ডায়াবেটিসে আক্রান্ত, চোখের সমস্যায় আক্রান্ত: এক ব্যক্তির লড়াই!

ডায়াবেটিস এবং দৃষ্টিশক্তির দুর্বলতা: এক ব্যক্তির অভিজ্ঞতা ও বাংলাদেশের জন্য কিছু শিক্ষা

বাংলাদেশে দিন দিন বাড়ছে ডায়াবেটিসের প্রকোপ। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে দেশের প্রায় ৮৪ লক্ষ মানুষ এই রোগে আক্রান্ত।

ডায়াবেটিস শুধু জীবনযাত্রায় পরিবর্তন আনে না, বরং এর থেকে জন্ম নিতে পারে মারাত্মক কিছু স্বাস্থ্য জটিলতা। এর মধ্যে অন্যতম প্রধান একটি সমস্যা হলো চোখের সমস্যা বা দৃষ্টিশক্তির দুর্বলতা।

ডায়াবেটিসের কারণে চোখের যে ক্ষতি হয়, তাকে চিকিৎসা পরিভাষায় বলা হয় ‘ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথি’। এই রোগে আক্রান্ত হলে দৃষ্টিশক্তি হারানোর ঝুঁকি অনেক বেড়ে যায়।

আজ আমরা এমন একজন মানুষের কথা জানব, যিনি দীর্ঘদিন ধরে টাইপ ১ ডায়াবেটিসে (Type 1 Diabetes) আক্রান্ত এবং ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথির সঙ্গে লড়াই করছেন। তাঁর নাম মাইক হস্কিনস। হস্কিনস-এর অভিজ্ঞতা আমাদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা বহন করে।

ছোটবেলায় টাইপ ১ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার পর থেকেই হস্কিনসের সবচেয়ে বড় ভয় ছিল দৃষ্টিশক্তি হারানো। ডায়াবেটিসের কারণে চোখের সমস্যাগুলো ধীরে ধীরে তাঁর দৃষ্টি কেড়ে নিতে শুরু করে।

বিগত কয়েক বছরে তিনি চোখের নানা ধরনের চিকিৎসার মধ্যে দিয়ে গিয়েছেন। এর মধ্যে রয়েছে ১৬টি লেজার চিকিৎসা এবং ৬টি ইনজেকশন। সম্প্রতি, তাঁর ‘গ্লুকোমা’ ধরা পড়েছে, যা চোখের আরও একটি গুরুতর সমস্যা।

গ্লুকোমার কারণে চোখের চাপ কমাতে তাঁকে নিয়মিত আই ড্রপ ব্যবহার করতে হচ্ছে।

হস্কিনস-এর ভাষায়, চোখের স্বাস্থ্য নিয়ে তাঁর এই যাত্রাটা বেশ কঠিন। চোখের সমস্যার কারণে তিনি ২০১৬ সাল থেকে ডান চোখে ঝাপসা দেখা অনুভব করছেন।

অনেক সময় তিনি এই চোখটি বন্ধ করে রাখতে চান, বিশেষ করে উজ্জ্বল আলোয়। তাঁর এই অভিজ্ঞতা বুঝিয়ে দেয়, ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য চোখের স্বাস্থ্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ।

ডায়াবেটিস রোগীদের চোখের সমস্যার কারণ হলো, চোখের ভেতরের রেটিনার রক্তনালী ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া। এর ফলে রেটিনাতে রক্তক্ষরণ হয় এবং চোখের দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে আসে।

সময় মতো চিকিৎসা না করালে, এই সমস্যা মারাত্মক রূপ নিতে পারে এবং ধীরে ধীরে দৃষ্টিশক্তি সম্পূর্ণভাবে চলে যেতে পারে।

চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথির প্রাথমিক পর্যায়ে নিয়মিত চোখের পরীক্ষার মাধ্যমে রোগ শনাক্ত করা সম্ভব। রোগের শুরুতে ধরা পড়লে, লেজার চিকিৎসার মাধ্যমে এটি নিয়ন্ত্রণে আনা যেতে পারে।

হস্কিনস-এর ক্ষেত্রেও প্রথমে লেজার চিকিৎসা করা হয়েছিল। তবে, রোগ যখন আরও বেড়ে যায়, তখন চোখের ভেতরে ইনজেকশন দেওয়ার প্রয়োজন হতে পারে।

হস্কিনস-এর ভাষায়, ইনজেকশন দেওয়ার প্রক্রিয়াটি ভীতিকর মনে হলেও, বাস্তবে ততটা কষ্টদায়ক ছিল না।

ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথির চিকিৎসায় ব্যবহৃত একটি ইনজেকশন হলো ‘এভাস্টিন’। এই ওষুধটি মূলত ক্যান্সারের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হলেও, এটি চোখের রক্তনালীগুলোর অস্বাভাবিক বৃদ্ধি কমাতে সাহায্য করে।

ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানো এবং চোখের যত্ন নেওয়া খুবই জরুরি। হস্কিনস-এর গল্প আমাদের মনে করিয়ে দেয়, ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা এবং চোখের সমস্যাগুলো early stage-এ শনাক্ত করা গেলে, দৃষ্টিশক্তি হারানোর ঝুঁকি কমানো সম্ভব।

বাংলাদেশে ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে বিভিন্ন স্বাস্থ্যসেবা উপলব্ধ রয়েছে। চোখের সমস্যা সমাধানে, বিশেষ করে রেটিনোপ্যাথির চিকিৎসায়, এখন উন্নতমানের প্রযুক্তি ও অভিজ্ঞ চিকিৎসকও পাওয়া যায়।

তাই, ডায়াবেটিস রোগীদের নিয়মিত চক্ষু পরীক্ষা করানো উচিত এবং চোখের কোনো সমস্যা হলে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

যদি আপনার ডায়াবেটিস থাকে, তাহলে দেরি না করে আজই চোখের ডাক্তারের সঙ্গে যোগাযোগ করুন। আপনার চোখের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় সচেতন হোন এবং সুস্থ জীবন যাপন করুন।

তথ্য সূত্র: হেলথলাইন-এ প্রকাশিত মাইক হস্কিনস-এর নিবন্ধ অবলম্বনে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *