ঐক্যবদ্ধ শক্তি প্রদর্শনে ঢাকার রাজপথে জামায়াতে ইসলামী, নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক সমীকরণ
ঢাকা, [তারিখ দিন মাস, ২০২৪] – আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের প্রাক্কালে রাজধানী ঢাকায় বিশাল জনসমাবেশ করেছে জামায়াতে ইসলামী। শনিবারের এই সমাবেশটি ছিল দলটির শক্তি প্রদর্শনের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপলক্ষ, যা দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন মেরুকরণের ইঙ্গিত দিচ্ছে।
জামায়াতে ইসলামীর এই কর্মসূচি দেশের ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক গতিপথের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অনুষ্ঠিত এই সমাবেশে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা জামায়াতের কর্মী-সমর্থকদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। সমাবেশটি মূলত আগামী নির্বাচনে একটি সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করা, সকল হত্যাকাণ্ডের বিচার এবং জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার দাবি নিয়ে অনুষ্ঠিত হয়।
বক্তারা নির্বাচনকালীন সময়ে একটি নিরপেক্ষ সরকার এবং নির্বাচনে সব দলের সমান সুযোগের নিশ্চয়তা চেয়েছেন।
সমাবেশে জামায়াতে ইসলামীর শীর্ষ নেতারা তাদের বক্তব্যে সরকারের প্রতি সাত দফা দাবি পেশ করেন। এই দাবিগুলোর মধ্যে ছিল একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন নিশ্চিত করা, সকল হত্যাকাণ্ডের বিচার, গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার ও গত বছরের গণ-অভ্যুত্থানের ভিত্তিতে একটি সনদ প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন এবং নির্বাচনে আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বের ব্যবস্থা প্রবর্তন করা।
সমাবেশে আসা তরুণ প্রজন্মের কর্মীদের মধ্যে দেখা যায় পরিবর্তনের আকাঙ্ক্ষা। তারা জামায়াতে ইসলামীর নেতৃত্বে একটি নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেন, যেখানে ন্যায়বিচার ও সুশাসন প্রতিষ্ঠিত হবে। অনেক তরুণ কর্মী তাদের বক্তব্যে ইসলামী মূল্যবোধের ভিত্তিতে একটি উন্নত রাষ্ট্র গঠনের অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন।
সমাবেশে দলের আমির শফিকুর রহমান বলেন, ২০২৪ সালের এই লড়াই হলো ‘ফ্যাসিবাদ’ নির্মূলের লড়াই। তিনি দুর্নীতি ও চাঁদাবাজির বিরুদ্ধেও সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানান।
বক্তব্য দেওয়ার সময় অসুস্থ হয়ে পড়লেও দ্রুত সুস্থ হয়ে তিনি আবার বক্তব্য শুরু করেন। পরে স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য তাকে হাসপাতালে নেওয়া হয়।
জামায়াতে ইসলামীর এই সমাবেশটি এমন একটি স্থানে অনুষ্ঠিত হয়েছে, যেখানে ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী আত্মসমর্পণ করেছিল। দীর্ঘদিন পর এই স্থানে সমাবেশের অনুমতি দেওয়া নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে।
ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ এই সমাবেশের অনুমতি দেওয়ার তীব্র সমালোচনা করেছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, জামায়াতে ইসলামীর এই সমাবেশ দেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে একটি নতুন মেরুকরণ তৈরি করতে পারে। বিশেষ করে, প্রধান বিরোধী দল বিএনপির সঙ্গে জামায়াতের জোটবদ্ধভাবে নির্বাচন করার সম্ভাবনা এবং অন্যান্য ইসলামী দলগুলোর সঙ্গে তাদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার চেষ্টা রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন সমীকরণ সৃষ্টি করতে পারে।
এদিকে, জামায়াতে ইসলামী জানিয়েছে যে তারা ৩০০ আসনেই নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার প্রস্তুতি নিচ্ছে। তারা বিএনপি এবং অন্যান্য ইসলামী দলগুলোর সঙ্গে জোটবদ্ধ হয়ে দেশের রাজনীতিতে তৃতীয় শক্তি হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠা করতে চাইছে।
অতীতে জামায়াতে ইসলামী বিএনপি সরকারের সঙ্গে জোটবদ্ধ ছিল এবং ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত তারা সরকারে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, বর্তমান সরকারের অধীনে আসন্ন নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে অনুষ্ঠিত হওয়া একটি বড় চ্যালেঞ্জ। নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে পারস্পরিক আস্থা তৈরি করা এবং জনগণের ভোটাধিকার নিশ্চিত করা জরুরি।
তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস।