অস্ট্রিয়ার দুঃসাহসী স্কাইডাইভার ফেলিক্স Baumgartner, যিনি ২০১৯ সালে মহাশূন্য থেকে রেকর্ড সৃষ্টিকারী ঝাঁপ দেওয়ার জন্য সুপরিচিত ছিলেন, ইতালিতে প্যারাগ্লাইডিং করার সময় দুর্ঘটনায় মারা গেছেন। স্থানীয় সংবাদ মাধ্যম বৃহস্পতিবার এই খবর জানায়।
৫৬ বছর বয়সী Baumgartner ইতালির উপকূলীয় শহর পোর্তো স্যান্ট’এলপিডিও-তে প্যারাগ্লাইডিং করার সময় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে একটি হোটেলের সুইমিং পুলে পড়ে যান। এই দুর্ঘটনায় তার মৃত্যু হয়। ইতালির জাতীয় সম্প্রচার মাধ্যম RAI এর খবর অনুযায়ী, কর্তৃপক্ষ দুর্ঘটনার সঠিক কারণ অনুসন্ধানে কাজ করছে।
ফেলিক্স Baumgartner, যিনি মালয়েশিয়ার পেট্রোনাস টাওয়ার এবং ব্রাজিলের ক্রাইস্ট দ্য রিডিমার মূর্তি থেকে বেস জাম্পিংয়ের মতো দুঃসাহসিক কাজ করেছেন, ২০১২ সালে আন্তর্জাতিক খ্যাতি অর্জন করেন। তিনি প্রায় ২৪ মাইল (৩৮.৬ কিলোমিটার) উপর থেকে একটি চাপযুক্ত ক্যাপসুল থেকে ঝাঁপ দিয়ে বিশ্ব রেকর্ড গড়েছিলেন।
Baumgartner এর এই রেকর্ড গড়ার পেছনে ছিল ‘রেড বুল’-এর পৃষ্ঠপোষকতা। রেড বুল এক বিবৃতিতে জানায়, “আমাদের দীর্ঘদিনের বন্ধু ফেলিক্স Baumgartner-এর মর্মান্তিক মৃত্যু সংবাদে আমরা শোকাহত ও দুঃখিত। ফেলিক্স জন্মগতভাবে উড়তে ভালোবাসতেন এবং সবসময় সীমা অতিক্রম করতে চাইতেন। তিনি ছিলেন বুদ্ধিমান, পেশাদার, খুঁতখুঁতে এবং বিস্তারিতভাবে সবকিছু করতেন। তিনি ছিলেন উদার এবং অনেক মানুষকে অনুপ্রাণিত করেছেন।”
ঐতিহাসিক সেই জাম্পের এক দশক পরে, Baumgartner সিএনএন-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে সেই মুহূর্তের অনুভূতি বর্ণনা করেছিলেন। তিনি বলেন, “আমি মহাশূন্যের একটি ক্যাপসুলের বাইরে, পৃথিবীর উপরে, স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারে দাঁড়িয়ে ছিলাম। আমার উপরের আকাশ ছিল সম্পূর্ণ কালো।”
পৃথিবীতে ফিরে আসার সময় তার গতিবেগ ছিল ঘন্টায় ৮৪০ মাইলের বেশি, যা শব্দের গতিকেও ছাড়িয়ে গিয়েছিল। Baumgartner-এর এই ‘রেড বুল স্ট্র্যাটোস’ ফ্রি-ফল পরিকল্পনা করতে ছয় বছর সময় লেগেছিল, যেখানে জাম্পের প্রতিটি বিষয় নিয়ে কাজ করা হয়েছিল।
স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারে Baumgartner-কে পাঠাতে তার দলটিকে ৩৩টি ফুটবল মাঠের সমান একটি বিশাল হিলিয়াম বেলুন তৈরি করতে হয়েছিল, যার ওজন ছিল প্রায় ১,৬৮২ কিলোগ্রাম। বেলুনের উপাদানটি ছিল একটি স্যান্ডউইচ ব্যাগের চেয়ে ১০ গুণ পাতলা।
তবে প্রকল্পের সবচেয়ে বড় হুমকি ছিল Baumgartner-এর মানসিক দৃঢ়তা। তার পোশাকটি এমনভাবে তৈরি করতে হয়েছিল যা চাপযুক্ত হবে এবং মাইনাস ৭২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা সহ্য করতে পারবে।
পোশাক সম্পর্কে Baumgartner বলেছিলেন, “এটা খুবই অস্বস্তিকর ছিল। শরীরে কোন নড়াচড়ার সুযোগ ছিল না। সবসময় মনে হতো যেন একটি বালিশের মধ্যে শ্বাস নিচ্ছি। বাইরের জগৎ থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছিলাম। হেলমেটের কাঁচ নামানোর পরে, কেবল নিজের শ্বাস-প্রশ্বাস ছাড়া আর কিছুই শোনা যেত না।”
জমিতে অবতরণের কিছুক্ষণ পরেই Baumgartner তার আবেগ নিয়ন্ত্রণ করতে পারছিলেন না। তিনি বলেন, “আমি কয়েকবার কেঁদেছিলাম, কারণ আপনি সেই মুহূর্তটি সম্পর্কে অনেকবার চিন্তা করেছেন, কেমন লাগবে বা দেখতে কেমন হবে। এবং এটি আমি যা ভেবেছিলাম তার চেয়ে অনেক বড় ছিল।”
তথ্য সূত্র: সিএনএন