যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্টে ভোটাধিকার আইন (Voting Rights Act) নিয়ে এক গুরুত্বপূর্ণ বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। এই আইনের একটি প্রধান ধারা, যা সংখ্যালঘু ভোটারদের অধিকার রক্ষার উদ্দেশ্যে তৈরি করা হয়েছিল, তা দুর্বল করার চেষ্টা চালাচ্ছেন বিচারপতি ক্লারেন্স থমাস।
দীর্ঘদিন ধরেই তিনি এই আইনের সমালোচনা করে আসছেন। তাঁর মতে, এই আইন সংখ্যালঘুদের ভোট প্রদানের অধিকার রক্ষার পরিবর্তে অনেক ক্ষেত্রে বিভেদ তৈরি করছে।
১৯৬৫ সালের ভোটাধিকার আইনটি মূলত কৃষ্ণাঙ্গ এবং অন্যান্য সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষকে ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত করার উদ্দেশ্যে প্রণীত বিভিন্ন পদ্ধতির বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য তৈরি করা হয়েছিল। কিন্তু বিচারপতি থমাসের যুক্তি হলো, এই আইনের মাধ্যমে এখন জাতিগত বিভাজন আরো বাড়ছে।
বিচারপতি থমাসের এই দৃষ্টিভঙ্গি শুরুতে খুব একটা সমর্থন পায়নি। তবে সময়ের সাথে সাথে, সুপ্রিম কোর্টে আরো রক্ষণশীল বিচারক আসায় তাঁর মতামত গুরুত্ব পেতে শুরু করেছে।
সম্প্রতি, লুইজিয়ানার একটি নির্বাচনী এলাকার সীমানা নির্ধারণ সংক্রান্ত মামলার শুনানিতে সুপ্রিম কোর্ট এই আইনের সুযোগ নিয়ে নতুন করে চিন্তাভাবনা করছে বলে মনে হচ্ছে। এই বিষয়টি ২০২৬ সালের নির্বাচন এবং তার পরবর্তী সময়ে কংগ্রেস ও রাজ্য আইনসভাগুলির নির্বাচনী এলাকার মানচিত্রের উপর প্রভাব ফেলতে পারে।
এর ফলে সংখ্যালঘুদের ভোটকে দুর্বল করার মতো কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হলে, তাঁদের অধিকার ক্ষুণ্ণ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
এই বিতর্কের মূল বিষয় হলো, নির্বাচনী এলাকা নির্ধারণের সময় সংখ্যালঘুদের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতে জাতিগত বিবেচনা করা হবে কিনা, নাকি কোনো জাতিগত বিভাজন ছাড়াই এলাকা চিহ্নিত করা হবে। এই মামলার শুনানির সময় প্রধান বিচারপতি জন রবার্টস সতর্ক করে বলেন, সংখ্যালঘুদের অধিকার রক্ষার জন্য এই আইনে যে ব্যবস্থা রয়েছে, তা থেকে সরে আসা উচিত হবে না।
অন্যদিকে, বিচারপতি থমাস মনে করেন, এই আইন সংবিধানের সাম্য রক্ষার নীতির পরিপন্থী। তাঁর মতে, এই আইনটিকে এখন ভিন্নভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে, যা জাতিগত উত্তেজনা আরও বাড়িয়ে তুলছে।
এই মামলার প্রেক্ষাপটে, একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন উঠেছে – ভোটাধিকার আইনের ২ নম্বর ধারাটি (Section 2) কার্যকর করার অধিকার কাদের? বর্তমানে, এই বিষয়েও বিতর্ক চলছে যে, কোনো ব্যক্তি বা কোনো সংগঠন এই আইনের অধীনে মামলা করতে পারবে কিনা।
যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগের ভূমিকাও এক্ষেত্রে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। ট্রাম্প প্রশাসনের সময়ে, এই বিভাগ ভোটাধিকার সংক্রান্ত কিছু মামলা থেকে নিজেদের সরিয়ে নেয়।
ফলে, এই আইনের প্রয়োগ নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন উঠেছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এই মামলার রায় শুধু যুক্তরাষ্ট্রের জন্য নয়, বরং গণতন্ত্রের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
কারণ, এর মাধ্যমে সংখ্যালঘুদের রাজনৈতিক অধিকার রক্ষার বিষয়টি নতুন করে বিবেচনা করা হবে। এর ফলস্বরূপ, আগামী দিনে নির্বাচনী ব্যবস্থায় সংখ্যালঘুদের প্রতিনিধিত্বের ক্ষেত্রে বড় ধরনের পরিবর্তন আসতে পারে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন