জোসেফিন বেকার: প্যারিসের দেয়ালে ফিরলেন বর্ণাঢ্য জীবনের এক নারী!

প্যারিসে বর্ণবৈষম্যের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়া কিংবদন্তি জোসেফিন বেকারকে উৎসর্গ করে একটি নতুন ম্যুরাল উন্মোচন করা হয়েছে। ফরাসি শিল্পী এফকেডিএল-এর তুলিতে প্যারিসের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে নির্মিত হয়েছে এই বিশাল চিত্রকর্মটি। এই ম্যুরালটি শুধু একটি শিল্পকর্ম নয়, বরং এটি জোসেফিন বেকারের প্রতি শ্রদ্ধা এবং তাঁর সংগ্রামী জীবনের প্রতি সম্মান জানানো।

জোসেফিন বেকার ছিলেন একাধারে ফরাসি-মার্কিন বিনোদন শিল্পী, মানবাধিকার কর্মী এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ফরাসি প্রতিরোধ আন্দোলনের একজন গুপ্তচর। ১৯২৫ সালে তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বর্ণবৈষম্য থেকে বাঁচতে ফ্রান্সে পাড়ি জমান। ১৯৩০-এর দশকে তিনি ফ্রান্সে ব্যাপক খ্যাতি অর্জন করেন।

শুধু মঞ্চে তাঁর খ্যাতি ছিল তা নয়, বরং নাৎসিদের বিরুদ্ধে গুপ্তচরবৃত্তি করে এবং মার্টিন লুথার কিং জুনিয়রের সঙ্গে নাগরিক অধিকার আন্দোলনেও তিনি সক্রিয়ভাবে অংশ নিয়েছিলেন।

জোসেফিন বেকারের মৃত্যুর ৫০ বছর পর, তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে প্যারিসের এই উদ্যোগ নিঃসন্দেহে প্রশংসার যোগ্য। তাঁর ছেলে ব্রায়ান বেকার জানান, মায়ের স্মৃতিকে ধরে রাখতে পেরে তিনি আনন্দিত। জোসেফিন বেকারের ১২ জন দত্তক সন্তান ছিল, যাদের তিনি “রেনবো ট্রাইব” বা রামধনু গোষ্ঠী বলে ডাকতেন।

তাঁর এই পরিবারকে তিনি “ছোট্ট জাতিসংঘ” হিসেবে অভিহিত করতেন।

এই ম্যুরালটি মূলত স্বাধীনতা ও প্রতিরোধের প্রতীক হিসেবে তৈরি করা হয়েছে। প্যারিস কালারস ওরক নামক একটি সংস্থার উদ্যোগে সম্প্রতি এই এলাকার বেশ কয়েকটি ম্যুরাল তৈরি করা হয়েছে।

শিল্পী এফকেডিএল জানিয়েছেন, তিনি নারী চরিত্রগুলোকে শহরের দৃশ্যপটে ফিরিয়ে আনতে চান। জোসেফিন বেকার ছিলেন তাঁর চোখে সেই সময়ের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত, যিনি একইসঙ্গে ছিলেন উচ্ছৃঙ্খল ও মুক্তমনা।

সঙ্গীতের প্রতি তাঁর গভীর ভালোবাসা ছিল, যা তাঁর নৃত্য এবং অভিনয়কে আরও আকর্ষণীয় করে তুলেছিল।

জোসেফিন বেকার ছিলেন প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ নারী, যিনি ফ্রান্সের প্যানথিয়নে সম্মানিত হয়েছেন। ভলতেয়ার, মেরি কুরি এবং ভিক্টর হুগোর মতো বিখ্যাত ব্যক্তিদের সঙ্গেই এখন তাঁর স্থান।

ব্রায়ান বেকার আরও জানান, তাঁর মা “আইকনিক”, “তারকা” বা “সেলিব্রিটি” – এই ধরনের শব্দ পছন্দ করতেন না। তিনি সবসময় সাদাসিধে জীবন যাপন করতে ভালোবাসতেন।

তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *