মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কিউবার রাষ্ট্রপতি মিগুয়েল দিয়াজ-কানেল এবং আরও কয়েকজন শীর্ষ কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। শুক্রবার (গতকাল) এই খবর প্রকাশ করে আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যম।
যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ২০২১ সালের জুলাই মাসে কিউবায় সরকার বিরোধী বিক্ষোভকারীদের ওপর দমন-পীড়নের সঙ্গে জড়িত থাকার কারণেই এই নিষেধাজ্ঞা। বিক্ষোভের বর্ষপূর্তিতে এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, যা দ্বীপটিতে সাম্প্রতিক দশকগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বড় প্রতিবাদ ছিল।
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মারকো রুবিও সামাজিক মাধ্যম ‘এক্স’-এ দেওয়া এক বার্তায় জানিয়েছেন, পররাষ্ট্র দপ্তর কিউবার বিচার বিভাগীয় এবং কারা কর্মকর্তাদের ভিসা নিষেধাজ্ঞার আওতায় আনবে। রুবিও বলেন, “যারা ২০২১ সালের জুলাই মাসের বিক্ষোভকারীদের ওপর নির্যাতন এবং তাদের অন্যায়ভাবে কারারুদ্ধ করার জন্য দায়ী, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
২০২১ সালের ১১ ও ১২ জুলাই এই বিক্ষোভগুলো সংগঠিত হয়েছিল, যার মূল কারণ ছিল কিউবার গভীর অর্থনৈতিক সংকট। বিক্ষোভকারীরা দেশটির খারাপ অর্থনৈতিক অবস্থার প্রতিবাদ জানাচ্ছিল। রুবিও আরও বলেন, “যুক্তরাষ্ট্র কিউবার জনগণের মানবাধিকার এবং মৌলিক স্বাধীনতার পক্ষে সমর্থন অব্যাহত রাখবে এবং স্পষ্ট করে বলতে চায় যে, আমাদের গোলার্ধে কোনো স্বৈরাচারী শাসনের স্থান নেই।”
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, বাইডেন প্রশাসনের তুলনায় কিউবার সরকারের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছে। নিষেধাজ্ঞার আওতায় আসা কর্মকর্তাদের মধ্যে রয়েছেন কিউবার প্রতিরক্ষামন্ত্রী আলভারো লোপেজ মিয়েরা এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ল্যাজারো আলভারেজ কাসাস।
এই ঘোষণার পরপরই কিউবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মার্কিন বিভাগের উপ-পরিচালক জোহানা তাবলাদা রুবিওকে একহাত নিয়েছেন। তিনি রুবিওকে ‘গণহত্যা, কারাগার এবং ব্যাপক বিতাড়নের সমর্থক’ হিসেবে অভিহিত করেছেন।
২০২১ সালের বিক্ষোভগুলো হাভানা ও অন্যান্য শহরে বিদ্যুতের বিভ্রাটের কারণে শুরু হয়েছিল। বিক্ষোভের সময় একজন নিহত হন এবং কিছু বিক্ষোভে ভাঙচুরের ঘটনাও ঘটে। সরকারের সমর্থক গোষ্ঠীগুলো কর্তৃপক্ষের সঙ্গে মিলে বিক্ষোভ দমনে ঝাঁপিয়ে পড়ে। মানবাধিকার সংগঠনগুলোর হিসাব অনুযায়ী, এক হাজারের বেশি মানুষকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। তবে, কিউবা সরকার কোনো আনুষ্ঠানিক সংখ্যা প্রকাশ করেনি।
সেসময় কিউবা সরকার এই বিক্ষোভের জন্য মার্কিন গণমাধ্যম এবং যুক্তরাষ্ট্রের দশকের পর দশক ধরে চলা নিষেধাজ্ঞাকে দায়ী করে। ২০২২ সালে কিউবার কৌঁসুলিরা জানান, বিক্ষোভের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে প্রায় ৭৯০ জনের বিরুদ্ধে তদন্ত করা হয়েছে। তাদের মধ্যে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি, নাশকতা এবং ভাঙচুরের মতো অভিযোগ ছিল।
১১জে নামক একটি সংগঠন, যা বিক্ষোভের প্রতি ইঙ্গিত করে, তারা গত বছরের শেষের দিকে জানায়, বিক্ষোভের সঙ্গে সম্পর্কিত ৫৫৪ জন এখনো কারাদণ্ড ভোগ করছেন। তবে, পোপ ফ্রান্সিসের আবেদনের পর তাদের মধ্যে কয়েকজনকে জানুয়ারিতে শর্তসাপেক্ষে মুক্তি দেওয়া হয়েছে।
তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস