাম্পটনের সঙ্গে কোরি ফ্রেঞ্চ ব্রড অ্যাডভেঞ্চার্স-এর মালিক, যা এই অঞ্চলের একটি জনপ্রিয় বিনোদন কেন্দ্র।

এখানে রাফটিং, জিপলাইনিংয়ের মতো নানা ধরনের কার্যকলাপ চলে। তাদের জীবন ও জীবিকার প্রধান উৎস এই নদী, যা পর্যটকদের কাছে এক আকর্ষণীয় স্থান। কিন্তু বন্যার পরে, এই দম্পতি স্থানীয় উদ্ধারকারী দলের সঙ্গে মিলে দিনরাত উদ্ধার কাজে ঝাঁপিয়ে পড়েন।

বন্যার ভয়াবহতা কাটিয়ে ওঠা সহজ ছিল না। স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙে পড়ায় বাইরের জগৎ থেকে তাঁরা প্রায় বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছিলেন।

জরুরি অবস্থার কারণে খবর আদান-প্রদানও কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছিল। সেই সময় গুজব ছড়িয়ে পড়েছিল, যা তাঁদের কষ্টের কারণ হয়।

হট স্প্রিংস-এর মেয়র অ্যাবি নর্টন জানান, “আমি ভেবেছিলাম কয়েক মাসের মধ্যেই সব ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু বাস্তব অবস্থা অনেক কঠিন। ফেডারেল সাহায্য পেতেও দীর্ঘ সময় লাগছে।”

স্থানীয় সরকার এবং ফেডারেল সাহায্য পাওয়ার প্রক্রিয়া এখনো অনেক কঠিন, যা তাদের জন্য একটা বড় চ্যালেঞ্জ।

ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার বাসিন্দাদের মধ্যে ঐক্যের ছবিও দেখা গেছে। অ্যামি রুবিন নামের এক নারী, যিনি বিগ পিলো ব্রুইং-এর মালিক, জানিয়েছেন, “আমরা সবাই একসঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে একে অপরের পাশে দাঁড়িয়েছি।”

বন্যার কারণে শহরের অনেক কিছুই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো, একটি সেতুর ক্ষতি হওয়ায় সেটি মেরামত করা জরুরি। স্থানীয়দের মতে, এই সেতু মেরামতের কাজটি দ্রুত করা দরকার, যাতে ভবিষ্যতে আবারও এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি না হয়।

মার্শাল শহরের বাসিন্দা জোশ কোপাস জানিয়েছেন, “বন্যার ধাক্কাটা ছিল ভয়ঙ্কর। প্রথমে মনে হয়েছিল, শহরটা বুঝি শেষ হয়ে গেল। কিন্তু পরে দেখলাম, আমাদের মানুষগুলো এখনো আছে, আর তাদের মধ্যে টিকে থাকার অদম্য ক্ষমতা রয়েছে।”

এই কঠিন সময়েও, স্থানীয়রা নিজেদের মধ্যেকার ভেদাভেদ ভুলে একসঙ্গে কাজ করেছেন। কোপাস আরও বলেন, “আমরা সবাই অ্যাপালাচিয়ান আমেরিকান, এটাই আমাদের পরিচয়। রাজনীতির ঊর্ধ্বে উঠে আমরা সবাই এক হয়েছি।”

এই বিপর্যয় কাটিয়ে ওঠার জন্য স্থানীয় শিল্পী এবং ব্যবসায়ীরা নানাভাবে চেষ্টা করছেন। এখানকার শিল্পী কোপাস তাঁর হোটেল মেরামতের সময় একটি অ্যালবাম তৈরি করেছেন, যার মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্তদের সাহায্য করা হবে।

এই ঘটনার মাধ্যমে সেখানকার মানুষজন দুর্যোগের সময় কিভাবে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হয়, সেই শিক্ষা পেয়েছেন। তাঁরা তাঁদের শহরকে আবার আগের রূপে ফিরিয়ে আনতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ।

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *