হাসি আর স্মৃতির মেলবন্ধন: স্মৃতিভ্রংশ রোগীদের জন্য কমেডি সেন্টারে বিশেষ আয়োজন।
জামestown, নিউ ইয়র্ক থেকে: স্মৃতিভ্রংশতা বা ডিমেনশিয়া রোগীদের জন্য হাসি-ঠাট্টার মাধ্যমে স্মৃতি ফিরিয়ে আনার এক অভিনব উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল কমেডি সেন্টারে (National Comedy Center) প্রতি মাসে একবার করে আয়োজন করা হচ্ছে ‘মেমোরি ক্যাফে’। যেখানে স্মৃতিভ্রংশতায় আক্রান্ত ব্যক্তি এবং তাদের দেখাশোনা করার দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিরা একসঙ্গে মিলিত হন।
কমেডি সেন্টারের বিভিন্ন প্রদর্শনী, যেমন পুরনো দিনের জনপ্রিয় টিভি শো-এর ক্লিপ অথবা বিখ্যাত কৌতুক অভিনেতাদের ব্যবহৃত জিনিসপত্র স্মৃতি রোগীদের মনে আনন্দের ঢেউ তোলে।
এর মাধ্যমে তাদের স্মৃতিগুলো যেন কিছুটা হলেও ফিরে আসে, যা তাদের এবং তাদের পরিবারের সদস্যদের জন্য অত্যন্ত মূল্যবান।
গেইল এবং মারিও সিরাসুন্দা নামের এক দম্পতি বাফেলো শহরতলিতে বসবাস করেন।
মারিও ৮৫ বছর বয়সী এবং তিনি ডিমেনশিয়ায় ভুগছেন।
ন্যাশনাল কমেডি সেন্টারে আয়োজিত মেমোরি ক্যাফেতে যোগ দিতে এসেছিলেন তারা।
“ফ্যামিলি টাইস” (Family Ties) নামক ১৯৮০ দশকের একটি জনপ্রিয় টিভি সিরিয়ালের একটি দৃশ্য দেখে দুজনেই হাসিতে ফেটে পড়েন।
গেইল জানান, এই ধরনের মুহূর্তগুলো তাদের কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
কারণ, মারিও হয়তো অনেক কিছুই মনে রাখতে পারেন না, কিন্তু একসঙ্গে হাসাহাসি করার মাধ্যমে তারা সেই মুহূর্তগুলো উপভোগ করতে পারেন।
ন্যাশনাল কমেডি সেন্টারটি মূলত ‘আই লাভ লুসি’ (I Love Lucy) খ্যাত অভিনেত্রী লুসিল বলের সম্মানে তার জন্মস্থান জেম্সটাউনে তৈরি করা হয়েছে।
এখানে আসা স্মৃতিভ্রংশতার শিকার ব্যক্তিরা জনি কারসন, জর্জ কার্লিন, বব হোপের মতো কিংবদন্তি কৌতুক অভিনেতাদের স্মৃতিচিহ্নগুলি দেখেন এবং হাসেন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, স্মৃতিভ্রংশতা বা ডিমেনশিয়া রোগীদের জন্য কমেডি বা কৌতুক খুবই উপকারী।
কারণ, হাসির মাধ্যমে মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা বাড়ে এবং সামগ্রিকভাবে শরীরের উপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলে।
যুক্তরাষ্ট্রে বর্তমানে প্রায় ৭২ লক্ষ মানুষের বয়স ৬৫ বছরের বেশি এবং তারা আলঝেইমার্স (Alzheimer’s) অথবা ডিমেনশিয়ায় আক্রান্ত।
এই রোগীদের দেখাশোনার জন্য পরিবারের অন্য সদস্যরা অনেক সময় এক কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে যান।
তাদের মানসিক স্বাস্থ্য এবং ভালো থাকার জন্য সারা বিশ্বজুড়ে ‘মেমোরি ক্যাফে’র ধারণা জনপ্রিয়তা লাভ করছে।
লাইব্রেরি বা কমিউনিটি সেন্টারে এইসব ক্যাফেতে আলোচনা সভা, গান ও বিভিন্ন শারীরিক কার্যকলাপের মাধ্যমে রোগীদের স্মৃতি সতেজ রাখার চেষ্টা করা হয়।
ন্যাশনাল কমেডি সেন্টারের মুখপাত্র গ্যারি হান মনে করেন, এই কেন্দ্রটি যেন এক প্রকার টাইম মেশিন, যা দর্শকদের পুরনো দিনের স্মৃতিতে ফিরিয়ে নিয়ে যায়।
এমনকি, যারা স্মৃতিভ্রংশতার কারণে কথা বলতেও ভুলে গেছেন, তারাও এখানে এসে হাসেন এবং অন্যদের সঙ্গে মিশে যান।
ওকলাহোমা স্টেট ইউনিভার্সিটির মনোবিজ্ঞানের অধ্যাপক শিলা কেনিসন বলেন, “হাসি মস্তিষ্কের কার্যকলাপ এবং শরীরের বিভিন্ন পরিবর্তন ঘটায়।
এর ফলে স্মৃতিশক্তি বাড়ে এবং সামগ্রিক সুস্থ জীবন যাপনে সহায়তা করে।”
গেইল এবং মারিও সিরাসুন্দার জীবনে হাসি সবসময় গুরুত্বপূর্ণ ছিল।
তাদের সন্তানরা প্রায়ই পিটার সেলার্সের ‘পিঙ্ক প্যান্থার’ সিনেমা বাবার জন্য নিয়ে আসতেন, যাতে তিনি হাসতে পারেন।
গেইল বলেন, বিয়ের আগে তার বস তাকে বলেছিলেন, “জীবনে হাসির গুরুত্ব বজায় রাখতে হবে।”
তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস