লেবাননের প্রেসিডেন্ট বর্তমানে ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার কোনো পরিকল্পনা নেই বলে জানিয়েছেন। দেশটির প্রধান লক্ষ্য হলো প্রতিবেশী দেশটির সঙ্গে “যুদ্ধহীন অবস্থা” নিশ্চিত করা। শুক্রবার দেশটির প্রেসিডেন্ট মিশেল আউনের কার্যালয় থেকে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে এ কথা জানানো হয়।
যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন ট্রাম্প প্রশাসন ২০২০ সালে ইসরায়েলের সঙ্গে সংযুক্ত আরব আমিরাত ও বাহরাইনের মধ্যে ঐতিহাসিক সম্পর্ক স্থাপন করার জন্য আব্রাহাম চুক্তি স্বাক্ষরের চেষ্টা করছিল। এমন একটি প্রেক্ষাপটে লেবাননের প্রেসিডেন্টের এই মন্তব্য বিশেষভাবে তাৎপর্যপূর্ণ।
প্রেসিডেন্ট আউনের মতে, বর্তমানে লেবাননের পররাষ্ট্রনীতির প্রধান দিক হলো ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণ নয়, বরং “যুদ্ধহীন অবস্থা” তৈরি করা। তিনি আরও বলেন, ভবিষ্যতে কেবল লেবানন রাষ্ট্রই অস্ত্র ধারণ করবে এবং যুদ্ধ ঘোষণা করা হবে কিনা সেই সিদ্ধান্ত নেবে দেশটির সরকার।
তাঁর এই মন্তব্যের মাধ্যমে তিনি সম্ভবত হিজবুল্লাহর দিকে ইঙ্গিত করেছেন। হিজবুল্লাহ একটি শক্তিশালী রাজনৈতিক ও সামরিক সংগঠন, যাদের সঙ্গে ইসরায়েলের দীর্ঘদিনের বিরোধ রয়েছে।
২০০৬ সালে হিজবুল্লাহ এবং ইসরায়েলের মধ্যে ১৪ মাস স্থায়ী একটি যুদ্ধ হয়েছিল, যেখানে হিজবুল্লাহর অনেক শীর্ষস্থানীয় রাজনৈতিক ও সামরিক কমান্ডার নিহত হন। হিজবুল্লাহ দাবি করে যে তারা ইসরায়েল সীমান্তের কাছে তাদের সশস্ত্র উপস্থিতি কমিয়ে দিয়েছে, তবে ইসরায়েল সীমান্ত থেকে সেনা প্রত্যাহার এবং লেবাননের উপর প্রায়শই বিমান হামলা বন্ধ না করা পর্যন্ত তারা অস্ত্র ত্যাগ করতে রাজি নয়।
এদিকে, মার্কিন দূত টম ব্যারাক সম্প্রতি বৈরুতে লেবাননের নেতাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন এবং হিজবুল্লাহকে নিরস্ত্রীকরণের প্রস্তাবের বিষয়ে লেবানন সরকারের প্রতিক্রিয়ায় সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন।
ইসরায়েল ২০০০ সালে দক্ষিণ লেবানন থেকে সেনা প্রত্যাহার করার পর থেকেই হিজবুল্লাহর অস্ত্র একটি প্রধান উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এরপর হিজবুল্লাহ ইসরায়েলের সঙ্গে দুটি যুদ্ধ করেছে।
এর মধ্যে একটি ২০০৬ সালে এবং অন্যটি ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাস-এর নেতৃত্বে ইসরায়েলে আক্রমণের পর শুরু হয়েছিল, যা গাজায় যুদ্ধের সূত্রপাত করে।
হিজবুল্লাহ ও ইসরায়েলের মধ্যেকার এই যুদ্ধ নভেম্বরে একটি মার্কিন-মধ্যস্থতা চুক্তির মাধ্যমে শেষ হয়। এতে লেবাননে ৪,০০০ জনের বেশি এবং ইসরায়েলে ১২৭ জন নিহত হয়। শুধুমাত্র লেবাননে ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ১১ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের সমান।
লেবানন ও ইসরায়েল ১৯৪৮ সাল থেকে কার্যত যুদ্ধাবস্থায় রয়েছে।
তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস