অর্থনৈতিক দুরবস্থা সত্ত্বেও কিউবার নারীদের মধ্যে নখ শিল্পের চাহিদা বাড়ছে। একদিকে যখন কিউবার মানুষ দৈনন্দিন জীবনযাত্রার খরচ যোগাতে হিমশিম খাচ্ছে, তখন ফ্যাশন সচেতন নারীরা তাদের নখকে সাজাতে কার্পণ্য করছেন না।
লম্বা এবং আকর্ষণীয় নখ এখন তাদের কাছে অন্যতম ফ্যাশন অনুষঙ্গ।
কিউবার জীবনযাত্রার মান কঠিন হলেও, নারীরা তাদের সৌন্দর্য সচেতনতা থেকে সরতে নারাজ। একদিকে খাদ্য সংকট, অন্যদিকে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি—এমন পরিস্থিতিতেও তারা তাদের রূপচর্চায় কোনো আপস করতে রাজি নন।
দেশটির অনেক নারীই এখন নখ শিল্পের দিকে ঝুঁকছেন, যা তাদের কাছে একদিকে যেমন ফ্যাশন, তেমনই আয়ের একটা পথ।
মারিসেল দারিয়াস ভালদেস নামের এক কিউবান নারী হাভানার নিজের বাড়িতে একটি নখ সেলুন খুলেছেন। সেখানে তিনি বিশেষায়িত এবং বাইরের দেশ থেকে আনা উপকরণ ব্যবহার করেন, যা পাওয়া বেশ কঠিন এবং ব্যয়বহুল।
মারিসেল জানান, একজন গ্রাহকের নখ ডিজাইন করতে তার প্রায় ছয় ঘণ্টা সময় লাগে। তার ক্লায়েন্ট মারিয়াম ক্যামিলা সোসা তার মেয়ের পছন্দের কার্টুন চরিত্র স্পঞ্জ ববের ছবি নখে আঁকিয়েছিলেন।
সাধারণ নখ পালিশের বদলে এখন অ্যাক্রিলিক দিয়ে নখ তৈরি করা হয়, যেখানে বিভিন্ন ধরনের ডিজাইন ফুটিয়ে তোলা হয়। মারিসেল জানান, এত বিস্তারিত কাজ করার কারণে তিনি দিনে দু’জনের বেশি গ্রাহকের কাজ করতে পারেন না।
আগে যেখানে আধা ঘণ্টার মধ্যে নখ পলিশ করা যেত, সেখানে এখন এটি শিল্পকর্মে পরিণত হয়েছে।
কিউবার নারীদের ফ্যাশন সচেতনতার কথা উল্লেখ করে মারিসেল বলেন, “তাদের হয়তো খাবার সংকট আছে, কিন্তু তাদের নখ, চুল, চোখের পাতা—সবকিছুই পরিপাটি থাকতে হবে।”
বর্তমানে, এই ধরনের বিশেষায়িত ব্যবসার সঠিক সংখ্যা জানা না গেলেও, মহামারীর পর থেকে ছোট ছোট ব্যক্তিগত সেলুনগুলো বেশ জনপ্রিয় হয়েছে।
এদের মধ্যে কেউ কেউ এই কাজকে শিল্প হিসেবেও গ্রহণ করেছেন। শুধু তাই নয়, তারা তাদের ব্যবসার প্রচারের জন্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকে ব্যবহার করছেন।
একজন নখ শিল্পী দাইয়ানা রশ তার সোশ্যাল মিডিয়া একাউন্টের মাধ্যমে তার কাজের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন। তিনি জানান, গ্রাহকদের আকৃষ্ট করার জন্য সোশ্যাল মিডিয়ায় নিয়মিত ছবি ও ভিডিও আপলোড করাটা খুব জরুরি।
কারণ, সেখানেই সবাই তাদের কাজ দেখতে পায়।
এই পেশা অনেকের কাছে জীবিকা নির্বাহের একটি ভালো উপায়। কিউবার অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে যেখানে সরকারি বেতন খুবই কম, সেখানে নখ শিল্পের মাধ্যমে ভালো আয় করা সম্ভব।
সাধারণত, একজন গ্রাহকের কাছ থেকে নখ শিল্পের জন্য ১০ থেকে ৪০ মার্কিন ডলার পর্যন্ত নেওয়া হয়। যেখানে একজন সরকারি কর্মীর মাসিক বেতন মাত্র ১৩ ডলার।
নখ তৈরির উপকরণগুলো আসে মূলত যুক্তরাষ্ট্র অথবা পানামা থেকে। অনেক সময় নখ শিল্পীরা অথবা তাদের পরিবারের সদস্যরা এগুলো নিয়ে আসেন।
এছাড়া কিউবার কিছু বিক্রেতার কাছ থেকেও এই উপকরণ পাওয়া যায়, তবে সেগুলোর দাম বেশ চড়া।
উদাহরণস্বরূপ, এক বোতল উন্নত মানের নখ পালিশের দাম ১৫ ডলার পর্যন্ত হতে পারে।
মিরালিয়া মউরা ক্রুজ নামের এক নারী জানান, তার প্রায় দুই ইঞ্চি লম্বা নখ রয়েছে এবং এই নখ নিয়েই তিনি তার দৈনন্দিন কাজকর্ম করেন।
তিনি বলেন, “নখ ছাড়া আমি যেন কিছুই না। আমি জানি এটা খুব সস্তা নয়, কিন্তু এটা আমার বিলাসিতা।”
তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস