যুক্তরাষ্ট্রে স্বাস্থ্যখাতে ব্যয়ের বোঝা কমাতে কর্মীদের ওপর চাপ বাড়াতে চাইছে অনেক কোম্পানি। আগামী বছর, অর্থাৎ ২০২৬ সাল থেকে কর্মীদের স্বাস্থ্য বীমার খরচ বাড়ানোর পরিকল্পনা করছে তারা। সম্প্রতি প্রকাশিত এক জরিপে এমন তথ্য উঠে এসেছে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সাধারণত কর্মীরা তাদের কর্মস্থলের মাধ্যমে স্বাস্থ্য বীমা পেয়ে থাকেন। তবে স্বাস্থ্যখাতে ক্রমবর্ধমান খরচ বেড়ে যাওয়ায় অনেক কোম্পানি চাইছে কর্মীদের ওপর এই খরচের একটা অংশ চাপাতে। জরিপ অনুযায়ী, অর্ধেকের বেশি কোম্পানি তাদের কর্মীদের স্বাস্থ্য বীমা পরিকল্পনায় পরিবর্তন আনতে চাইছে। এর ফলে কর্মীদের স্বাস্থ্য বীমার প্রিমিয়ামের খরচ বাড়বে, সেই সঙ্গে বার্ষিক ডিডাক্টিবল এবং আউট-অফ-পকেট সর্বোচ্চ সীমাও বাড়তে পারে। ডিডাক্টিবল হলো বীমা কোম্পানি খরচ দেওয়ার আগে কর্মীদের যে পরিমাণ অর্থ পরিশোধ করতে হয়, আর আউট-অফ-পকেট হলো স্বাস্থ্যসেবার জন্য কর্মীদের নিজস্ব পকেট থেকে করা সর্বোচ্চ খরচ।
মার্সার নামক একটি গবেষণা সংস্থার স্বাস্থ্য ও সুবিধা বিষয়ক জরিপে এই তথ্য উঠে এসেছে। তাদের মতে, গত কয়েক বছরে শ্রমবাজারের অস্থিরতা এবং জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় কোম্পানিগুলো কর্মীদের ওপর আর্থিক চাপ বাড়াতে দ্বিধা বোধ করছিল। কিন্তু বর্তমানে স্বাস্থ্যখাতে খরচ বেড়ে যাওয়ায় তারা এই সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হচ্ছে।
মার্সারের স্বাস্থ্য ও সুবিধা বিভাগের গবেষণা পরিচালক বেথ উমল্যান্ড জানান, কোম্পানিগুলো এমন একটা পর্যায়ে পৌঁছেছে যেখানে তারা আর স্বাস্থ্যখাতে ক্রমবর্ধমান খরচ বহন করতে পারছে না।
কোম্পানিগুলো ধারণা করছে, এই বছর তাদের স্বাস্থ্য সুবিধা বাবদ খরচ প্রায় ৬ শতাংশ পর্যন্ত বাড়তে পারে। যেখানে গত বছর এই খরচ বেড়েছিল প্রায় ৪.৫ শতাংশ। মার্সারের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান স্বাস্থ্য বিষয়ক অ্যাকচুয়ারি সনিট প্যাটেলের মতে, রোগীদের স্বাস্থ্যসেবা ব্যবহারের বৃদ্ধি এবং ডাক্তারদের আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স (artificial intelligence) ব্যবহারের কারণে আগামী বছরগুলোতে এই খরচ আরও বাড়তে পারে।
ওজন কমানোর ওষুধ, যেমন জিএলপি-১ (GLP-1) মেডিসিনের খরচও একটি উদ্বেগের কারণ। এই ওষুধগুলো বেশ জনপ্রিয়, তবে এদের দাম অনেক বেশি। জরিপে দেখা গেছে, যেসব কোম্পানির কর্মী সংখ্যা ২০ হাজারের বেশি, তাদের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ কর্মী এই ধরনের ওষুধের সুবিধা পেয়ে থাকেন। এছাড়া, যাদের কর্মী সংখ্যা ৫০০ বা তার বেশি, তাদের ৪৪ শতাংশও এই সুবিধা দিয়ে থাকে। তবে উমল্যান্ড মনে করেন, আগামী বছরগুলোতে এই সুবিধা দেওয়ার হার কমে যেতে পারে।
সনিট প্যাটেল আরও জানান, কোম্পানিগুলো হয়তো কর্মীদের এই সুবিধা দেওয়া বন্ধ করতে চাইবে না, তবে তারা এর যোগ্যতা সীমিত করতে পারে অথবা আরও বেশি কাগজপত্র জমা দেওয়ার নিয়ম করতে পারে, যা কর্মীদের জন্য সুবিধাটি পাওয়া কঠিন করে তুলবে।
অন্যদিকে, কর্মীদের মানসিক স্বাস্থ্যসেবার প্রতি কোম্পানিগুলো এখনো আগের মতোই গুরুত্ব দিচ্ছে। অনেক কোম্পানি তাদের কর্মীদের জন্য কর্মক্ষেত্রে কাউন্সেলিংয়ের ব্যবস্থা করছে। আগামী বছর প্রায় ৩৫ শতাংশ কোম্পানি এই ধরনের সুবিধা চালু করতে যাচ্ছে, যা বর্তমানে ২৯ শতাংশ। এছাড়াও, তারা কাউন্সেলিং সেশনের সংখ্যাও বাড়াচ্ছে, যা আগেকার ৩-৫ সেশন থেকে বেড়ে ৬-৮ সেশনে দাঁড়িয়েছে।
মার্সারের জরিপে আরও দেখা গেছে, কর্মীরা কাজে ফিরতে শুরু করায় কোম্পানিগুলো তাদের কর্মীদের জন্য শিশু ও বয়স্কদের যত্ন নেওয়ার সুবিধার ওপর জোর দিচ্ছে। বড় কোম্পানিগুলোর মধ্যে ৫৪ শতাংশ হয়তো আগামী বছর তাদের কর্মীদের জন্য শিশু যত্ন বিষয়ক সুবিধা দেবে, যেখানে কর্মীদের জন্য ডে-কেয়ার সেন্টার খোঁজার প্ল্যাটফর্ম, জরুরি শিশু যত্ন পরিষেবা অথবা টিউশন ফি-তে ছাড়ের ব্যবস্থা থাকতে পারে। একইভাবে, ৫৮ শতাংশ কোম্পানি বয়স্কদের যত্ন নেওয়ার সুবিধা দেওয়ার পরিকল্পনা করছে। এর মধ্যে শোক কাউন্সেলিং, বয়স্কদের যত্ন নেওয়ার প্ল্যাটফর্ম এবং জরুরি বয়স্ক যত্ন পরিষেবা অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে।
এছাড়াও, ৫৯ শতাংশ কোম্পানি নারীদের প্রজনন স্বাস্থ্য বিষয়ক সহায়তা দেওয়ার পরিকল্পনা করছে। এর মধ্যে স্তন্যপান সহায়তা, উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ গর্ভধারণ এবং গর্ভধারণ-পূর্ব পারিবারিক পরিকল্পনা অন্তর্ভুক্ত।
সাধারণত, কর্মীদের স্বাস্থ্য বীমার সুবিধা সংক্রান্ত বিস্তারিত তথ্য জানার জন্য বার্ষিক ‘ওপেন এনরোলমেন্ট’ প্রক্রিয়ার আয়োজন করা হয়, যা সাধারণত শরৎকালে হয়ে থাকে।
তথ্যসূত্র: সিএনএন