যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগ কুখ্যাত যৌন নিপীড়ক জেফরি এপস্টাইন এবং তার সহযোগী ঘিসলেইন ম্যাক্সওয়েলের মামলার গ্র্যান্ড জুরি বিবরণী উন্মোচন করতে চাইছে। তবে সাবেক সরকারি কৌঁসুলিরা বলছেন, এর মাধ্যমে নতুন কোনো চাঞ্চল্যকর তথ্য পাওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম।
তারা মনে করেন, গ্র্যান্ড জুরিতে সাধারণত মামলার সংক্ষিপ্ত বিবরণ দেওয়া হয়, যেখানে মূল উদ্দেশ্য থাকে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা।
এই পদক্ষেপটি এসেছে মূলত জনমনে এপস্টাইন মামলার বিষয়ে নতুন করে আগ্রহ তৈরি হওয়ার প্রেক্ষাপটে। একইসঙ্গে, বিচার বিভাগ অতিরিক্ত নথিপত্র প্রকাশ না করার সিদ্ধান্ত নেওয়ায় অনেকে অসন্তুষ্ট হয়েছেন।
এর ফলস্বরূপ, স্বচ্ছতা রক্ষার উদ্দেশ্যে এই বিবরণী উন্মোচনের আবেদন জানানো হয়েছে।
সাবেক ফেডারেল প্রসিকিউটর সারা ক্রিসফ বলেছেন, এই বিবরণী উন্মোচনের আবেদন আসলে ‘দৃষ্টি আকর্ষণের কৌশল’ ছাড়া কিছু নয়। তিনি আরও যোগ করেন, ‘সরকার এখানে কিছু একটা করার ভান করছে, কিন্তু বাস্তবে তেমন কিছুই নেই।’
ম্যানহাটনের সাবেক ফেডারেল প্রসিকিউটর জশুয়া নাফটালিসের মতে, গ্র্যান্ড জুরিতে উপস্থাপনাগুলি সংক্ষিপ্ত হয়। এই কারণে, ম্যাক্সওয়েল এবং এপস্টাইন সম্পর্কে এফবিআই এবং তদন্তকারীরা যা জানতে পেরেছেন, তার সব তথ্য এতে পাওয়ার সম্ভাবনা নেই।
তিনি আরও উল্লেখ করেন, সাধারণত গ্র্যান্ড জুরির কাছে একটি মামলার সারসংক্ষেপ তুলে ধরা হয়, যাতে তারা অভিযুক্তের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের সিদ্ধান্ত নিতে পারে।
ক্রিসফ এবং নাফটালিস দুজনেই মনে করেন, এই বিবরণী খুব বেশি দীর্ঘ হবে না। তাদের ধারণা, এতে হয়তো কয়েকশ’ পৃষ্ঠার বেশি কিছু থাকবে না।
ক্রিসফের মতে, নিউইয়র্কের সাউদার্ন ডিস্ট্রিক্টের (Southern District of New York) প্রথা হলো গ্র্যান্ড জুরিতে খুব কম তথ্য উপস্থাপন করা।
তিনি বলেন, ‘তারা কার্যত গ্র্যান্ড জুরির কাছে অভিযোগগুলো পরিবেশন করে। আমরা সম্ভবত তেমনটাই দেখতে পাব। আমার মনে হয় এতে নতুন কিছু পাওয়া যাবে না।’
সাধারণত, ম্যানহাটনের গ্র্যান্ড জুরিতে সাক্ষীরা তাদের সাক্ষাত্কারের সারসংক্ষেপ উপস্থাপন করেন। তবে, এই প্রক্রিয়াটি কিছু রাজ্য ও ফেডারেল গ্র্যান্ড জুরির কার্যক্রমের ধারণার সঙ্গে সাংঘর্ষিক হতে পারে।
কারণ, সেখানে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের আগে দীর্ঘ শুনানির মাধ্যমে সাক্ষীদের জবানবন্দি নেওয়া হয়।
ক্রিসফ আরও বলেন, ম্যানহানে ফেডারেল প্রসিকিউটররা একটি নির্দিষ্ট ফলাফলের জন্য চেষ্টা করেন, তাই তারা খুব সীমিত আকারে একটি মামলা উপস্থাপন করেন এবং গ্র্যান্ড জুরিকে তাদের সিদ্ধান্ত জানাতে বলেন।
এপস্টাইন এবং ম্যাক্সওয়েলের মামলার বিচারকরা সম্ভবত সরকারের এই আবেদন প্রত্যাখ্যান করবেন বলে ক্রিসফ ধারণা করছেন। ম্যাক্সওয়েলের মামলা বর্তমানে সুপ্রিম কোর্টে বিচারাধীন, তাই আপিল প্রক্রিয়া এখনো শেষ হয়নি।
এপস্টাইনের ক্ষেত্রে, অভিযোগগুলো ম্যাক্সওয়েলের মামলার সঙ্গে সম্পর্কিত এবং এতে অনেক ভুক্তভোগীর পরিচয় গোপন রাখার বিষয় জড়িত।
১৯৯৭ সালের একটি রায়ে ২য় ইউএস সার্কিট কোর্ট অফ আপিলস (2nd U.S. Circuit Court of Appeals) জানায়, বিচারকদের বিস্তৃত স্বাধীনতা রয়েছে এবং জনস্বার্থ বিবেচনা করে গ্র্যান্ড জুরির তথ্য প্রকাশ করা যেতে পারে।
সাবেক প্রসিকিউটর মিচেল এপনারের মতে, এপস্টাইন মামলার বিষয়ে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্টের মন্তব্য ছিল ‘ নজিরবিহীন’ এবং ‘অস্বাভাবিক’। তিনি আরও বলেন, সাবেক প্রসিকিউটরদের মধ্যে এই আবেদন নিয়ে উদ্বেগ সৃষ্টি হওয়াটা অস্বাভাবিক কিছু নয়।
কারণ, ম্যানহাটানের সহকারী মার্কিন অ্যাটর্নি মউরিন কমে, যিনি এপস্টাইন ও ম্যাক্সওয়েলের মামলায় কাজ করেছেন, তাকে সম্প্রতি বরখাস্ত করা হয়েছে।
বর্তমানে সরকারি কর্মকর্তাদের মধ্যে এক ধরনের অস্থিরতা বিরাজ করছে। সারা ক্রিসফ বলেন, তার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতায় তিনি বিভিন্ন সংস্থার কর্মকর্তাদের কাছ থেকে শুনেছেন যে এখনকার পরিস্থিতি স্বাভাবিক নয়।
তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস