বর্তমান যুগে, আমাদের জীবন যেন বহু কাজের ভিড়ে বাঁধা। একদিকে অফিসের কাজ, অন্যদিকে পরিবারের চাপ, আর তার সাথে সামাজিক মাধ্যমের আনাগোনা – সব মিলিয়ে যেন দম ফেলারও ফুরসত নেই।
আমরা অনেকেই একসাথে একাধিক কাজ করার চেষ্টা করি, যেমন – একই সাথে ফোনে কথা বলা, ল্যাপটপে কাজ করা, আর টিভির পর্দায় চোখ রাখা। কিন্তু এতে কি কাজের কাজ হয়? নাকি, হিতে বিপরীত হয়?
মনোবিজ্ঞানীরা বলছেন, মাল্টিটাস্কিং-এর (বহু কাজ একসাথে করার) বদলে ‘মনোটাস্কিং’ (একটি কাজ মনোযোগ সহকারে করার) দিকে মনোযোগ দেওয়া উচিত।
মনোটাস্কিং আসলে কী? সোজা কথায়, একটি সময়ে একটি কাজ করা।
শুনতে খুব সহজ মনে হলেও, এটি আমাদের মনোযোগকে পুনরায় ফিরে পাওয়ার একটা গুরুত্বপূর্ণ কৌশল। যখন আমরা মনোটাস্কিং করি, তখন আমাদের মন বিক্ষিপ্ত হয় না, বরং একটি নির্দিষ্ট কাজের প্রতি নিবদ্ধ থাকে।
এর ফলে, কাজটি ভালোভাবে হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে, এবং মানসিক চাপও কমে।
মাল্টিটাস্কিং-এর ধারণাটা এসেছে কম্পিউটার জগৎ থেকে। কম্পিউটার যেমন একই সময়ে অনেকগুলো কাজ করতে পারে, মানুষও কি সেভাবে চেষ্টা করতে পারে?
সম্ভবত পারে, কিন্তু তার ফল ভালো নাও হতে পারে। অতিরিক্ত মাল্টিটাস্কিং-এর কারণে আমাদের মস্তিষ্কে ‘ইনফরমেশন ওভারলোড’ হতে পারে, যা স্মৃতিশক্তি দুর্বল করে দিতে পারে, এবং মানসিক অবসাদ সৃষ্টি করতে পারে।
তাহলে, মনোটাস্কিং-এর সুবিধাগুলো কী কী? প্রথমত, এটি আমাদের মনোযোগ বাড়ায়।
যখন আমরা একটি কাজে সম্পূর্ণ মনোযোগ দিই, তখন সেই কাজটি দ্রুত এবং নির্ভুলভাবে সম্পন্ন হয়। দ্বিতীয়ত, এটি মানসিক চাপ কমায়।
একাধিক কাজ একসাথে করার চেষ্টা করলে, আমাদের মধ্যে অস্থিরতা তৈরি হয়, যা মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। তৃতীয়ত, মনোটাস্কিং আমাদের কাজের গুণগত মান উন্নত করে।
যখন আমরা একটি কাজে মনোনিবেশ করি, তখন আমরা আমাদের সেরাটা দিতে পারি।
এবার আসা যাক, কীভাবে মনোটাস্কিং অভ্যাস করা যায়।
ছোটবেলা থেকে আমরা অনেকেই একসঙ্গে অনেক কাজ করার চেষ্টা করি।
এই অভ্যাস বদলানো সময়সাপেক্ষ।
এখানে কিছু সহজ কৌশল দেওয়া হলো:
- একটি কাজ বেছে নিন: প্রথমে, দিনের একটি নির্দিষ্ট সময়ে, একটিমাত্র কাজ করার চেষ্টা করুন। যেমন – সকালে উঠে কিছুক্ষণ বই পড়া বা অফিসের গুরুত্বপূর্ণ একটি কাজ মনোযোগ সহকারে করা।
- বিঘ্ন ঘটানো বন্ধ করুন: ফোন, ল্যাপটপ বা অন্যান্য গ্যাজেট থেকে আসাNotification বন্ধ করুন। সম্ভব হলে, কাজের সময় সামাজিক মাধ্যম থেকে দূরে থাকুন।
- সময় ভাগ করে নিন: ‘পোমোডোরো টেকনিক’ ব্যবহার করতে পারেন। ২৫ মিনিটের জন্য একটি কাজ করুন, এবং ৫ মিনিটের বিরতি নিন। এতে মনোযোগ ধরে রাখা সহজ হবে।
- ছোট কাজ দিয়ে শুরু করুন: কঠিন কাজের পরিবর্তে, ঘরোয়া কিছু সহজ কাজ দিয়ে শুরু করুন। যেমন – রান্না করা, কাপড় ভাঁজ করা অথবা বাগান করা।
- ধৈর্য ধরুন: মনোটাস্কিং একটি নতুন অভ্যাস। প্রথম দিকে এতে অভ্যস্ত হতে সমস্যা হতে পারে। ধৈর্য ধরে চেষ্টা চালিয়ে যান।
আমাদের সমাজে, কাজের চাপ এবং উদ্বেগের মাত্রা দিন দিন বাড়ছে।
তাই, মনোটাস্কিং-এর অভ্যাস গড়ে তোলা আমাদের জন্য খুবই জরুরি।
এটি আমাদের উৎপাদনশীলতা বাড়াতে, মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখতে এবং জীবনের গুণগত মান উন্নত করতে সাহায্য করে।
তথ্য সূত্র: হেলথলাইন