মহিলাদের জীবনে একটি গুরুত্বপূর্ণ পর্যায় হলো মেনোপজ, যা স্বাভাবিক শারীরিক পরিবর্তনের অংশ। তবে মেনোপজের আগে শরীরে কিছু লক্ষণ দেখা দেয়, যা ‘পেরিমেনোপজ’ নামে পরিচিত।
এই সময়ে নারীদের শরীরে হরমোনের পরিবর্তন ঘটে, যার ফলে বিভিন্ন শারীরিক ও মানসিক সমস্যা দেখা দিতে পারে। এই আর্টিকেলে আমরা পেরিমেনোপজের প্রাথমিক কিছু লক্ষণ নিয়ে আলোচনা করবো, যা আপনাকে এই পরিবর্তনের সঙ্গে মানিয়ে নিতে সাহায্য করবে।
পেরিমেনোপজ আসলে মেনোপজের আগের সময়কাল। মেনোপজ হলো যখন কোনো মহিলার মাসিক এক বছর বন্ধ থাকে। পেরিমেনোপজ কয়েক বছর ধরে চলতে পারে এবং এর লক্ষণগুলো একেকজনের ক্ষেত্রে ভিন্ন হতে পারে।
তবে কিছু সাধারণ লক্ষণ রয়েছে যা অনেকের মধ্যেই দেখা যায়।
মাসিকের পরিবর্তন পেরিমেনোপজের একটি সাধারণ লক্ষণ। এই সময়ে মাসিক চক্র অনিয়মিত হয়ে যেতে পারে। মাসিক আগে বা পরে হতে পারে, অথবা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি বা কম দিন ধরে চলতে পারে।
কারো কারো ক্ষেত্রে ঋতুস্রাবের পরিমাণেও ভিন্নতা দেখা দিতে পারে। শরীরে ইস্ট্রোজেন এবং প্রোজেস্টেরন হরমোনের তারতম্যের কারণে এমনটা হয়ে থাকে, যা মাসিক চক্রকে নিয়ন্ত্রণ করে।
হঠাৎ গরম অনুভব হওয়া বা ‘হট ফ্ল্যাশ’ পেরিমেনোপজের আরেকটি পরিচিত উপসর্গ। হট ফ্ল্যাশ হলে হঠাৎ করে গরম লাগতে শুরু করে, বিশেষ করে মুখ, ঘাড় ও বুকে। রাতে ঘুমের সময়ও এটা হতে পারে, যাকে ‘নাইট সোয়েট’ বা রাতের ঘাম বলা হয়।
হরমোনের পরিবর্তনের কারণে শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণের স্বাভাবিক প্রক্রিয়া ব্যাহত হওয়ার ফলে এমনটা হয়।
ঘুমের ধরনেও পরিবর্তন আসতে পারে। পেরিমেনোপজের সময় সহজে ঘুম আসতে চায় না বা ঘুমের মধ্যে জেগে যাওয়ার সমস্যা হতে পারে। প্রোজেস্টেরনের মাত্রা কমে গেলে অনিদ্রা দেখা দিতে পারে।
রাতের ঘাম ঘুমের ব্যাঘাত ঘটাতে পারে।
মানসিক স্বাস্থ্যের পরিবর্তনও এই সময়ে স্বাভাবিক। হরমোনের পরিবর্তনের কারণে মেজাজ দ্রুত ওঠানামা করতে পারে। হঠাৎ করে রাগ, উদ্বেগ, বিষণ্ণতা অথবা বিরক্তি আসতে পারে।
অনেক মহিলা ‘ব্রেন ফগ’-এর অভিজ্ঞতাও লাভ করেন, অর্থাৎ মানসিক দুর্বলতা অনুভব করেন। কোনো কিছু মনে রাখতে বা মনোযোগ দিতে অসুবিধা হতে পারে। এটি সাধারণত সাময়িক হয় এবং ঘুমের অভাব বা হরমোনের পরিবর্তনের কারণে হতে পারে।
যৌনজীবনেও পরিবর্তন আসতে পারে। কারো কারো ক্ষেত্রে যৌন চাহিদা কমে যেতে পারে। আবার কারো কারো ক্ষেত্রে এটি অপরিবর্তিত থাকতে পারে।
এছাড়াও, যোনিতে শুষ্কতা, জ্বালাপোড়া বা অস্বস্তি হতে পারে। ইস্ট্রোজেনের মাত্রা কমে যাওয়ার কারণে এমনটা হতে পারে। প্রস্রাবের সমস্যা যেমন—ঘন ঘন প্রস্রাব হওয়া বা ইউরিনারি ট্র্যাক্ট ইনফেকশন (ইউটিআই) হওয়ার প্রবণতাও বাড়তে পারে।
পেরিমেনোপজের প্রাথমিক লক্ষণগুলো সম্পর্কে ধারণা থাকলে এই সময়ের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়া সহজ হয়। জীবনযাত্রায় কিছু পরিবর্তন আনা, যেমন—নিয়মিত শরীরচর্চা করা, পর্যাপ্ত বিশ্রাম নেওয়া এবং মানসিক চাপ কমানো এক্ষেত্রে সহায়ক হতে পারে।
এছাড়াও, কোনো সমস্যা হলে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত। আপনার স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতন থাকুন এবং প্রয়োজনে চিকিৎসকের সাহায্য নিন।
তথ্য সূত্র: হেলথলাইন