আমাদের চারপাশে, বিশেষ করে ঘরের আনাচে কানাচে লুকিয়ে থাকে অসংখ্য জীবাণু, যা আমাদের স্বাস্থ্যকে ঝুঁকির মুখে ফেলতে পারে। স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনের জন্য তাই ঘরদোর পরিষ্কার পরিছন্ন রাখা অপরিহার্য।
একটি গবেষণায় দেখা গেছে, এমন কিছু স্থান আছে যেখানে জীবাণুদের আনাগোনা বেশি। আসুন, সেই স্থানগুলো সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিই এবং কীভাবে তাদের থেকে মুক্তি পাওয়া যায় সে সম্পর্কে ধারণা লাভ করি।
রান্নাঘর: রান্নাঘর আমাদের খাদ্য প্রস্তুত ও সংরক্ষণের স্থান। তাই স্বাভাবিকভাবেই এখানে জীবাণুর উপস্থিতি বেশি থাকে।
ন্যাশনাল স্যানিটেশন ফাউন্ডেশন (এনএসএফ)-এর মতে, রান্নাঘরের সিঙ্ক, বাসন মাজার স্পঞ্জ এবং কাপড়, এইসব স্থানে অন্যান্য জায়গার তুলনায় অনেক বেশি ব্যাকটেরিয়া ও রোগজীবাণু থাকে।
খাবার তৈরির আগে ও পরে ভালোভাবে হাত ধোয়া এবং রান্নাঘরের জিনিসপত্র নিয়মিত পরিষ্কার করা উচিত।
দরজা ও বিদ্যুতের সুইচ: ঘরের দরজার হাতল, বিদ্যুতের সুইচ, এমনকি টেবিলের উপরেও জীবাণু থাকতে পারে। অনেক সময় আমরা এগুলো পরিষ্কার করার কথা সেভাবে ভাবি না।
কিন্তু এগুলো পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখা খুবই জরুরি। সপ্তাহে অন্তত একবার জীবাণুনাশক ওয়াইপ দিয়ে এইসব স্থান পরিষ্কার করা উচিত।
মেকআপ সামগ্রী: মেকআপের সরঞ্জাম, যেমন – ব্রাশ, স্পঞ্জ, ইত্যাদিতেও জীবাণু বাসা বাঁধে। বিশেষ করে যারা বাইরে যান এবং মেকআপ ব্যবহার করেন, তাদের ক্ষেত্রে এটি বেশি ঝুঁকিপূর্ণ।
মেকআপ ব্রাশ নিয়মিত পরিষ্কার করা উচিত। প্রতি ৬ মাস পর পর পুরোনো মেকআপ বদলে ফেলা এবং চোখের মেকআপে সংক্রমণ হলে তা ফেলে দেওয়া উচিত।
বাথরুম: বাথরুম পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। গরম বাষ্পের কারণে এখানে দ্রুত জীবাণু জন্মায়।
বাথরুমের বেসিন, কমোড, এবং দরজার হাতল নিয়মিত পরিষ্কার করতে হবে। প্রতিদিন জীবাণুনাশক দিয়ে বাথরুমের এইসব স্থান পরিষ্কার করা উচিত।
পুরোনো টুথব্রাশ ব্যবহার করে কোণাগুলি পরিষ্কার করা যেতে পারে।
কাপড় ধোয়ার স্থান: কাপড় কাচার স্থানও জীবাণুর আঁতুড়ঘর হতে পারে। ভেজা কাপড় বেশিক্ষণ রাখলে সেখানে জীবাণু জন্মাতে পারে।
কাপড় ধোয়ার পরে দ্রুত শুকিয়ে নেওয়া উচিত। ওয়াশিং মেশিনের ড্রামও পরিষ্কার রাখা দরকার। কাপড় কাচার সময় গরম জল ব্যবহার করলে জীবাণু ধ্বংস হয়।
ঘর ও বসার ঘর: টিভি রিমোট, কম্পিউটার কিবোর্ড, ফোন এবং অন্যান্য ইলেকট্রনিক গ্যাজেটগুলিতেও জীবাণু থাকতে পারে। এইসব জিনিস নিয়মিত পরিষ্কার করা উচিত।
বিশেষ করে, যাদের বাড়িতে শিশু বা বয়স্ক ব্যক্তি আছেন, তাদের ক্ষেত্রে এই বিষয়ে আরও বেশি সচেতন হতে হবে।
পোষা প্রাণী: পোষা প্রাণীদের কারণেও ঘরে জীবাণু আসতে পারে। তাদের খাবার পাত্র, খেলনা এবং বিছানায় জীবাণু থাকতে পারে।
পোষা প্রাণীদের নিয়মিত পরিষ্কার রাখা এবং তাদের হাঁটাচলার স্থানগুলো জীবাণুমুক্ত রাখা প্রয়োজন।
ব্যক্তিগত জিনিসপত্র: জুতা, ব্যাগ, হেডফোন, ইত্যাদি জিনিসপত্রের মাধ্যমেও জীবাণু ঘরে প্রবেশ করতে পারে। বাইরে থেকে ফিরে এইসব জিনিসপত্র পরিষ্কার করা উচিত।
পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকার কিছু সাধারণ নিয়ম:
- নিয়মিত হাত ধোয়া।
- খাবার তৈরির আগে ও পরে হাত ধোয়া।
- ঘর পরিষ্কার পরিছন্ন রাখা।
- জীবাণুনাশক ব্যবহার করা।
স্বাস্থ্যকর জীবন যাপনের জন্য পরিচ্ছন্নতা অপরিহার্য। আমাদের সকলেরই উচিত, আমাদের ঘর এবং চারপাশ পরিষ্কার পরিছন্ন রাখা, যাতে আমরা সুস্থ থাকতে পারি।
তথ্য সূত্র: হেলথলাইন।