ট্রাম্পের বিতর্কিত নীতি: গণ-বহিষ্কার শ্রমিকদের বেতন কমাবে?

যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যদি অভিবাসন নীতিতে কড়াকড়ি আরোপ করেন, তাহলে তা আমেরিকার অর্থনীতিতে বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে। সম্প্রতি প্রকাশিত একটি গবেষণায় এমনটাই ধারণা করা হচ্ছে।

পেন-হোয়াটন বাজেট মডেলের এই বিশ্লেষণ অনুযায়ী, ট্রাম্পের গণহারে বিতাড়নের পরিকল্পনা দেশের অর্থনীতিকে দুর্বল করে দেবে এবং অনেক শ্রমিকের বেতন কমিয়ে দেবে।

গবেষণায় দেখা গেছে, যদি ট্রাম্প ক্ষমতায় এসে প্রতি বছর ১০ শতাংশ অবৈধ অভিবাসীকে বিতাড়িত করেন, তাহলে ফেডারেল সরকারের ঘাটতি বাড়বে এবং দেশের মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদন বা জিডিপি (GDP) ১ শতাংশ পর্যন্ত হ্রাস পেতে পারে। এর ফলে, শ্রমিকদের গড় মজুরিও কমতে পারে।

গবেষণা বলছে, এই নীতি যদি চার বছর ধরে চলে, তাহলে ফেডারেল সরকারের খরচ বাড়বে প্রায় ৩৫০ বিলিয়ন ডলার। অন্যদিকে, ১০ বছর পর্যন্ত এই নীতি কার্যকর থাকলে, জিডিপি কমে যাবে ৩.৩ শতাংশ, এবং শ্রমিকদের বেতন ১.৭ শতাংশ পর্যন্ত হ্রাস পাবে।

তবে বিতাড়ন নীতির ফলে সব শ্রমিকের ক্ষতি হবে না। গবেষণায় দেখা গেছে, বৈধভাবে কাজ করা কম দক্ষ শ্রমিকেরা, যাদের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকও রয়েছেন, তারা লাভবান হতে পারেন।

কারণ, বিতাড়নের ফলে অদক্ষ শ্রমিকদের মধ্যে প্রতিযোগিতার পরিমাণ কমবে, যা তাদের মজুরি বাড়াতে সাহায্য করবে।

অন্যদিকে, উচ্চ-দক্ষ শ্রমিকদের জন্য পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে। কারণ, কম দক্ষ শ্রমিকেরা উচ্চ-দক্ষ শ্রমিকদের কাজের পরিপূরক হিসেবে কাজ করেন।

এই বিতাড়ন নীতি উচ্চ-দক্ষ কর্মীদের মজুরিও কমিয়ে দিতে পারে।

গবেষণা বলছে, যদি এই নীতি ১০ বছর ধরে চলে, তাহলে উচ্চ-দক্ষ শ্রমিকদের বছরে প্রায় ২,৭৬৪ ডলার পর্যন্ত বেতন কমতে পারে।

এই গবেষণার ফল নিয়ে বিতর্কও সৃষ্টি হয়েছে। হোয়াইট হাউস এই গবেষণার ফলাফলের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেছে।

তাদের মতে, অবৈধ অভিবাসনের কারণে সাধারণ আমেরিকানদের ওপর যে খরচ হয়, তা এই বিশ্লেষণে বিবেচনা করা হয়নি। তারা আরও উল্লেখ করেছে যে, যুক্তরাষ্ট্রে এখনো অনেক তরুণ-তরুণী কাজ খুঁজছেন, তাই শ্রমিকের কোনো অভাব নেই।

তবে অর্থনীতিবিদরা মনে করেন, যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতির জন্য অভিবাসন জরুরি। তাদের মতে, জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণে শ্রমিকের অভাব দেখা দিতে পারে, যা অর্থনীতিকে আরও কঠিন পরিস্থিতিতে ফেলবে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, একটি যুক্তিসঙ্গত অভিবাসন নীতি আমেরিকার অর্থনীতির জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

তারা মনে করেন, উৎপাদন, নির্মাণ, কৃষি এবং গৃহস্থালির কাজ সহ বিভিন্ন খাতে শ্রমের চাহিদা মেটাতে অভিবাসন জরুরি।

এই গবেষণা থেকে বোঝা যায়, বর্তমান অভিবাসন নীতি অর্থনীতির জন্য টেকসই নয় এবং এটি অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতেও সহায়ক নয়।

তথ্য সূত্র: CNN

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *