আমার বিয়ের পোশাক: দ্বিধা থেকে পরিচয়ের উদযাপন!

বহুজাতিক বিবাহের পোশাকে সংস্কৃতির মেলবন্ধন: এক কনের অভিজ্ঞতা। বিয়ে একটি বিশেষ অনুষ্ঠান, যা প্রতিটি সংস্কৃতিতেই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

বাংলাদেশেও বিয়ের আয়োজন হয় ব্যাপক, যেখানে যুগ যুগ ধরে চলে আসা নানা ঐতিহ্য ও রীতিনীতি পালন করা হয়। সময়ের সাথে সাথে, বিশ্বায়নের প্রভাবে আন্তঃসাংস্কৃতিক বিবাহ বাড়ছে, যেখানে ভিন্ন সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের মানুষরা একত্রে জীবন শুরু করেন।

এমন একটি প্রেক্ষাপটে, বিয়ের পোশাক নির্বাচন করাটা অনেক সময় বেশ কঠিন হয়ে পড়ে, বিশেষ করে যখন দুটি ভিন্ন সংস্কৃতির ঐতিহ্যকে সম্মান জানাতে হয়।

সম্প্রতি, সিএনএন-এ প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে এমনই এক কনের গল্প তুলে ধরা হয়েছে, যিনি তাঁর চীনা ঐতিহ্য এবং ব্রিটিশ স্বামীর সংস্কৃতির মধ্যে সমন্বয় ঘটিয়ে বিয়ের পোশাক নির্বাচন করতে গিয়ে নানা দ্বিধায় পড়েছিলেন। কনে তাঁর নিজের সংস্কৃতি এবং স্বামীর সংস্কৃতির প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকতে চেয়েছেন।

কনের মা ১৯৮০-এর দশকে হংকং-এ এক চীনা বিবাহ অনুষ্ঠানে পরেছিলেন উজ্জ্বল কমলা রঙের একটি গাউন। এই পোশাকটি ছিল পশ্চিমা ফ্যাশনের আদলে তৈরি। কনে মনে করেন, তাঁর মায়ের সেই পোশাকটি তাঁর কাছে অনুপ্রেরণা।

তিনি চেয়েছেন, তাঁর বিয়ের পোশাকেও যেন তাঁর “পরিচয়” এবং ব্যক্তিগত রুচির প্রতিফলন ঘটে।

কিন্তু বিষয়টি এত সহজ ছিল না। অনলাইন জগৎ থেকে শুরু করে বিভিন্ন ব্রাইডাল শপগুলোতে, তিনি তাঁর কাঙ্ক্ষিত পোশাক খুঁজে পেতে বেশ বেগ পাচ্ছিলেন। তাঁর মনে নানা প্রশ্ন জাগছিল – তিনি কি ঐতিহ্যবাহী চীনা ‘চেওংসাম’ বা ‘কিপাও’ পরবেন, নাকি সাদা বিয়ের পোশাক?

নাকি দুটিই?

এই দ্বিধা কাটিয়ে উঠতে, তিনি বিভিন্ন ডিজাইন দেখতে শুরু করেন এবং অবশেষে একটি সমাধানে পৌঁছান। তিনি তাঁর বিয়ের অনুষ্ঠানে পশ্চিমা ও চীনা – উভয় সংস্কৃতির প্রতি সম্মান জানানোর সিদ্ধান্ত নেন।

তিনি একাধিক পোশাক পরেন, যা তাঁর এবং তাঁর স্বামীর সংস্কৃতিকে তুলে ধরে।

এই কাহিনীর মাধ্যমে আমরা বুঝতে পারি, বহুজাতিক বিয়ের ক্ষেত্রে পোশাক নির্বাচন করাটা শুধু ফ্যাশনের বিষয় নয়, বরং দুটি ভিন্ন সংস্কৃতিকে সম্মান জানানোর একটি গুরুত্বপূর্ণ উপায়। এক্ষেত্রে, নিজের সংস্কৃতিকে ধরে রাখা এবং ভালোবাসার মানুষের সংস্কৃতির প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়া – দুটোই জরুরি।

এই ধরনের দ্বিধা শুধু কনের একার নয়, বরং অনেক যুগলের মনেই এই ধরনের প্রশ্ন আসে। অনেক সময়, তাঁরা তাঁদের সংস্কৃতিকে তুলে ধরতে চান, আবার কখনও মনে হয়, সমাজের চোখে তাঁরা যেন “সাংস্কৃতিক প্রতীক”-এ পরিণত না হন।

বিশেষজ্ঞদের মতে, এই ধরনের পরিস্থিতিতে দু’জনের রুচি ও পছন্দের প্রতি সম্মান জানিয়ে পোশাক নির্বাচন করা যেতে পারে। বিয়ের অনুষ্ঠানে ঐতিহ্যবাহী পোশাক পরা যেতে পারে, যা কনের সংস্কৃতিকে তুলে ধরবে।

আবার, পশ্চিমা ধাঁচের পোশাকেও নিজের রুচি অনুযায়ী, কিছু পরিবর্তন আনা যেতে পারে, যা উভয় সংস্কৃতির মেলবন্ধন ঘটাবে।

আর্টিকেলটিতে আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় উঠে এসেছে। তা হলো, পরিবারের সমর্থন।

যুগলের এই সিদ্ধান্তকে পরিবারের সদস্যরা কীভাবে গ্রহণ করবে, তা নিয়েও অনেক সময় দুশ্চিন্তা থাকে। তবে, ভালোবাসার জয় সব সময়ই হয়, এবং পরিবারের সমর্থন থাকলে, এই ধরনের দ্বিধা কাটিয়ে ওঠা সম্ভব।

সবশেষে, কনে তাঁর বিয়ের দিনটিতে একাধিক পোশাক পরেছিলেন। তাঁর পরনে ছিল ঐতিহ্যবাহী ‘কুন-কোয়া’।

তাঁর স্বামী পরেছিলেন matching ‘ট্যাং স্যুট’। মা-বাবা, বন্ধু-বান্ধব এবং পরিবারের সদস্যদের উপস্থিতিতে, তাঁরা দু’জনে তাঁদের ভালোবাসার উদযাপন করেন।

এই গল্পটি আমাদের মনে করিয়ে দেয়, বিয়ের পোশাক নির্বাচন একটি জটিল বিষয় হতে পারে, তবে ভালোবাসা এবং শ্রদ্ধাবোধ থাকলে, দুটি সংস্কৃতির মধ্যে সুন্দর একটি সমন্বয় ঘটানো সম্ভব।

তথ্যসূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *