যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি স্থিতিশীল কয়েন (stablecoin) সংক্রান্ত নতুন একটি আইনের অনুমোদন দিয়েছেন, যা ক্রিপ্টোকারেন্সি জগতের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। এই আইনের মূল উদ্দেশ্য হল ডিজিটাল মুদ্রাগুলোর ব্যবহারকে আরও সুসংহত করা এবং এর সঙ্গে জড়িত ঝুঁকিগুলো কমানো।
এই পদক্ষেপের ফলে বিশ্ব অর্থনীতিতে, বিশেষ করে বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোতে এর সম্ভাব্য প্রভাব নিয়ে আলোচনা করা হচ্ছে।
নতুন এই আইনের নাম দেওয়া হয়েছে ‘জিনিয়াস অ্যাক্ট’ (GENIUS Act)। এই আইনের মূল লক্ষ্য হল স্থিতিশীল কয়েনগুলোর জন্য একটি কাঠামো তৈরি করা এবং ব্যবহারকারীদের সুরক্ষা নিশ্চিত করা।
স্থিতিশীল কয়েনগুলি সাধারণত মার্কিন ডলারের মতো স্থিতিশীল সম্পদের সঙ্গে যুক্ত থাকে, যা তাদের মূল্যের স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে সাহায্য করে। অন্যান্য ক্রিপ্টোকারেন্সির তুলনায় এগুলোর দামের ওঠা-নামা অনেক কম থাকে।
যুক্তরাষ্ট্রের আইনসভা, অর্থাৎ কংগ্রেসের উভয় কক্ষেই এই আইনটি বিপুল সমর্থন লাভ করে। এর কারণ হিসেবে মনে করা হচ্ছে, ক্রিপ্টোকারেন্সি শিল্পের প্রভাবশালী লবিং এবং রাজনৈতিক সমর্থন।
এই শিল্পটি দীর্ঘদিন ধরে তাদের বৈধতা এবং রাজনৈতিক প্রভাব বাড়ানোর জন্য চেষ্টা চালিয়ে আসছিল। ট্রাম্পের এই আইন অনুমোদন সেই প্রচেষ্টারই ফল।
ট্রাম্পের এই পদক্ষেপ ক্রিপ্টোকারেন্সি শিল্পের প্রতি তার ইতিবাচক মনোভাবের প্রমাণ বহন করে। তিনি বিভিন্ন সময়ে ক্রিপ্টোকারেন্সি শিল্পের নেতাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন এবং এই শিল্পের প্রসারের জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছেন।
তিনি এটিকে “ডলারের জন্য এবং দেশের জন্য ভালো” হিসেবে উল্লেখ করেছেন। এমনকি, তিনি এও বলেছেন যে, এই শিল্পের প্রতি সমর্থন জানানোর একটি কারণ ছিল ভোট।
এই আইনের ফলে স্থিতিশীল কয়েনগুলোর ব্যবহার আরও বাড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে। বর্তমানে, সার্কেল (Circle) এর মতো বেশ কিছু কোম্পানি স্থিতিশীল কয়েন তৈরি করে এবং বাজারে সরবরাহ করে।
এই কোম্পানিগুলো তাদের রিজার্ভে রাখা সম্পদের সুদের মাধ্যমে লাভ করে।
এই আইনের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হল, কংগ্রেস সদস্য এবং তাদের পরিবারের সদস্যরা স্থিতিশীল কয়েন থেকে লাভবান হতে পারবেন না। তবে, এই নিষেধাজ্ঞা প্রেসিডেন্টের পরিবারের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে না।
এই আইনের পাশাপাশি, প্রতিনিধি পরিষদ আরও দুটি বিল পাস করেছে, যা ক্রিপ্টোকারেন্সি শিল্পকে আরও সহায়তা করবে। এর মধ্যে একটি বিলে ক্রিপ্টোকারেন্সির জন্য একটি নতুন বাজার কাঠামো তৈরি করা হবে, এবং অন্যটি ফেডারেল রিজার্ভকে নিজস্ব ডিজিটাল মুদ্রা চালু করা থেকে বিরত রাখবে।
এই দুটি বিল এখন সিনেটে বিবেচনাধীন।
এই আইনের প্রেক্ষাপটে, বাংলাদেশের জন্য এর কিছু গুরুত্বপূর্ণ দিক রয়েছে। অনেক বাংলাদেশী প্রবাসী নিয়মিতভাবে রেমিট্যান্স পাঠানোর জন্য ক্রিপ্টোকারেন্সি ব্যবহার করেন।
স্থিতিশীল কয়েনগুলোর নিয়ন্ত্রণ ও সুরক্ষার ফলে এই ধরনের লেনদেন আরও নিরাপদ হতে পারে। এছাড়াও, আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে জড়িত বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরাও এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে উপকৃত হতে পারেন।
ভবিষ্যতে, ডিজিটাল প্রযুক্তির প্রসারের সঙ্গে সঙ্গে বাংলাদেশে ব্লকচেইন প্রযুক্তির ব্যবহার আরও বাড়তে পারে, যা স্থিতিশীল কয়েনগুলোর জনপ্রিয়তা বাড়াতে সহায়ক হবে।
এই নতুন আইনের ফলে ক্রিপ্টোকারেন্সি শিল্পে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা বাড়বে, যা বিনিয়োগকারীদের আস্থা বাড়াতে সাহায্য করবে। একইসঙ্গে, এটি বিশ্ব অর্থনীতিতে ডিজিটাল মুদ্রার ভবিষ্যৎ নিয়ে নতুন সম্ভাবনা তৈরি করবে।
তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস