শিরোনাম: সৌর ও বায়ু বিদ্যুতের জোয়ার: জীবাশ্ম জ্বালানির দিন কি ফুরিয়ে আসছে?
নয়াদিল্লি: জাতিসংঘের নতুন দুটি প্রতিবেদনে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে আশার আলো দেখা যাচ্ছে। এতে বলা হয়েছে, সৌর ও বায়ু বিদ্যুতের মতো নবায়নযোগ্য শক্তির ব্যবহার দ্রুত বাড়ছে, যা এক নতুন দিগন্তের সূচনা করছে।
এই শক্তি এখন এতটাই সস্তা যে এটি জীবাশ্ম জ্বালানির চেয়েও বেশি লাভজনক হয়ে উঠছে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত বছর বিশ্বে উৎপাদিত বিদ্যুতের ৭৪ শতাংশ এসেছে বায়ু, সৌর এবং অন্যান্য সবুজ উৎস থেকে। এছাড়া, ওই সময়ে নতুন করে বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতার ৯২.৫ শতাংশ এসেছে নবায়নযোগ্য উৎস থেকে।
শুধু তাই নয়, বৈদ্যুতিক গাড়ির বিক্রিও উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। ২০১৫ সালে যেখানে এই সংখ্যা ছিল মাত্র ৫ লক্ষ, সেখানে ২০২৪ সালে তা বেড়ে ১ কোটি ৭০ লক্ষে পৌঁছেছে।
আন্তর্জাতিক নবায়নযোগ্য শক্তি সংস্থা (IRENA)-এর তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বে গত বছর সবচেয়ে সস্তা তিনটি বিদ্যুতের উৎস ছিল—অনশোর উইন্ড, সৌর প্যানেল ও নতুন জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র। বর্তমানে সৌর বিদ্যুৎ সবচেয়ে সস্তা জীবাশ্ম জ্বালানির থেকে ৪১ শতাংশ এবং বায়ু বিদ্যুৎ ৫৩ শতাংশ পর্যন্ত সস্তা।
জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস এই বিষয়ে বলেছেন, “জীবাশ্ম জ্বালানির যুগ অস্তমিত হচ্ছে। আমরা নতুন এক শক্তির যুগে প্রবেশ করছি, যেখানে সস্তা, পরিচ্ছন্ন এবং প্রচুর পরিমাণে শক্তি পাওয়া যাবে।”
তিনি আরও বলেন, “অর্থের দিকে তাকালেই বিষয়টি পরিষ্কার হয়ে যায়।” কারণ, গত বছর সবুজ শক্তিতে ২ ট্রিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করা হয়েছে, যেখানে জীবাশ্ম জ্বালানিতে বিনিয়োগ ছিল ১.২ ট্রিলিয়ন ডলার।
তবে জাতিসংঘের কর্মকর্তারা বলছেন, নবায়নযোগ্য শক্তির দিকে পরিবর্তনটি এখনও যথেষ্ট দ্রুত হচ্ছে না। বিশেষ করে আফ্রিকা মহাদেশে সবুজ শক্তির ব্যবহার খুবই কম, যা নতুন করে বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতার ২ শতাংশেরও কম।
এর কারণ হিসেবে উন্নয়নশীল দেশগুলোতে পুঁজির উচ্চ খরচকে দায়ী করা হচ্ছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জীবাশ্ম জ্বালানির ওপর ভর্তুকি বহাল থাকা সত্ত্বেও নবায়নযোগ্য শক্তির এই বৃদ্ধি সত্যিই উল্লেখযোগ্য। উদাহরণস্বরূপ, যেখানে জীবাশ্ম জ্বালানিতে ৬২০ বিলিয়ন ডলার ভর্তুকি দেওয়া হয়েছে, সেখানে নবায়নযোগ্য শক্তিতে দেওয়া হয়েছে মাত্র ৭০ বিলিয়ন ডলার।
জাতিসংঘের মহাসচিব সতর্ক করে বলেছেন, যারা এখনও জীবাশ্ম জ্বালানির ওপর নির্ভরশীল, তারা একটি ঝুঁকিপূর্ণ পথে হাঁটছেন। এর ফলে তাদের অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হবে এবং তারা প্রতিযোগিতায় টিকতে পারবে না।
বিশেষজ্ঞদের মতে, নবায়নযোগ্য শক্তি শুধু পরিবেশের জন্য ভালো নয়, বরং এটি জ্বালানি নিরাপত্তার ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, এখানে সূর্যের আলো বা বাতাসের জন্য কোনো বাড়তি দাম দিতে হয় না এবং কোনো অবরোধের আশঙ্কাও থাকে না।
এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের জন্য নবায়নযোগ্য শক্তি ব্যবহারের সম্ভাবনা অনেক। বিশেষ করে সৌর বিদ্যুতের মাধ্যমে গ্রামীণ বিদ্যুতায়ন এবং উপকূলীয় অঞ্চলে বায়ু বিদ্যুতের ব্যবহার করে জ্বালানি চাহিদা মেটানো যেতে পারে।
এটি জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবিলায়ও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
তথ্য সূত্র: