আতঙ্কের স্মৃতি: ট্রাম্পের ওপর হামলার পর বদলে গিয়েছিল সবকিছু!

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ওপর এক বছর আগে হওয়া প্রাণঘাতী হামলার ঘটনা দেশটির রাজনৈতিক অঙ্গনে গভীর প্রভাব ফেলেছে। এই ঘটনার জেরে ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের গতিপথ যেমন পাল্টে যায়, তেমনই ট্রাম্পের রাজনৈতিক অনুসারীদের মধ্যে ‘ম্যাগা’ (Make America Great Again) আন্দোলনের কর্মীদের মনোবল আরও দৃঢ় হয়।

এমনকি, ঘটনার শিকার ট্রাম্পের নিজের মধ্যেও এই ঘটনার প্রতিক্রিয়া ছিল সুদূরপ্রসারী।

২০২৪ সালের ১৩ই জুলাই, পেনসিলভেনিয়ার বাটলারে এক নির্বাচনী সমাবেশে ভাষণ দেওয়ার সময় ট্রাম্পের ওপর গুলি চালানো হয়। অল্পের জন্য তিনি প্রাণে বাঁচেন।

এরপর দ্রুত দৃশ্যপট পরিবর্তন হতে থাকে। হামলার ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ট্রাম্প তাঁর রানিং মেট হিসেবে তৎকালীন সিনেটর জে ডি ভ্যান্সকে বেছে নেন। এর কয়েক দিন পরেই মিলওয়াকিতে রিপাবলিকান ন্যাশনাল কনভেনশনে আহত অবস্থায় হাজির হন তিনি।

কানে ব্যান্ডেজ বাঁধা ট্রাম্পকে দেখে তাঁর সমর্থকেরা উজ্জীবিত হন। এর মধ্যে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বিতর্কের ফলস্বরূপ নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা করেন।

ট্রাম্পের দল, ঘটনার পর তাঁদের প্রচারের কৌশল পরিবর্তন করে। হোয়াইট হাউসের এক কর্মকর্তা সিএনএনকে জানান, ট্রাম্পের দল নির্বাচনের শেষ সময়ে প্রাক্তন প্রেসিডেন্টের কর্মসূচি আরও জোরদার করে। তাঁদের লক্ষ্য ছিল, ট্রাম্পকে আগের চেয়েও বেশি দৃঢ়প্রতিজ্ঞ প্রমাণ করা।

ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, “যদি কেউ এমনটা করার চেষ্টা করে, তাহলে আমরা আরও কঠিনভাবে লড়ব। এটা নির্বাচনের চেয়েও বড় কিছু ছিল।”

গুলির আঘাত থেকে রক্ষা পাওয়ার পর ট্রাম্প তৎক্ষণাৎ মঞ্চে উপস্থিত জনতার উদ্দেশে চিৎকার করে ওঠেন, “ফাইট, ফাইট, ফাইট!” (যুদ্ধ, যুদ্ধ, যুদ্ধ!)।

এই ঘটনার পর ট্রাম্পের উপদেষ্টারা জানান, ওই মুহূর্তে তিনি তাঁর সমর্থকদের কাছে একটি শক্তিশালী ভাবমূর্তি তুলে ধরতে চেয়েছিলেন। তাঁর ঘনিষ্ঠরা জানান, ট্রাম্প বিশ্বাস করতেন, ঈশ্বর সেদিন তাঁকে বাঁচিয়েছেন।

এরপর থেকে তিনি প্রায়ই তাঁর ভাষণে ১৩ই জুলাইয়ের ঘটনার কথা উল্লেখ করেন।

ঘটনার স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে ট্রাম্প প্রায়ই একটি চার্টের কথা বলতেন, যেখানে তাঁর আগের মেয়াদে মেক্সিকো সীমান্ত অতিক্রমের বিস্তারিত তথ্য ছিল। তিনি দাবি করেন, ওই চার্টটির দিকে তাকিয়ে থাকার কারণেই সেদিন তাঁর জীবন বেঁচে যায়।

এমনকি, তিনি বলেছিলেন, “আমি সারা জীবন ওই চার্টটি সঙ্গে নিয়ে ঘুমাব।”

ঘটনার এক বছর পর, আইওয়াতে দেওয়া এক ভাষণে ট্রাম্প বলেন, “আমি কি কিছু শুনলাম? ভয় পাওয়ার কিছু নেই, আমি আশা করি এটা শুধু আতশবাজি!” বাটলারে হামলার পর থেকে ট্রাম্পের প্রতিটি উন্মুক্ত স্থানের বক্তৃতায় বুলেটপ্রুফ কাঁচের ব্যবস্থা করা হতো।

ঘটনার দিন বাটলারে উপস্থিত অনেকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তাঁদের মধ্যে অনেকে এই ঘটনায় আতঙ্কিত হয়ে পড়েছিলেন। কেউ কেউ মনে করেছিলেন, মিডিয়া ও ডেমোক্র্যাটরা ট্রাম্পের প্রতি বিদ্বেষ ছড়িয়েছে।

আবার অনেকে আমেরিকার এই সহিংস পরিস্থিতিতে গভীর দুঃখ প্রকাশ করেন। তবে, ট্রাম্পের দৃঢ়তা দেখে তাঁরাও অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন।

তাঁদের অনেকেই বলেছিলেন, ট্রাম্প যদি গুলিবিদ্ধ হয়েও ‘যুদ্ধ’ ঘোষণা করতে পারেন, তবে তাঁরাও তাঁর পাশে থাকবেন।

পরে ট্রাম্প বাটলারে ফিরে যান এবং তাঁর অসমাপ্ত ভাষণ দেন। সেখানে তিনি বলেন, “আমি সেদিন বলেছিলাম, আমরা ফিরে আসব। এবং আমি সেই প্রতিশ্রুতি রক্ষা করছি।”

বাটলারে ট্রাম্পের দ্বিতীয় সফরে তাঁর সমর্থকদের মধ্যে আগের মতোই উৎসাহ দেখা যায়। তাঁদের মধ্যে অনেকেই জানান, তাঁরা তাঁদের নেতার প্রতি সমর্থন জানাতে পুনরায় এসেছেন।

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *