পুতিনের মন্ত্রী আত্মহত্যা? রাশিয়ায় ক্ষমতার ভয়ঙ্কর খেলা!

রাশিয়ার সাবেক মন্ত্রী ও পুতিনের শাসনের কড়া সমালোচনা

সম্প্রতি রাশিয়ার রাজনীতিতে চাঞ্চল্যকর কিছু ঘটনা ঘটেছে, যা দেশটির অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতিকে আরও একবার আলোচনায় এনেছে। এসব ঘটনার মধ্যে অন্যতম হলো দেশটির সাবেক পরিবহন মন্ত্রী রোমান স্টারোভোইতের মৃত্যু।

প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, তিনি আত্মহত্যা করেছেন। তবে তার মৃত্যুর কারণ নিয়ে ইতিমধ্যেই অনেক প্রশ্ন উঠেছে।

দুর্নীতির অভিযোগ ও আত্মহত্যারহস্য

সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, স্টারোভোইতের মৃতদেহের পাশ থেকে একটি গ্লক পিস্তল উদ্ধার করা হয়েছে, যা তিনি পুরস্কার হিসেবে পেয়েছিলেন। জানা গেছে, একসময় তিনি সীমান্ত রক্ষার জন্য বরাদ্দকৃত কয়েক মিলিয়ন ডলার আত্মসাৎ করেছেন।

এই ঘটনার সঙ্গে তার মৃত্যুর কোনো সম্পর্ক আছে কিনা, তা এখনো স্পষ্ট নয়। তবে ঘটনাটি বর্তমান রাশিয়ার রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে গভীর তাৎপর্য বহন করে।

রাজনৈতিক দমনপীড়ন ও বিরোধী কণ্ঠরোধ

রাশিয়ায় প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের ক্ষমতা আরও শক্ত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে রাজনৈতিক দমনপীড়নও বাড়ছে। বিরোধী দলগুলোকে হয় নিষিদ্ধ করা হচ্ছে, না হয় তাদের কার্যক্রম সীমিত করা হচ্ছে।

সম্প্রতি, “সিভিক ইনিশিয়েটিভ” নামের একটি বিরোধী দলকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। দলটি ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে যুদ্ধবিরোধী প্রার্থী বরিস নাদেজদিনকে সমর্থন করার চেষ্টা করেছিল।

এছাড়াও, রাশিয়ার নির্বাচন পর্যবেক্ষক সংস্থা ‘голос’ (গোলস)-কে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। সংস্থাটির সহ-সভাপতি গ্রিগরি মেলকোনিয়ান্টসকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।

পর্যবেক্ষক সংস্থাটি বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, ইউরোপীয় নির্বাচন পর্যবেক্ষণ নেটওয়ার্ক ENEMO-এর সঙ্গে যুক্ত থাকার দায়ে তাদের অভিযুক্ত করা হয়েছে।

অর্থনৈতিক নিয়ন্ত্রণ ও সম্পদ পুনর্বণ্টন

রাজনৈতিক দমনপীড়নের পাশাপাশি, রাশিয়ার সরকার অর্থনীতিতেও নিয়ন্ত্রণ জোরদার করছে। দেশটির বৃহত্তম স্বর্ণখনি কোম্পানি ‘ইউঝুরালজোলোতো’-র প্রধান কনস্টান্টিন স্ট্রুকোভকে দেশত্যাগের সময় গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

অভিযোগ উঠেছে, তিনি আঞ্চলিক সরকারের পদে থেকে কোম্পানির নিয়ন্ত্রণ নিজের হাতে নিয়েছিলেন।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে রাশিয়ায় সম্পদের পুনর্বণ্টন প্রক্রিয়া চলছে, যার মূল লক্ষ্য হলো পুতিনের প্রতি আনুগত্য বৃদ্ধি করা। শুধু তাই নয়, রাশিয়ার প্রসিকিউটর জেনারেলের তথ্য অনুযায়ী, প্রায় ২.৪ ট্রিলিয়ন রুবলের (প্রায় ৩,৩৭,০০০ কোটি বাংলাদেশী টাকা) বেশি মূল্যের কোম্পানিগুলোকে রাষ্ট্রের অধীনে আনা হয়েছে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, রাশিয়ার বর্তমান পরিস্থিতি স্তালিন আমলের কথা মনে করিয়ে দেয়, যেখানে ভিন্নমত পোষণকারীদের কঠোরভাবে দমন করা হতো।

রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও সাংবাদিক ইলিয়া ইয়াসিনের মতে, “এই ঘটনায় স্তালিনবাদের গন্ধ পাওয়া যাচ্ছে।”

বর্তমান পরিস্থিতিতে, রাশিয়ার ক্ষমতা কাঠামো ক্রমশ সংকুচিত হচ্ছে। সম্পদ ও ক্ষমতার সঙ্গে বাড়ছে ঝুঁকির পরিমাণ।

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *