থাইল্যান্ড এবং কম্বোডিয়ার মধ্যে সীমান্ত উত্তেজনা চরম আকার ধারণ করেছে। বুধবার থাইল্যান্ড সরকার প্রতিবেশী দেশটির সঙ্গে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সীমান্ত ক্রসিংগুলো বন্ধ করে দিয়েছে এবং কম্বোডিয়া থেকে তাদের রাষ্ট্রদূতকে ডেকে পাঠিয়েছে।
একইসঙ্গে কম্বোডিয়ার রাষ্ট্রদূতকে বহিষ্কারও করা হয়েছে। এর কারণ হিসেবে জানা যায়, একটি ল্যান্ডমাইন বিস্ফোরণে থাই সেনাসদস্য আহত হয়েছেন।
থাই সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, বুধবার এক সেনা সদস্য ল্যান্ডমাইনে পা রাখলে আরও চারজন সেনা আহত হন। থাইল্যান্ডের অভিযোগ, এই ঘটনাটি কম্বোডিয়া ঘটিয়েছে এবং ঘটনাটি থাইল্যান্ডের উবন রাতচাথানি প্রদেশে ঘটেছে।
অন্যদিকে, কম্বোডিয়া এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে। তাদের দাবি, বিস্ফোরণটি তাদের প্রিয়েহ বিহার প্রদেশে ঘটেছে।
উভয় দেশই এই এলাকার মালিকানা দাবি করে এবং এটিকে তারা ‘নো- ম্যানস ল্যান্ড’ হিসেবে বিবেচনা করে।
এই ঘটনার পর থাই সরকার দ্রুত পদক্ষেপ নিয়েছে। ভারপ্রাপ্ত প্রধানমন্ত্রী ফুমথাম ওয়েচায়াচাই জানিয়েছেন, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কম্বোডিয়াকে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতিবাদ জানাবে এবং আরও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
গত সপ্তাহেও একই ধরনের একটি ঘটনা ঘটেছিল, যেখানে থাই সেনাবাহিনীর আরও তিনজন সদস্য আহত হয়েছিলেন। তাদের একজন ল্যান্ডমাইনে পা দিয়ে আহত হন এবং একটি পা হারান।
থাই কর্তৃপক্ষের দাবি, বিতর্কিত সীমান্ত অঞ্চলে উভয়পক্ষের সম্মতিতে নিরাপদ পথ তৈরি করা হয়েছিল, যেখানে নতুন করে মাইনগুলো পুঁতে রাখা হয়েছে।
তাদের আরও অভিযোগ, এই মাইনগুলো রাশিয়ান প্রযুক্তিতে তৈরি এবং থাই সামরিক বাহিনীর ব্যবহৃত মাইনগুলোর থেকে আলাদা।
থাই সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে কম্বোডিয়াকে এই ঘটনার দায় স্বীকার করতে বলা হয়েছে।
একইসঙ্গে, সীমান্ত অঞ্চলে শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে পদক্ষেপ নেওয়ারও আহ্বান জানানো হয়েছে। থাইল্যান্ডের পক্ষ থেকে আরও বলা হয়েছে, কম্বোডিয়া সম্ভবত অটোয়া চুক্তি লঙ্ঘন করেছে, যা ভূমি মাইন তৈরি ও ব্যবহারের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে।
তবে কম্বোডিয়া থাইল্যান্ডের অভিযোগকে ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দিয়েছে। দেশটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তাদের ভূখণ্ডে বিস্ফোরণ ঘটেনি।
তারা আরও অভিযোগ করেছে, থাইল্যান্ড ২০০০ সালের একটি চুক্তি লঙ্ঘন করেছে, যেখানে টহলদারির জন্য নির্দিষ্ট পথ ব্যবহারের কথা বলা হয়েছে।
উল্লেখ্য, উভয় দেশের মধ্যে উত্তেজনা বৃদ্ধির কারণে অনেক সীমান্ত চেকপোস্ট ইতোমধ্যেই বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে অথবা সীমিত আকারে কার্যক্রম চলছে।
গত ২৮শে মে বিতর্কিত একটি এলাকায় উভয়পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়, যেখানে এক কম্বোডিয়ান সেনা নিহত হন।
উভয় দেশের মধ্যে বিদ্যমান ঐতিহাসিক শত্রুতা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে। থাইল্যান্ডে এর বড় রাজনৈতিক প্রভাব পড়েছে।
প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী প্যায়েতোংতার্ন শিনাওয়াত্রা কম্বোডিয়ার প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী হুন সেনকে ফোন করে দেশটির সামরিক বাহিনী সম্পর্কে বিতর্কিত মন্তব্য করার অভিযোগে সাময়িকভাবে বরখাস্ত হয়েছেন।
কম্বোডিয়া সীমান্তে নতুন করে মাইন পুঁতে রাখার অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
তারা উল্লেখ করেছে, তাদের দেশে এখনও অনেক অবিস্ফোরিত মাইন ও যুদ্ধাস্ত্র রয়েছে, যা ১৯৭০ সাল থেকে ১৯৯৮ সাল পর্যন্ত চলা গৃহযুদ্ধের ফলস্বরূপ।
যুদ্ধ শেষ হওয়ার পর থেকে প্রায় ২০,০০০ কম্বোডিয়ান ল্যান্ডমাইনের কারণে নিহত হয়েছেন এবং ৪৫,০০০ জন আহত হয়েছেন।
আহতদের সংখ্যা ধীরে ধীরে কমলেও গত বছর এই সংখ্যা ছিল ৪৯।
তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস
 
                         
                         
                         
                         
                         
                         
				
			 
				
			 
				
			 
				
			