এলোন মাস্কের ‘আমেরিকা পার্টি’ : ভাঙতে শুরু করেছে ট্রাম্পের জোট?

এলোন মাস্কের ‘আমেরিকা পার্টি’ : ট্রাম্পের জোট ভাঙনের আভাস?

বিশ্বের অন্যতম প্রভাবশালী ব্যক্তি, টেসলা ও স্পেসএক্সের প্রধান নির্বাহী এলোন মাস্ক, সম্প্রতি একটি নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের ঘোষণা দিয়েছেন। তার এই পদক্ষেপ শুধু আমেরিকাতেই নয়, বিশ্বজুড়ে আলোচনার জন্ম দিয়েছে।

অনেকেই মনে করছেন, মাস্কের এই ‘আমেরিকা পার্টি’ ডোনাল্ড ট্রাম্পের রিপাবলিকান পার্টির জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াতে পারে। প্রশ্ন উঠছে, মাস্কের এই উদ্যোগ কি ট্রাম্পের রাজনৈতিক ক্ষমতাকে দুর্বল করবে?

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে তৃতীয় কোনো দলের উত্থান খুব একটা দেখা যায় না। সাধারণত, দেশটির রাজনীতি দুটি প্রধান দল – ডেমোক্র্যাট ও রিপাবলিকানদের ঘিরে আবর্তিত হয়।

তবে, অতীতে বিভিন্ন সময়ে তৃতীয় দলগুলি কিছু ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলেছে। যেমন, এক সময়ের প্রভাবশালী রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব রস পেরো, যিনি ১৯৯০ এর দশকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে বেশ আলোড়ন তুলেছিলেন। মাস্কের দল গঠনের ঘোষণার পর অনেকেই পেরোর সঙ্গে এর মিল খুঁজে পাচ্ছেন।

পেরোও রাজনীতিতে এসেছিলেন বিপুল অর্থ ও প্রভাবশালী একটি অবস্থান নিয়ে, এবং বিদ্যমান রাজনৈতিক ব্যবস্থার প্রতি অসন্তুষ্ট ছিলেন।

এলোন মাস্কের রাজনৈতিক দর্শন এখনো স্পষ্ট নয়। তবে তিনি বিভিন্ন সময়ে জাতীয় ঋণ, অভিবাসন এবং জলবায়ু পরিবর্তনের মতো বিষয়গুলোতে নিজের আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, মাস্কের দল গঠন ট্রাম্পের রিপাবলিকান পার্টির জন্য একটি উদ্বেগের কারণ হতে পারে। কারণ, মাস্কের বিশাল সম্পদের ক্ষমতা আছে এবং তিনি নির্বাচনে প্রভাবশালী ভূমিকা রাখতে পারেন। তিনি নির্বাচনে প্রার্থী বাছাইয়ের ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলতে পারেন।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, ট্রাম্পের জোট দুর্বল হতে শুরু করেছে। এর কারণ হিসেবে তারা বিভিন্ন বিষয়কে চিহ্নিত করেছেন।

যেমন, বাণিজ্য নীতি এবং অভিবাসন বিষয়ক কিছু সিদ্ধান্ত ট্রাম্পের সমর্থকগোষ্ঠীর মধ্যে বিভেদ তৈরি করেছে। বাণিজ্য নীতির কারণে ব্যবসায়ীরা যেমন অসন্তুষ্ট, তেমনই আবার অভিবাসন নীতির কারণে হিস্পানিক সম্প্রদায়ের মধ্যে দেখা দিয়েছে হতাশা।

তবে, মাস্কের দল কতটা সফল হবে, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। কারণ, তৃতীয় দলগুলি সাধারণত দুটি প্রধান দলের তুলনায় অনেক কম সুবিধা পায়।

নির্বাচনী আইনও তাদের জন্য প্রতিকূল হতে পারে। তাছাড়া, মাস্কের অস্থির ও খামখেয়ালি আচরণও তার দলের জন্য সমস্যা তৈরি করতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, মাস্ক হয়তো কিছু নির্দিষ্ট আসনে অর্থ ঢেলে নির্বাচনে প্রভাব ফেলতে পারেন। এর মাধ্যমে তিনি হয়তো কিছু ক্ষেত্রে জয়ও পেতে পারেন।

কিন্তু দীর্ঘমেয়াদে দলের টিকে থাকা বা বড় ধরনের পরিবর্তন আনা কঠিন হতে পারে। কারণ, তৃতীয় দলগুলি প্রায়ই তাদের গুরুত্বপূর্ণ ধারণাগুলো প্রধান দলগুলোর দ্বারা গ্রহণ করার ফলে দুর্বল হয়ে পড়ে।

যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিতে মাস্কের এই নতুন পদক্ষেপ নিঃসন্দেহে একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। এটি ডোনাল্ড ট্রাম্পের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ এবং আগামী দিনের মার্কিন নির্বাচনে কেমন প্রভাব ফেলবে, তা এখন দেখার বিষয়।

তথ্য সূত্র: CNN

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *